হায়দরাবাদ : শরীরে কাপড়ের লেশমাত্র নেই, নগ্ন দেহ রক্তে মাখামাখি। হাত, পা, মুখ থেকে গলগল করে রক্ত বেরিয়ে রাস্তায় মিশেছে। তার সামনেই ব্লেড হাতে দাঁড়িয়ে এক যুবক। তার চোখ লাল, মত্ত অবস্থায় মুখে অশ্লীল কথার তুবড়ি। এমন ভয়ানক দৃশ্য থেকে শিউরে উঠেছিলেন স্থানীয়রা।ঘটনাটি ঘটেছে তেলেঙ্গানার রাজধানী হায়দরাবাদের লোয়ার ট্যাঙ্ক বাঁধ এলাকার ডি বি আর মিল সংলগ্ন জায়গায়। বৃহস্পতিবার ১৬ বছর বয়সী কিশোরীর আর্তনাদ শুনে পথচারীরা ছুটে এসে তাকে বাঁচান। মাদকাসক্ত ওই যুবককে গণপ্রহারের পর পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কিশোরীকে সারা শরীর ব্লেড দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করছিল ওই যুবক। মেয়েটির চিৎকার শুনে তাঁরা যখন ছুটে এসে দেখেন রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারদিক। ব্লেড হাতে তখনও কিশোরীকে আঘাত করে চলেছে ওই যুবক। মুখে গালিগালাজ। শুধু তাই নয়, গোটা ঘটনাটা মোবাইলে ভিডিও করছিল সে। লোকজন দেখেও সে ভয় পায়নি। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, যুবক নেশাগ্রস্ত ছিল। তাকে যখন স্থানীয়রা ধরে ফেলেন সে ঠিকমতো দাঁড়াতেই পারছিল না। গাঁজা ও সেই সঙ্গে অন্য কোনও ড্রাগও নিয়েছিল সে। তার কথাবার্তাও ছিল অসংলগ্ন। যুবককে ধরে বেধড়ক মারতে থাকেন এলাকার লোকজন। খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছয় ঘটনাস্থলে। যুবককে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তকে জেরা করা চলছে। তার নাম, পরিচয় এখনও জানা যায়নি। তার কাছে যে মোবাইল ছিল তাতে মেয়েটির ভিডিও সেভ করা ছিল।
পুলিশ সূত্রে খবর, গান্ধীনগর এলাকার কলেজ, হোস্টেলগুলিতে পড়ুয়াদের মধ্যে নেশার প্রবণতা মাত্রা ছাড়া হয়ে উঠেছে। যথেচ্ছ ভাবে মাদক পাচার চলছে কলেজগুলিতে। অভিযুক্ত যুবক এলাকারই কোনও কলেজের ছাত্র কি না সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মাদক চক্রের সঙ্গে তার কোনও যোগ রয়েছে কি না খোঁজ চলছে তারও। পুলিশ প্রাথমিকভাবে নির্যাতিতা মেয়েটির বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে অপহরণের মামলা দায়ের করে, কিন্তু পরবর্তীতে ধর্ষণ সহ একাধিক বিভাগ যেমন শ্লীলতাহানি, অপ্রাপ্তবয়স্কদের ফৌজদারী, ভয় দেখানো এবং পকসোর (POCSO) অধীনেও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। আইটি অ্যাক্টেও (IT Act) জারি হয়েছে মামলা।
হায়দরাবাদ সেন্ট্রাল জোনের ডিসিপি পি বিশ্ব প্রসাদ জানিয়েছেন, অভিযুক্তের বয়েস ১৯ বছর।মেয়েটির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল তার। ঘটনার দিন সেসময় অভিযুক্ত যুবক অন্য ছেলের সঙ্গে কিশোরীটি সম্পর্ক তৈরি করেছে অভিযোগ জানিয়ে তাকে নগ্ন করে শারীরিক অত্যাচার চালায়। ব্লেড দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে পুরো বিষয়টি ভিডিও করতে থাকে। অত্যাচারিত মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে তার কাছে তা থামানো অনুরোধ জানালেও সে কোন কথা শোনেনি। যুবকটি আটক করে তার মোবাইলে থাকা মেয়েটিকে অত্যাচারের ভিডিও ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, তার একটা কপি সোশ্যাল মিডিয়াতে ততক্ষণে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়াতে কে বা কারা পোস্ট করল তা খোঁজার চেষ্টা করছে পুলিশ।