কলকাতা: ভোটের মুখে বাংলায় ৪ শীর্ষ পুলিশ আধিকারিকের বদলি নিয়ে সুর চড়ালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশ অফিসারদের অপসারণ নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে কড়া ভাষায় চিঠি লিখে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী। ভোটের মুখে রাতারাতি ৪ জন পুলিশ আধিকারিককে সরানো নিয়ে কমিশনের সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে মমতা চিঠিতে লিখেছেন, ‘‘কেন্দ্রে শাসকদলের ইশারাতেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।’’ একইসঙ্গে কমিশনের এহেন পদক্ষেপ ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ ও ‘খামখেয়ালি’ বলে ব্যক্ত করেছেন মমতা।
কলকাতার পুলিশ কমিশনার পদ থেকে অনুজ শর্মাকে সরিয়ে সেই স্থানে রাজেশ কুমারকে বসিয়েছে নির্বাচন কমিশন। জ্ঞানবন্ত সিং-এর পরিবর্তে বিধাননগর কমিশনারেটের নতুন পুলিশ কমিশনার করা হয়েছে নটরাজন রমেশ বাবুকে। এ ছাড়া ডায়মন্ডহারবার ও বীরভূমের পুলিশ সুপার বদল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। প্রসঙ্গত, ডায়মন্ডবারবার যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচন কেন্দ্র। কমিশনের সেই নির্দেশ মেনে শনিবার নতুন নোটিফিকেশন জারিও করে দিয়েছে নবান্ন। কারণ, কমিশনের নির্দেশের পর সাংবিধানিক নিয়ম অনুযায়ী রাজ্য সরকার তা মানতে বাধ্য।কমিশনের সেই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে শনিবার মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি লেখেন মমতা।চিঠির শুরুতে যদিও তিনি বলেছেন, “নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে আমার যথেষ্ট শ্রদ্ধা রয়েছে। এবং আমি দৃঢ় ভাবে মনে করি দেশের গণতন্ত্রের রক্ষায় ভারতের নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে।” কিন্তু তার পরেই চিঠির পরতে পরতে তীব্র অসন্তোষ জানিয়েছেন মমতা। বলেন, “কমিশনের এই সিদ্ধান্ত খামখেয়ালি শুধু না, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও পক্ষপাতদুষ্ট। বিজেপি-র পক্ষ নিয়ে যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।”
কমিশন সূত্রে খবর, কলকাতা ও বিধাননগর- এই ২ পুলিস কমিশনারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধীরা। সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখেই এই সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।পাশাপাশি, বীরভূমের পুলিস সুপার ও ডায়মন্ড হারবার পুলিস জেলার সুপারের পদেও বদলি করা হয়। বীরভূমের নতুন পুলিস সুপার হয়েছেন আভান্নু রবীন্দ্রনাথ। আর ডায়মন্ড হারবার পুলিস জেলার সুপার করা হয়েছে শ্রীহরি পান্ডেকে। বদলির পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের তরফে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যে সকল অফিসারকে পদ থেকে সরানো হল, তাঁরা নির্বাচনের কোনও কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না।
মমতার অভিযোগ, “কদিন আগে সাংবাদিক বৈঠক করে বিজেপি নেতারা বলেছিলেন রাজ্যের সিনিয়র পুলিশ অফিসারদের খুব শিগগির বদলি করে দেবে নির্বাচন কমিশন। তার পর গতকালই (শুক্রবার) একটি টিভি শো-তে প্রধানমন্ত্রী তথা বিজেপি প্রার্থী বলেছেন, বাংলায় আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতি ভাল নয়, সে জন্যই সেখানে সাত দফায় ভোটের আদেশ দেওয়া হয়েছে।” তৃণমূলনেত্রীর অভিযোগ তার পর পরই, বাংলার চার পুলিশ অফিসারকে বদলির নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
তাঁর কথায়, এই সব ঘটনা পরম্পরা থেকে কমিশনের কাজকর্ম নিয়ে ঘোর সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। তারা কি সাংবিধানিক নিয়ম মেনে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট করাতে চাইছে, নাকি বিজেপি-কে খুশি করে চলতে চাইছে। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, কলকাতা ও বিধাননগরে বহু ভাষাভাষি মানুষ থাকেন। সেখানকার কমিশনার হিসাবে অনুজ শর্মা ও জ্ঞানবন্ত সিংহ অত্যন্ত পারদর্শিতার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামলাচ্ছিলেন। ভোটের আগে প্রচুর নগদ টাকা, সোনা, মদ আটক করা হয়েছিল তাঁদের নেতৃত্বে। কিন্তু তাঁদের পরিবর্তে যে দুই অফিসারকে কমিশনার করা হল, তাঁদের এই দুই এলাকা ও এখানে বসবাসকারী মানুষদের সম্পর্কে কোনও ধারনাই নেই। এ কথা বলেই মমতা প্রশ্ন করেন, তা হলে কি রাজনৈতিক প্রভুকে খুশি করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল? এর পরে কলকাতা ও বিধাননগরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কোনও সমস্যা হলে কমিশন তার দায় নেবে তো?
নিয়ম অনুযায়ী ভোটের আগে রাজ্য সরকারের কোনও অফিসার বদল করতে হলে রাজ্য সরকারের কাছে আগে তার তালিকা পাঠাতে হয়। এবং রাজ্য সরকারের মতামত চাওয়া হয়। এক্ষেত্রে কোনও কিছুই করা হয়নি। বিজেপি নেতারা বলেছেন বলেই অফিসার বদল করা হয়েছে বলে বারবার অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। চিঠিতে বদলির সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করে দেখার জন্য কমিশনকে অনুরোধ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে, কার নির্দেশে বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তা তদন্ত করে দেখারও দাবি জানিয়েছেন তিনি।