কলকাতা:তিনি ধর্মনিরপেক্ষ। তিনি সম্প্রীতির পক্ষে। বারবার বলেছেন, ধর্ম যার যার নিজের কিন্তু উৎসব সবার। মঙ্গলবার মারোয়াড়িদের অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে মমতা আরও একবার মনে করিয়ে দিলেন, বিজেপির হিন্দুত্ব নয়, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলার ধর্মেই বিশ্বাসী তিনি।
লোকসভা নির্বাচনের আগে হিন্দি বলয়ে জনসংযোগ বাড়াতে হোলিকেই হাতিয়ার করেছে তৃণমূল৷ তাই মঙ্গলবার নজরুল মঞ্চে মাড়োয়ারি ফেডারেশনের এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এদিনের অনুষ্ঠান থেকে ধর্মীয় ভেদাভেদের রাজনীতির অভিযোগ তুলে গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে সুর চড়ান তিনি৷ নাম না করে তোপ দাগলেন মোদি-অমিত শাহের বিরুদ্ধে৷ দেশের পরিস্থিতি বদলাতে পরিবর্তন প্রয়োজন বলেও জানালেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এ দিনের অনুষ্ঠান থেকে ধর্মীয় ভেদাভেদের রাজনীতির অভিযোগ তুলে গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে সুর চড়ান তিনি৷মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এখানে ঘরে-ঘরে লক্ষ্মীপুজো হয়৷ আমরা ছট পুজো, বুদ্ধপূর্ণিমায় কি ছুটি দিই না? দক্ষিণেশ্বর, তারকেশ্বর মন্দির সাজিয়েছি আমরা৷ দেখে আসুন৷ ওরা আমাকে ধর্ম কী তা শেখাবে?’’
ভোটের আগে অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের দাবিতে সরব হয়েছিল হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি। পুলওয়ামার ঘটনার পর থিতিয়ে গিয়েছে রাম মন্দির ইস্যু। এদিন মমতা কটাক্ষ করেন, একটা রাম মন্দিরও বানাতে পারেনি।রাজ্যে এসে দুর্গা পূজা, সরস্বতী পূজা হয় না বলে মমতা সরকারকে আক্রমণ করেন অমিত শাহ। রাজ্যে সভা করতে এসে অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘বাংলায় যদি সরস্বতী পূজা আর দুর্গা পূজা না হয়, তাহলে কি পাকিস্তানে গিয়ে করতে হবে? আমরা ক্ষমতায় এলে সাড়ম্বরে হবে দুর্গা পূজার বিসর্জন।’এরপর অমিত শাহকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘বাংলার মাটিতে দুর্গা পূজা হয় না, একথা যদি প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে রাজনীতি ছেড়ে দেব।’
মমতার কথায়,”দক্ষিণেশ্বরের উন্নয়ন হয়েছে। আপনারা স্কাইওয়াক দেখে এসেছেন। আগে লোকে বলত সব সাগর বারবার, গঙ্গাসাগর একবার। এখন এখন বলে গঙ্গাসাগর হর বার। মন্দিরও নতুন হয়ে গিয়েছে। কত সুন্দর কাজ হয়েছে”। মোদী-শাহকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ”বাংলায় এসে আঙুল দেখাচ্ছেন, এখানে মমতাদিদি পুজো করতে দেন না। কখনও পুজো করেন? খালি সিঁদূরের তিলক কাটলে পুজো হয় না। পুজোর মন্ত্রের প্রতিযোগিতা হোক। চলে এসো মোদী-শাহ বাবু। দেখি কে কতটা সংস্কৃত মন্ত্র জানে!” হোলির শুভেচ্ছা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘রক্তের হোলি খেলবেন না৷ রঙের হোলি খেলুন৷’’
এদিন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আসুন সবাই মিলে শান্তিতে রঙের উৎসব পালন করি। কেউ যাতে উৎসবের সুযোগ নিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করতে না পারে তা দেখতে হবে।’ সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষের কথা মাথায় রেখে বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার ছুটি দিয়েছে রাজ্য সরকার। তিনি জানান, দুর্গাপুজো থেকে শুরু করে ঈদ বা দোলযাত্রা সমস্ত উৎসবই একই মর্যাদায় পালিত হয় রাজ্যে। আর আগামীদিনেও সেটাই হবে। তাঁর কথায়, ‘আমাদের রাজ্যে যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাতাবরণ আছে তা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।’