বিশ্বায়নের সাইড ইফেক্ট হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে আম জনতা, ফেঁপে উঠছে আম্বানিরা

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

মাঝে মাঝেই পুরনো লোকেরা বলেন, আগে কি সুন্দর দিন ছিল। মানুষ ভালো ছিল। মানুষ আনন্দে থাকত। কথাখানি পুরোটা সত্যি নয়। এর ভিতরে আবেগের জল রয়েছে অনেকটাই।  তা বলে সবটা মিথ্যাও নয়। আসলে পুঁজিবাদ স্বাচ্ছন্দলাভের যে প্রলোভন ঝুলিয়েছে, তা পাওয়ার তাগিদ মানুষকে বড় বেশি ব্যস্ত করে রাখছে। বস্তুগত চাহিদা বাড়ছে দিন দিন। একই সঙ্গে মানুষের সুকুমার বৃত্তিগুলিও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

এই কিছুকাল আগে পর্যন্ত কিশোর ও তরুণরা খেলত তারুণ্যের ভরপুরশক্তিকে ব্যবহার করার তাগিদেই। কিন্তু আজ সেখানেও উপার্জনের ভাবনা। খেলেও যে কোটি কোটি টাকা রোজগার করা যায়, তা দেখিয়ে দিয়েছে আইপিএল। মনরাজ্যে কেবল উপার্জনের তাগিদ বাড়ছে হুহু করে। আর তা বাস্তব না হলে বাড়ছে হতাশা।

ধর্মস্থানগুলিতে যারা আনা-গোনা করেন, তাদের একটা বড় অংশ আল্লাহ কিংবা ভগবানের কাছে কেবল অর্থ কিংবা সম্পদ প্রাপ্তির প্রার্থনাতেই ব্যস্ত। যদি মন্দিরমুখী কিংবা মসজিদমুখী মানুষের ভিড় আধ্যাত্মিক চেতনার জন্য এমন উন্মুখ হত , তাহলে রাম-রহিমের ভিতরে বিদ্বেষ এমন করে বাড়ত না।

আরও পড়ুন : JEE Mains 2021: কোপ এবার জয়েন্টে, পিছিয়ে গেল পরীক্ষা

নোবেলজয়ী অর্থশাস্ত্রী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে অর্থনৈতিক বিশ্বায়নে ভারত লাভবান হয়েছে ঠিকই, কিন্তু গরিব মানুষের উপর যাতে তার কুফল না পড়ে, তার জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা করা হয়নি । ২০২০ সালের তাণ্ডবলীলা প্রত্যক্ষ করবার পর এই কথাটির সঙ্গে কেউ  ভিন্নমত হবেন বলে মনে হয় না।

কথাটি শুধু বিশ্বায়নের নয় — কথাটি পুঁজির সঙ্গে  সমাজের সম্পর্কের বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিতেও সমান ভাবে প্রযোজ্য। উদার বাণিজ্য প্রয়োজন, বাজারের স্বাধীনতা প্রয়োজন, তাতে সন্দেহ নেই — বিশ্বায়নকেন্দ্রিক বাণিজ্যের ফলে গোটা দুনিয়ায় আর্থিক সম্পদের পরিমাণ বহু গুণ বেড়েছে । একথাও অস্বীকারের উপায় নেই।  শুধু অর্থনৈতিক সংস্কারোত্তর ভারতের উদাহরণ থেকেই সেই সমৃদ্ধির আন্দাজ পাওয়া সম্ভব।

প্রশ্ন হল সেই সম্পদের বণ্টন নিয়ে ।  গবেষণায় দেখা গিয়েছে , সমগ্র বিশ্বে এক অভূতপূর্ব আর্থিক বৈষম্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এই  ঘটনাটি ঘটেছে বিশ্বায়নের মাঝেই। অর্থাৎ, পুঁজি যা উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে, রাষ্ট্রব্যবস্থা তাকে বণ্টন করতে পারেনি। তার ফলে যে কোনও ধাক্কায় দরিদ্র মানুষের জীবন একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে উঠছে। ফলে সরকার হঠাৎ লকডাউন ঘোষণা করলে এই মানুষজনদের পক্ষে এক দিনও শহরে টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে উঠছে। যে কারণে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে তারা পায়ে হেঁটেও হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে ঘরে ফিরতে চেষ্টা করেন।

