শিলং: দুর্নীতির সঙ্গে জোট রয়েছে কংগ্রেসের। শনিবার অরুণাচল প্রদেশের আলোতে নির্বাচনী জনসভা করতে গিয়ে এই মন্তব্য করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, “অতীতে গরিবের জন্য বরাদ্দ রেশন চুরি হয়েছে। রেশন ব্যবস্থায় দুর্নীতি করার জন্য জেলও হয়েছে অনেকের। আসলে দুর্নীতির সঙ্গে আগাগোড়াই জোট রয়েছে কংগ্রেসের। পরবর্তী সময়ে তাতে যোগ দিয়েছে বাকি দুর্নীতিগ্রস্তরা।”
এদিন উত্তর-পূর্ব ভারতে তিনটি জনসভা করেন মোদী। তার দু’টি করেন অসমে, একটি অরুণাচলে।অরুণাচলের ওয়েস্ট সিয়াং জেলায় আলো নামে এক জায়গায় মোদী জনসভায় বলেন, যে নেতারা দিল্লিতে বসে বিপুল পরিমাণ কর ফাঁকি দিয়েছেন, চাষিদের জমি কেড়ে নিয়েছেন, সরকারি জমি ভাড়া দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করেছেন, প্রতিরক্ষা চুক্তি থেকে কমিশন নিয়েছেন, তাঁরা আমার নিন্দা করেন। তাঁরা কোনরকমে জেল থেকে রক্ষা পেয়েছেন। জামিন পেয়ে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এদিকে নিন্দা করছেন চৌকিদারের। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী ও ইউপিএ-র চেয়ারপার্সন সনিয়া গান্ধীর বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা আছে। মোদী পরোক্ষে সেকথাই উল্লেখ করেছেন।অরুণাচল প্রদেশকে ভারতের শক্তিশালী বর্ম হিসেবে উল্লেখ করে অভিযোগ করেন, কংগ্রেসের নামদাররা (নামী) এই রাজ্যকে বরাবর অবহেলা করেছে।
আগামী ১১ এপ্রিল অরুণাচল প্রদেশের ৬০টি বিধানসভা ও দুটি লোকসভা আসনে নির্বাচন হওয়ার কথা। তার আগে বিজেপির তিনজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। শনিবার এই ঘটনাকে দলের পক্ষে ভাল লক্ষণ বলে উল্লেখ করে মোদি বলেন, “দিল্লির নামী পরিবার ও এই রাজ্যে থাকা তাদের সভাসদরা শুধুমাত্র মালাই খাওয়ার চিন্তাই করে। রাজ্যের উন্নয়নের কথা ভাবে না। আমার পাঁচ বছরের শাসনকালে উত্তর-পূর্ব ভারতে আমি ৩০ বারেরও বেশি এসেছি। আমার আগে ৩০ বছর এই রাজ্যে কোনও প্রধানমন্ত্রী আসেনি। যাঁরা নিজেদের ভারতের ভাগ্যবিধাতা বলে মনে করেন তাঁদের কাছে জানতে চাই, আপনারা কতবার এই রাজ্য এসেছেন।”
অসমের গোহপুরে এক জনসভায় মোদী বলেন, চৌকিদারকে মানুষ বিশ্বাস করে। তাই বিরোধীরা ভীত। তাঁর দাবি, বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত লোকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাতেই ভয় পেয়ে গিয়েছে বিরোধীরা। অসমের মোরামে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, কংগ্রেসের জন্যই দেশ পশ্চাৎপদ অবস্থায় পড়ে আছে। বিদেশীরাও মনে করে, ভারত অত্যন্ত গরিব দেশ। তাঁর কটাক্ষ,’দেশ যখন উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব অর্জন করছে তখন কয়েকজন ছাড়া সমগ্র দেশবাসীর আনন্দ হয়। কয়েকজন দেশের উন্নতি ও সাফল্য দেখে হতাশ।’ ২০১৬ সালে পাকিস্তানে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক বা বালাকোটে বায়ুসেনার বোমাবর্ষণের প্রসঙ্গও তোলেন মোদী। তাঁর বক্তব্য, এই প্রথমবার ভারত সন্ত্রাসবাদীদের ঘরে ঢুকে তাদের মেরে এসেছে। তিনি বলেন, সারা দেশ আজ আনন্দিত। শুধু দু’পক্ষ খুশি নয়। কংগ্রেস আর সন্ত্রাসবাদী। সারা বিশ্ব ভারতের পিছনে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু কংগ্রেসের চোখে ঘুম নেই।
তবে অসমে পৌঁছে ‘চৌকিদার’ থেকে ‘চা-ওয়ালা’ হয়ে যান তিনি। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী নিজেকে চা-ওয়ালা হিসাবেই পরিচয় দিতে বেশি গর্ববোধ করতেন। কিন্তু প্রায় চার বছরের ব্যবধান প্রধানমন্ত্রী মোদী কংগ্রেসের রাফাল-খোঁচায় নিজেকে ‘চৌকিদার’ ভাবতেই বেশি অভ্যস্ত। অসমের ডিব্রুগড়ে জনসভায় উপস্থিত শ্রোতার উদ্দেশে তিনি বলেন, “এক জন চা-ওয়ালাই অন্য আর এক জন চা-ওয়ালার দুঃখ-যন্ত্রণা অনুভব করতে পারে”।একই সঙ্গে তিনি বলেন, “আমি সারা দেশের কোনায় কোনায় গিয়েছি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ বা অসমে এসে বুঝতে পারি, এখানকার চা-শিল্পের সঙ্গে জড়িত বিশাল সংখ্যক মানুষের জন্য ওরা (বিজেপি-বিরোধীরা) কিছুই ভাবে না”। আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, “চা-শ্রমিকরা ন্যুনতম সুযোগ-সুবিধাগুলি থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন”।