কলকাতা: শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে প্রবল চাপে বিজেপি। দিল্লির বৈঠকে যাবতীয় সমস্যা মিটে গিয়েছে বলে মুকুল রায় দাবি করলেও ফের উলটো সুর তাঁদের গলায়। পাশাপাশি দেবশ্রী রায়কে নিয়ে দিলীপদের শর্ত দিয়ে এসেছেন শোভন।
দিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শোভন ও বৈশাখী দাবি করেন, বিজেপির সঙ্গে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল তা মিটে যায়নি। তাঁরা শুধুমাত্র ‘মুকুলদার’ সঙ্গে কথা বলে এসেছেন।
বুধবার দলের পশ্চিমবঙ্গ পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় জানান, “দলে থাকবেন কিনা, সেটা একান্তই তাঁদের ভাবার বিষয়। এটা আমাদের চিন্তাভাবনার বিষয় নয়। দলে কার গুরুত্ব বেশি, এটা আমাদের এখানে কোনো ব্যক্তি ঠিক করে না, দলই ঠিক করে”। স্বভাবতই এ মন্তব্য থেকে স্পষ্ট, শোভন-বৈশাখীর অভিমান পর্বে অসন্তুষ্ট বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
যোগদানের দু সপ্তাহের মধ্যেই বিজেপিতে মোহভঙ্গ হয়েছে শোভন ও বৈশাখীর। তার অন্যতম কারণ, দেবশ্রী রায়। দুজনের শত আপত্তি সত্ত্বেও রায়দিঘির তৃণমূল বিধায়কের বিজেপিতে যোগদান প্রায় পাকা। এমতাবস্থায় দলে অসম্মানিত বোধ করছেন দুজনে। দেবশ্রীকে নিয়ে নিজেদের আপত্তির কথা আগেও জানিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু সূত্রের খবর, হাই কমান্ড দেবশ্রীর যোগদানে সবুজ সংকেত দেওয়ায় দল ছাড়ার মনস্থির করে ফেলেছেন তাঁরা। ব্যস! তাতেই অস্বস্তিতে পড়ে বিচ্ছেদ আটকাতে মাঠে নামেন কেন্দ্রীয় নেতা তথা দলের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, তাঁর ডেপুটি অরবিন্দ মেনন। কিন্তু প্রত্যেকের কাছেই একই অনুরোধ রেখেছেন শোভন ও বৈশাখী, বিজেপি থেকে নিষ্কৃতি চান তাঁরা।
আবেদন নিবেদনে কাজ না হওয়ায় শেষে মাঠে নামেন মুকুল রায়। শোভন-বৈশাখীর মানভঞ্জনে সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত নিজের নয়াদিল্লির বাসভবনে বৈঠক করেন বিজেপি নেতা। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার চা-চক্রের শেষে মুকুল রায় বলেন, শোভন ও বৈশাখী দলেই আছেন। দল ছাড়ার কোনও প্রশ্নই নেই। একই সুর শোনা যায় শোভন-বৈশাখীর গলাতেও। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে কলকাতায় ফিরে বিমানবন্দরে ফের উলটো সুর শোনা যায় দুজনের গলায়। নিজেদের পুরনো অবস্থানেই তাঁরা অনড়, তা হাবেভাবে বুঝিয়ে দেন শোভন-বৈশাখী। এমনকী, মঙ্গলবার কৃষ্ণনগরের সভায় রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ কটাক্ষ করে মন্তব্য করেন, ‘নতুন বউ পরিবারে এলে মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়। পরে সব ঠিক হয়ে যায়।’ সেই কটাক্ষও খুব একটা ভালভাবে নেননি তাঁরা, তা বুঝিয়ে দেন শোভন-বৈশাখী।
তারই প্রেক্ষিতে বুধবার কলকাতায় নেমেই কৈলাস বিজয়বর্গীয় দলের অবস্থান স্পষ্ট করে দেন নিজের মন্তব্যে। তাঁরা দলে থাকবেন কিনা তা নিয়ে ভাবিত নয় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তা স্পষ্ট করে দেন বিজেপি নেতা। রাজনৈতিক মহলের মতে, শোভন-বৈশাখীর দাবিদাওয়াকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে নারাজ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তা একপ্রকার দরজা দেখিয়ে দেওয়ার শামিল।