গরিবের বিপদ অনেক। অতিমারি তার একটি রূপ মাত্র। এরা না খেয়ে মরে। ঋণের ফাঁসে মরে। অপুষ্টিতে মরে। রাজনৈতিক দলের ঘৃণ্য নকশায় মরে। বিদ্বেষে মরে। চিকিৎসার অভাবে মরে।   সেই অর্থে কোনও ধাক্কা সামলাবার ক্ষমতা তার নেই । কাজ করতে না পারলে আয় শূন্য, ফলে সংসারও অচল। বিশ্বায়নের বয়ে আনা  আর্থিক মন্দাও দরিদ্রকেই সবার আগে কাবু করে ফেলে । তাঁরাই প্রথম কাজ হারান। তাঁদের স্বল্প সঞ্চয়ে হাত দিচ্ছে সরকারও। ফলে রুজি রুটির বন্দোবস্ত করা তাদের পক্কে কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

কর্মহীনতার ধাক্কা সামলানো দরিদ্রের পক্ষে মারাত্মক হয়ে ওঠে। তার জমানো  কিছুই থাকে না। উপরুন্তু গতর খাটিয়ে যে দু পয়সা আয় হবে সে সংস্থান কমে যাচ্ছে। বিশ্ব উষ্ণায়নজনিত জলবায়ু পরিবর্তনের আঁচও সবার আগে লাগে এই  দরিদ্র মানুষেরই গায়ে। তার পিছনেও থাকে বাণিজ্যের মস্ত ভূমিকা। ধনতন্ত্রের চাকা যত গতিশীল হয়েছে , ততই লাভবান হয়েছে ধনী রাষ্ট্রগুলি, এবং দরিদ্র রাষ্ট্রের ধনী জনগোষ্ঠী। কিন্তু, তার জন্য প্রকৃতিকে যে মূল্য চুকাতে হয়েছে , তার ফল ভুগেছেন মূলত দরিদ্র মানুষ। যত ক্ষণ না বিশ্বায়ন ও ধনতন্ত্র এই মানুষগুলির দায়িত্ব স্বীকার করছে , ততক্ষণ পর্যন্ত কাজের কাজ কিছু হবে না ।

এই সঙ্কটের একমাত্র উত্তর দায়িত্বশীল ধনতন্ত্র দিতে পারে।  সমস্যা হল ধনতন্ত্রই হোক কিংবা সমাজতন্ত্র সবথেকে আগে জরুরি মূল্যবোধ এবং নৈতিকতা। তা না হলে প্রবঞ্চনার পাতা ফাঁদ ক্রমেই দীর্ঘ হবে। বিশ্বজুড়ে বাড়বে ধন বৈষম্য। ধনলিপ্সা এমন একটা মারাত্মক জিনিস, তাতে সাধারণ নৈতিকতা না থাকলে তা মানুষের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত চুষে নিতে চায়। বাড়তি মুনাফা লাভের ইচ্ছা দুরারোগ্য অসুখে পরিণত হয়। ধনতন্ত্রের এটি একটি মারাত্মক প্রবণতা। কেবল এই মুহূর্তের মুনাফা অর্জনে তা সন্তুষ্ট থাকতে দেয় না।

মনে রাখতে হবে  সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিপন্নতা যদি বাড়তেই থাকে  তবে তা কারও পক্ষেই সুখকর হবে না । পুঁজির পক্ষেও নয়। কারণ, বাজারকে চলমান রাখতে হলে বেশি  মানুষের হাতে ক্রয়ক্ষমতা থাকতে হবে ।  মনে রাখা দরকার, সুস্থায়ী উন্নয়নের সঙ্গে পুঁজি বা বিশ্বায়নের কোনও বিরোধ নেই । পুঁজিকে সেই সুস্থায়ী উন্নয়নে উৎসাহিত করে তুলতে রাষ্ট্রকে আপন ভূমিকা পালন করতে হইবে। ভারতের মতো দেশে  এইখানেই আতঙ্ক রয়েছে ।

এ দেশে রাষ্ট্র বহু বিষয়ের মতই অর্থনীতি নিয়েও খানিকটা উদাসীন।  কয়েকটি পুঁজিপতি কোম্পানি এদেশের অর্থনীতিতে তাদের থাবা বাড়াচ্ছে। অস্বীকারের উপায় নেই যে রাষ্ট্র সেক্ষেত্রে খানিকটা দর্শকের ভূমিকা এবং খানিকটা ওই কোম্পানিগুলির সহায়কের ভূমিকা পালন করছে।

আরও পড়ুন : IPL 2021: চলতি আইপিএলের প্রথম ডাবল হেডার, কখন শুরু KKR-এর ম্যাচ?

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest