#লখনউ: অ্যাম্বুল্যান্স না মেলায় মৃত স্ত্রীকে কাঁধে নিয়ে কয়েক কিলোমিটার পথ হেঁটে অতিক্রম করতে হয়েছিল ওড়িশার দানা মাঝিকে। সেই ঘটনার কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও এদেশের ছবিটা একইরকম রয়ে গিয়েছে। এখনও মৃতদেহ বহনের জন্য অ্যাম্বুল্যান্সের দেখা মেলে না। কোলে জড়িয়ে ধরে দিনভর গোটা শহর চষেও ঠাঁই হয়নি কোনও হাসপাতালে। শেষে সন্তানের মৃতদেহ দু’হাতে বয়ে বাড়ি ফিরলেন উত্তরপ্রদেশের এক মা।
সোমবার নবছরের ছেলের জ্বর আসায় তাকে শাহজাহানপুরের একটি হাসপাতালে ভরতি করেন বাবা। কিন্তু চিকিৎসকরা রোগীকে দেখার পর অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তখনই অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করে দেওয়ার অনুরোধ জানান রোগীর বাবা। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দেয়, অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়া যাবে না। শিশুটির বাবার কথায়, “দু’দিন ধরে আমার ছেলে জ্বরে ভুগছিল। কিছুতেই জ্বর না কমায় আমরা শাহজাহানপুরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু, ডাক্তাররা রোগী দেখতে মানা করে দেয়।” অভাবের সংসার আফরোজদের। বাবা ঠিকা শ্রমিক। বলেছেন, “আমাদের সামর্থ ছিল না নামী হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর। ডাক্তাররা সেই সব হাসপাতালের নামই বলেছিলেন। আমরা একটা অ্যাম্বুলেন্সের জন্য কাতর আবেদন করি। কিন্তু চোখ রাঙিয়ে আমাদের বার করে দেওয়া হয়। অথচ হাসপাতাল চত্বরেই সে সময় তিনটে অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়েছিল।হাসপাতালে অ্যাম্বুল্যান্স থাকতেও কেন আমাদের দেওয়া হল না, ভেবেই পেলাম না।”
কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্সের আশায় তো আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করা যায় না। কিন্তু গাড়ি ভাড়া করে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার খরচও কম নয়। এদিকে ক্রমেই ছেলের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। তাই দরিদ্র পরিবারের ওই দম্পতি ছেলেকে কোলে নিয়েই রওনা দেন। কিন্তু বাড়ি ফেরার পথে মায়ের কোলেই মারা যায় ছেলে। এখন আর্তনাদ আর হাহাকারই সঙ্গী আফরোজের মায়ের। দিনভর হাসপাতালের দোরে দোরে ঘুরে বিকেলের দিকে ছেলের নিথর দেহ আঁকড়ে ধরেন শূন্য বুকে।মর্মাহত মা বলেন, “হাসপাতাল থেকে ছেলেকে কোলে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথেই ও চিরদিনের মতো চলে গেল।”
যদিও হাসপাতালের তরফে অ্যাম্বুল্যান্স না দেওয়ার অভিযোগ খারিজ করা হয়েছে। এমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার অনুরাগ পরাশর বলেন, “সন্ধে ৮টা ১০ মিনিট নাগাদ আফরোজ নামের এক শিশুকে এখানে নিয়ে আসেন এক দম্পতি। ওর শারীরিক অবস্থা ভাল ছিল না। তাই তাকে লখনউয়ে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। এমন পরামর্শে মেজাজ হারান দম্পতি। চিৎকার করতে থাকেন, নিজেদের সন্তানকে তাঁরা যেখানে ভাল বুঝবেন নিয়ে যাবেন। এই বলে শিশুকে কোলে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যায়।”
হাসপাতালের সাফাইতে অবশ্য চিড়ে ভেজেনি। চিকিৎসায় গাফিলতি আর চিকিৎসকদের ঘৃণ্য আচরণে ইতিমধ্যেই সরব শাহজাহানপুরের বাসিন্দারা। ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়েছে সংবাদ মাধ্যমগুলিতেও। প্রতিবাদে সামিল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। অভাবী মানুষগুলোকে আর কতদিন এ ভাবে বিনা চিকিৎসায় ধুঁকতে ধুঁকতে মরতে হবে, সার্বিক স্তরে উঠেছে সেই প্রশ্ন।