বিদ্যাসাগর মূর্তি উন্মোচনের মঞ্চ থেকে ফের বিজেপিকে বিঁধলেন মমতা, ক্ষোভ উগরে দিলেন রাজ্যপালের বিরুদ্ধেও

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

#কলকাতা: বিদ্যাসাগর কলেজে ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙচুরের পর প্রায় এক মাস বাদে ফের মঙ্গলবার নতুন মূর্তি স্থাপন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার হেয়ার স্কুলের মাঠে মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই মঞ্চেই বিদ্যাসাগরের নতুন মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাল্যদান হয় মূর্তিতে। মন্ত্রী, আমলা, শিক্ষাবিদরা ছাড়াও সে মঞ্চে হাজির ছিলেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, আবুল বাশার, নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়িদের মতো বিদ্বজ্জনরাও।

এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বেলা ১টা নাগাদ প্রথমে যান হেয়ার স্কুলের অনুষ্ঠানে। সেখান থেকে মূর্তি নিয়ে পায়ে হেঁটে যান বিদ্যাসাগর কলেজে। একটি পূর্ণাবয়ব এবং একটি আবক্ষ মূর্তি মূর্তির উদ্বোধন করেন তিনি। বর্ণপরিচয়ের মলাটের আদলেই এ দিন সাজানো হয়েছিল অনুষ্ঠান মঞ্চ। ওই একই রঙে তোরণ তৈরি করা হয়েছিল বিদ্যাসাগর কলেজের সামনেও। মূর্তির আবরণ উন্মোচন অনুষ্ঠানে মমতা বলেন, “বিদ্যাসাগরকে নিয়ে একটা অনুষ্ঠান আমরা করতামই। তবে সেটা এ ভাবে নয়। বিদ্যাসাগরের ২০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে। কিন্তু আজকের এই অনুষ্ঠানটার প্রয়োজন বোধহয় ছিল না। একটা মূর্তি ভেঙে দিয়ে তাঁকে হৃদয় থেকে কখনোই সরিয়ে দেওয়া যায় না। বাংলা খেলনা নয়। বাংলা ফ্যালনাও নয়। কেউ যদি ভাবে বাংলাকে নিয়ে যখন যা ইচ্ছা করবে, তা কখনোই সম্ভব হবে না”। তিনি বলেন, “বিদ্যাসাগরের একটা মূর্তি ভেঙে দিয়ে, তাঁকে বাংলার মানুষের মন থেকে মুছে দেওয়া যায় না। রাজা রামমোহন রায়কে গালাগালি করে তাঁকে বাঙালির মন থেকে মোছা যায় না। আমাদের সংস্কৃতি, ঐত্যিকে শেষ করে দেওয়া যাবে না”।

বিদ্যাসাগরের মূর্তি উন্মোচন করে এদিন বাংলায় নবজাগরণের ডাক দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা ভাষার যত্ন নিতে, বাংলা ভাষাকে গুরুত্ব দিতে বলেন তিনি। বাংলার মাটিতে থেকে বাঙালিকে অপমান করা, তাড়ানোর চেষ্টা হলে তিনি প্রাণ দিয়ে লড়বেন বলে হুঁশিয়ারি দেন। আরও বলেন, “কেউ মেসেজে থ্যাঙ্কস লিখলে তাঁকে উত্তরে জয় হিন্দ, জয় বাংলা লিখুন। তাহলে বাংলাটাকে একটু গুরুত্ব দেওয়া হবে। নিজের রাজ্যের প্রতি একটু মমত্ব থাকুক।”

