বেগুসরাইয়ে পরাজিত কানহাইয়া, বাংলায় ধস, কেরলে পতন, গোটাদেশে বিলুপ্তপ্রায় বামেরা

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

#নয়াদিল্লি: গোটা দেশের রাজনৈতিক মানচিত্র থেকে প্রায় মুছে যাচ্ছে বামেরা! বাংলায় সব সমীক্ষার ইঙ্গিত সত্য প্রমাণিত করে হাতে থাকা দু’টি আসনই হারিয়েছে সিপিএম। গত বছর ত্রিপুরায় ক্ষমতা হারানোর পরে সেখানে লড়াই যথেষ্ট কঠিন হয়ে গিয়েছিল। সেই ধারা বজায় রেখেই উত্তর-পূর্বের ওই রাজ্যে জোড়া আসনই সিপিএমের হাতছাড়া। এক খণ্ড দ্বীপের মতো আশার বাতি জ্বলে ছিল শুধু কেরলে। গোটা দেশ যখন নরেন্দ্র মোদীর প্রত্যাবর্তনের পক্ষে রায় দিচ্ছে, মালাবার উপকূলই একমাত্র সম্পূর্ণ উল্টো দিকে গিয়ে বিজেপি-বিরোধী অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু কেরলে মোদী-বিরোধী হাওয়ার কোনও ফায়দা বামেদের পালে আসেনি। গত বারের জেতা আটটি আসনের জায়গায় এ বার সেখানে শাসক বাম এগিয়ে মাত্র একটি আসনে— আলপ্পুঝা! আর তামিলনাড়ুতে সিপিএম, সিপিআই দু-চারটে আসন জিতলেও, তা ডিএমকে-র সমর্থনে। তাতেও আসন সংখ্যা দু’অঙ্কের কাছাকাছি পৌঁছবে না।

দেশজুড়ে বামপন্থায় এখনও আস্থাশীল প্রজন্মকে ঘুরে দাঁড়ানোর একটা স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন৷ রাজনীতির ধরাবাঁধা ছকে না হেঁটে অন্য রকমভাবে, ভিন্ন কায়দায় পথ হাঁটতে শুরু করেছিলেন বিহারের বেগুসরাইয়ের তরুণ নেতা৷ যাকে বলা হচ্ছিল, বিকল্প রাজনীতি৷ অনেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন, এই তরুণ তুর্কিই ফের দেশে প্রতিষ্ঠা করবে শ্রেণি সংগ্রামের চিরকালীন আদর্শ৷ প্রচারেও কম চমক ছিল না৷

কিন্তু আবার ঘুরে দাঁড়ানোর মুখেই বামপন্থার বীজ চাপা পড়ে গেল৷ সিপিআই প্রার্থী, জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমার বেগুসরাই থেকে হারলেন৷ জিতে গেলেন বিজেপির হেভিওয়েট প্রার্থী তথা বিদায়ী মন্ত্রী গিরিরাজ সিং৷ এই ফলাফল যে খুব অপ্রত্যাশিত, তা কিন্তু নয়৷ বিজেপির বিরুদ্ধে মহাজোটের শরিক করে সিপিআই প্রার্থী কানহাইয়া কুমারকে দাঁড় করানোর পক্ষে মোটেই মত ছিল না আরজেডি-র৷ তাই তাঁরা নিজেদের দলীয় প্রার্থী তনভির হাসানকেও দাঁড় করিয়েছিলেন৷ ফলে লড়াই হয়ে গিয়েছিল ত্রিমুখী৷

তা সত্ত্বেও কানহাইয়া নিজের ঢঙে প্রচার করেছিলেন৷ তাঁর হয়ে প্রচার করেন শাবানা আজমি থেকে শুরু করে কানহাইয়ার জেএনইউ-র বান্ধবী তথা বলিউড অভিনেত্রী স্বরা ভাস্কর৷ বিহারের অন্যতম অনুন্নত এলাকা বেগুসরাইয়ের মিশ্র সমাজে জাতপাতের রাজনীতি সরিয়ে নিজের আদর্শে প্রভাব ফেলার চেষ্টা করেছিলেন বামপন্থী ছাত্রনেতা কানহাইয়া৷ আর সেটাই কাল হল৷ বিহারী রাজনীতির পথে না হাঁটাই কানহাইয়া পরাজয়ের অন্যতম কারণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ৷ তাঁদের আরও আশঙ্কা, কানহাইয়ার পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে বুঝি বামপন্থী রাজনীতিতে নতুন প্রজন্ম উদয়ের সম্ভাবনাটুকুও নিভে গেল৷

বাংলার বামের অবস্থা আরও সঙ্গিন। নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক হিসেব বলছে, বিজেপির ভোট এ বার বেড়ে হয়েছে ৩৮.৫%। আর বামেদের ভোট নেমে এসেছে প্রায় ৬%-এ! তিন বছর আগের লোকসভা ভোটে বামফ্রন্ট পেয়েছিল প্রায় ২৬% ভোট। বিজেপির ভোট তখন ছিল ১০.১৬%।অনেকেই মনে করছেন, বামেদের যে ২০% ভোট ক্ষয় হয়েছে, তার পুরোটাই যোগ হয়েছে বিজেপির লাভের খাতায়! যে কারণে ভোটের আগে থেকে সামাজিক মাধ্যমে ঘুরতে থাকা স্লোগান এখন বাংলার রাজনৈতিক মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ব— ‘বামের ভোট রামে’! বিধানসভার পরে গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাম ভোট কমে এসেছিল প্রায় ১৬%-এ। বামেদের ছাপিয়ে রাজ্যের নানা জায়গায় তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে উঠে এসেছিল বিজেপিই।

মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা এবং রাজস্থানেও বেশ কিছু আসনে প্রার্থী দিয়েছিল সিপিএম। বড় বড় কৃষক আন্দোলনের ঢেউও তুলেছিল সারা ভারত কৃষকসভা। কিন্তু ভোটে তার প্রতিফলন পড়ল না। পশ্চিমভারতের এই রাজ্যগুলি থেকেও শূন্যই জুটল সীতারাম ইয়েচুরির দলের কপালে।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest