বলিউড অভিনেতা কাদের খান প্রয়াত। কাদের খানের ছেলে সরফরাজ জানিয়েছেন, কানাডার একটি হাসপাতালে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বর্ষীয়ান অভিনেতার মৃত্যু হয়। চার মাস হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন কাদের। শ্বাসকষ্টজনিত কারণে তাঁকে ভেন্টিলেটরে দেওয়াও হয়েছিল। রেগুলার ভেন্টিলেটর থেকে এক সময়ে তাঁকে বিশেষ ভেন্টিলেটরে স্থানান্তরিত করা হয়। প্রায় ১৬-১৭ সপ্তাহ তিনি হাসপাতালে ছিলেন এবং শেষ সময়ে তিনি কোমাতে চলে যান৷ কানাডাতেই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বলে জানা গিয়েছে৷ মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। বর্ষীয়ান অভিনেতার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে গোটা বলিউড।
বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন কাদের খান। ৩ বছর আগে মুম্বইয়ের কোকিলাবেন হাসপাতালে হাঁটুতে অস্ত্রপচার করা হয় তাঁর। অস্ত্রপাচারের পর থেকে হাঁটাচলাতেও বেশ অসুবিধাই হত বলিউড অভিনেতার। কিন্তু, ডিসেম্বর মাস থেকে আরও বেশি করে অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন তিনি। কিন্তু, বেশ কিছুদিন ধরেই কাদের খান চিকিত্সায় সাড়া দিচ্ছিলেন না। ফলে, তাঁকে কানাডায় উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু, ২০১৯ সালের শুরুর দিনই জানা যায়, আর নেই বর্ষীয়ান অভিনেতা।সরফরাজ জানিয়েছিলেন অস্ত্রোপচার সফল হলেও শারীরিক দুর্বলতার কারণে হাঁটাচলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। প্রোগ্রেসিভ সুপ্রানিউক্লিয়ার পলসি রোগে আক্রান্ত ছিলেন অভিনেতা। বার্ধক্যজনিত এই অসুখে হাড়ের ক্ষয় হয়, হাঁটাচলার ক্ষমতা কমে যায়। স্মৃতিভ্রংশের সমস্যাও দেখা দেয়।
সম্প্রতি কাদের খানের মৃত্যু নিয়ে একাধিক গুঞ্জন শুরু হয়। রবিবার গভীর রাতে আচমকাই তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে একাধিক সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর হিড়িকও পড়ে যায় নেটিজেনদের একাংশের মধ্যে। কিন্তু, অভিনেতার ছেলে সরফরাজ খান জানান, তাঁর বাবার মৃত্যু নিয়ে গুজব ছড়িয়েছে। তাঁর বাবার শ্বাসের কষ্ট বেড়েছে এবং তাঁকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান সরফরাজ। কিন্তু, সরফরাজের ওই বক্তব্যের পর বেশি সময় আর কাটেনি। মঙ্গলবার সকালেই পাওয়া যায় বর্ষীয়ান অভিনেতার মৃত্যুর খবর।
১৯৩৫ সালের ২২ অক্টোবর আফগানিস্তানের কাবুলে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর একবছর বয়সে তার পরিবার মুম্বইয়ে (তৎকালীন বোম্বে) চলে আসে৷ পরবর্তীতে থিয়েটার থেকেই অভিনয়ের জগতে পা রাখেন। অভিনয় জগতে প্রবেশ করার আগে কাদের খান মুম্বইয়ের একটি কলেজে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক ছিলেন কাদের খান।পরবর্তীকালে কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠানে, তিনি একটি নাটকে অভিনয় করেন, যা উপস্থিত সকলের প্রশংসা অর্জন করে। দিলীপ কুমার এই অভিনয় সম্পর্কে জানতে পারেন৷ কাদের খান তাঁকে তার অভিনয় দেখার জন্য বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানান। কাদের খানের অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে দিলীপ কুমার তাঁর পরবর্তী দুটি ছবিতে কাজ করার প্রস্তাব দেন যার একটি হল সাগিনা মাহাতো৷
১৯৭৩ সালে ‘দাগ’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে ডেবিউ হয় কাদের খানের। ছবিতে ছিলেন রাজেশ খন্নাও। দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে ৩০০টির কাছাকাছি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। সেইসঙ্গে পরিচালক, চিত্রনাট্যকারের ভূমিকাও পালন করেছেন। ২৫০টির বেশি ছবিতে সংলাপ লিখেছেন তিনি।রণধীর কপূর-জয়া বচ্চন অভিনীত ‘জওয়ানি-দিওয়ানি’ ছবির সংলাপ ছিল বিখ্যাত। কাদেরই লিখেছিলেন এই ছবির চিত্রনাট্য। মনমোহন দেশাই ও প্রকাশ মেহরার সঙ্গে প্রচুর কাজ করেছেন কাদের।‘ধরমবীর’, ‘দেশপ্রেমী’, ‘কুলি’, ‘গঙ্গা-যমুনা,সরস্বতী’, ‘সুহাগ’, ‘পরভরিশ’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য প্রশংসা পেয়েছিলেন তিনি সমালোচকদের। এছাড়া তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমা হল- গঙ্গা যমুনা সরস্বতী , শরাবি, কুলি, দেশপ্রেমী, লাওয়ারিস, সুহাগ, মুকদ্দর কা সিকন্দর, পারভরিস এবং অমর আকবর অ্যান্থনী। অমিতাভ বচ্চন অভিনীত যে সব ছবিতে তিনি সংলাপ লিখেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হল, মিঃ নাটওয়ারলাল, খুন পাসিনা, দো অর দো পাঁচ, সাত্তে পে সাত্তা, ইনকিলাব, গিরেফতার, হম এবং অগ্নিপথ।
তাঁর প্রয়াণে শোকের ছায়া চলচ্চিত্র জগতে৷ ট্যুইটারে শোকপ্রকাশ করছেন সেলেব থেকে ভক্তজনেরা৷