প্রসঙ্গত, গত ১৪ মে কলকাতায় বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের রোড শো-কে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে ওঠে কলেজ স্ট্রিট চত্ত্বর। প্রথমে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে তৃণমূল ছাত্র পরিষদে অমিতকে কালো পতাকা দেখানোর কর্মসূচি নিলে বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ বাঁধে। এর পর মিছিল এগিয়ে বিদ্যাসাগর কলেজের কাছে পোঁছালে সেখানে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয় কলেজের গেটের সামনে। ভস্মীভূত হয় তিনটি মোটর বাইক। একই সঙ্গে কলেজের ভিতর বসানো বিদ্যাসাগরের মূর্তিটিও ভেঙে ফেলা হয়। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তির পুনস্থাপনের অনুষ্ঠানটির আয়োজক রাজ্য উচ্চশিক্ষা দফতর এবং স্কুল শিক্ষা দফতর। এ ছাড়াও বিদ্যাসাগরের ২০০ বছর জন্মবার্ষিকী উদযাপন কমিটির সহযোগিতা রয়েছে বলে জানা গিয়ে

এদিন শুধু বিদ্যাসাগর প্রসঙ্গে অবশ্য সীমাবদ্ধ থাকলেন না মুখ্যমন্ত্রী এ দিন। টেনে আনলেন সন্দেশখালি প্রসঙ্গও। বিজেপির যে ২ কর্মীর মৃত্যু হয়েছে, তাঁরা তৃণমূলের কর্মী কায়ুমকে মারতে তাঁর গ্রামে গিয়েছিলেন বলে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন মন্তব্য করেছেন। উপর্যুপরি হিংসার ঘটনার জন্য বিজেপি-কে দায়ী করে মমতা বলেন, ভোটের পর থেকেই রাজনৈতিক খুন শুরু হয়ে গেছে। বাংলায় চৌত্রিশ বছরের সরকারকে সরানোর পর কিন্তু আমরা এমন করিনি। রবীন্দ্রসঙ্গীত-নজরুলগীতি বাজাতে বলেছিলাম। আর ওরা আমাদের কর্মীদের খুন করছে। ওদের দু’জন মারা গেছে, কীভাবে জানি না। আমাদের আট জন সমর্থককে খুন করেছে। এর পরই সরাসরি রাজ্যপালের প্রসঙ্গ টেনে আনেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “গতকাল দিল্লিতে গিয়ে রাজ্যপাল বলেছেন, রাজনৈতিক হিংসায় বাংলায় ১২ জন খুন হয়েছে। অথচ গতকাল পর্যন্ত মারা গিয়েছিল ১০ জন। তার পর গতকাল রাতে জগদ্দলে তৃণমূলের দু’জন মুসলিম সমর্থক খুন হয়েছে। আজ গলসিতে তৃণমূলের একজন হিন্দু কর্মী মারা গেছে। এখন বুঝতে পারছি, ওরা আগে থেকে সংখ্যা ঠিক করে টার্গেট পূরণ করছে।”

মুখ্যমন্ত্রী বোঝাতে চান রাজ্যপাল মৃতের যে সংখ্যা বলেছিলেন, সেটাই ছিল টার্গেট। তা এখন পূরণ হয়েছে। যার মোদ্দা অর্থ, ষড়যন্ত্র বা চক্রান্ত যাই হোক, তাতে রাজ্যপালের নামটাও এক প্রকার ভাবে জড়িয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বাংলায় কোনও রাজ্যপালের বিরুদ্ধে এমন ভয়ানক অভিযোগ স্মরণকালের মধ্যে কেউ করেনি। মুখ্যমন্ত্রী এদিন অবশ্য এও বলেন, আমি রাজ্যপালকে সম্মান করি। কিন্তু তাঁর বক্তৃতাকে সম্মান করি না। মমতা বলেন, ” প্রত্যেক পদেরই একটা সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা আছে। বাংলাকে অবমাননা করা হয়েছে। বাংলাকে বাঁচাতে চাইলে, বাংলার সংস্কৃতিকে বাঁচাতে চাইলে একজোট হন। বাংলা গুজরাট নয়। বাংলাকে গুজরাট বানানোর ষড়যন্ত্র চলছে।”

একইসঙ্গে জানান, রাজনৈতিক হিংসায় সকল নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। মুখ্যসচিবকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি দেখে নিতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest