রাফাল ইস্যুতে দিনভর উতপ্ত সংসদ,উড়ল কাগজের যুদ্ধবিমান

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

কথা ছিল রাফাল ইস্যু নিয়ে বুধবার আলোচনা হবে। নববর্ষের পর যে সংসদ উতপ্ত হতে চলেছে তা স্পষ্ট হয়ে গেছিলো তখনই। আশঙ্কা সত্যি করে এদিন রাফাল ইস্যুতে পারদ চড়ল পার্লামেন্টের। অধিবেশনের শুরুতেই কংগ্রেস মুখপাত্র একটি অডিও টেপ প্রকাশ করেন। তাতে আওয়াজ শোনা গিয়েছে গোয়ার মুখ্যমন্ত্রীর। তিনি বলছেন,’আমার বেডরুমে রাফালের ফাইল আছে।'(টেপের সত্যতা যাচাই করেনি নিউজ কর্নার)
তা শুনে হইচই পরে যায় রাজ্য – রাজনীতিতে। অক্সিজেন পায় কংগ্রেস।
দুপুরে সংসদে আসেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। ওই টেপ তিনি সংসদে চালিয়ে শোনানোর অনুমতি চান। হইচই শুরু করেন নির্মলা সীতারাম ন, অরুণ জেটলি সহ শাসক দলের নেতারা। ভেসে আসে তির্যক বাক্যবাণ। স্পিকার তাঁদের থামিয়ে দিয়ে রাহুলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেন। তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলেন,’এই অডিও টেপের সত্যতা র দায় কি আপনি নেবেন?’ অল্প থমকে যান কংগ্রেস সভাপতি। দায় নিতে রাজি না হতেই আসরে নেমে পড়ে শাসক শিবির। অরুণ জেটলি বলতে শুরু করেন,’উনি অডিওর দায় নেবেন কি করে? এসব উনাদের ই বানানো।’স্পিকারের কাছে দাবি জানান,টেপ ভুয়ো হলে বহিষ্কার করতে হবে রাহুলকে। থমকে গেলেও আক্রমণের পথ থেকে সরে আসেননি সনিয়া তনয়। মঙ্গলবার ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের টেলিভিশন ভার্সনে নরেন্দ্র মোদী বলেছেন,কেউ তাঁকে রাফাল নিয়ে প্রশ্ন করেননি। সেই প্রসঙ্গ টেনে রাহুল এদিন বলেন, সারা দেশ রাফাল নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। একই সঙ্গে খোঁচা, ‘প্রধানমন্ত্রী ৯৫ মিনিট ধরে ‘ফিক্সড’ ইন্টারভিউ দিতে পারেন। কিন্তু সংসদে এসে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন না। আসলে সংসদে এসে উত্তর দেওয়ার সাহসই নেই প্রধানমন্ত্রীর।’
এদিন বক্তব্য দিতে উঠে নরেন্দ্র মোদিকে সরাসরি আক্রমণ করেন রাহুল। তিনি বলেন,‘গোটা দেশ নরেন্দ্র মোদিকে তিনটি প্রশ্ন করছে। প্রথম প্রশ্ন, কারা রাফালের চুক্তি বদলে দিল। সেনার তো ১২৬টি যুদ্ধবিমান দরকার ছিল, আপনারা কেন মাত্র ২৬টি যুদ্ধবিমান কিনছেন। তবে, কী সেনার প্রয়োজন কমে গেল। বায়ুসেনা কী আপনাদের জানিয়েছে তাদের অত যুদ্ধবিমানের প্রয়োজন নেই?’
দ্বিতীয় প্রশ্ন অবশ্যই দাম নিয়ে,’ইউপিএ আমলের পাঁচশো কোটির ফাইটার জেট আপনাদের আমলে ১৬০০ কোটিতে কেন কেনা হচ্ছে? প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের আধিকারিকরা এই চুক্তিতে আপত্তি জানিয়েছিলেন, সেই আপত্তি আপনারা মানেননি কেন?’
রাহুলের তৃতীয় প্রশ্ন,’কেন অনিল আম্বানির মতো একজন ব্যর্থ শিল্পপতিকে রাফালের বরাত দেওয়া হল। চুক্তি পাওয়ার দশদিন আগে তৈরি হওয়া সংস্থা কেন বরাত পেল, সরকারি সংস্থা হ্যালকে কেন বঞ্চিত করা হল।’

সেই প্রসঙ্গ তুলতে গিয়েই বাধা পান রাহুল। স্পিকার স্মরণ করিয়ে দিলেন,সেই প্রসঙ্গ তুলতে গিয়েই বাধা পান রাহুল। স্পিকার স্মরণ করিয়ে দিলেন,’অনিল অম্বানী সংসদের সদস্য নন। তাই তাঁর নাম নেওয়া যাবে না।’ তবে সামলে নিলেন দক্ষভাবে এবং সূক্ষ্ম খোঁচায়। স্পিকারকে প্রশ্ন করে বসলেন,’আমি কি ‘অঅ’ (AA) ব্যবহার করতে পারি?’ বলা বাহুল্য এই ‘অঅ’ আসলে অনিল অম্বানীর নাম পদবীর আদ্যক্ষর। একই সঙ্গে সূক্ষ্ম খোঁচা,’অনিল অম্বানী কি বিজেপির সদস্য ম্যাম?’ নাছোড় রাহুলকে অবশেষে সম্মতি দিলেন স্পিকার । কিন্তু চেপে ধরলেন অরুণ জেটলি। বললেন, ‘পুরো নাম ব্যবহার না করে সংক্ষেপ ব্যবহার করেছেন। উনি যখন ছোট তখন বোফর্স কাণ্ডেও এরকম এক ‘কিউ’ উঠে এসেছিল। নোবেল ইন্ডাস্ট্রিজ, যারা বোফর্স তৈরি করেছিল, সেই সংস্থার সিইও তাঁর ডায়েরিতে লিখেছিলেন, যে কোনও মূল্যে ‘কিউ’-এর নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করতে হবে। পরবর্তীকালে সেই ‘কিউ’-এর পক্ষে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য সামনে আসে।’ বুধবারের অধিবেশনে এই পর্বকে ‘অঅ বনাম কিউ’- এর তরজা আখ্যা দিচ্ছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
কংগ্রেস-সহ সব বিরোধীদের দাবি ছিল, যৌথ সংসদীয় কমিটিকে দিয়ে তদন্ত করাতে। তৃণমূলের সৌগত রায় বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মেঘনাদের মতো আড়ালেই থেকে যাচ্ছেন। আর দলের এমনই দুরবস্থা যে, রাজ্যসভা থেকে একজনকে ধার করে এনে বিতর্কের জবাব দিতে হচ্ছে।’ সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিমও জেপিসি-র দাবিতে সরব হন। প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, ‘এটা খুব দুঃখজনক, কংগ্রেসের মতো একটা দলের নেতৃত্বে এমন একজন আছেন যার কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট সম্পর্কে সাধারণ ধারণা নেই। একটা দল, একটা পরিবার আছে যাদের সত্যিকে অস্বীকার করার স্বাভাবিক প্রবণতা আছে। গান্ধী পরিবারের প্রত্যেক সদস্য দুর্নীতিতে জড়িয়ে, বোফর্স, অগস্টা এবং হেরাল্ড মামলায় নাম জড়িয়েছে।’ রাফালের দাম বাড়া নিয়ে যুক্তি দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন,’ ওরা শুধু টাকার হিসেব দেখে, দেশের নিরাপত্তার খেয়াল রাখে না। কংগ্রেস পার্টি দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করেছিল। কংগ্রেস এখন যা বলছে, তাঁর মূল বক্তব্যই সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দিয়েছে।’
কিন্তু দিন ভর রাফাল চর্চার মধ্যেও সবচেয়ে নজরকাড়া ছিল ‘হাওয়াই জাহাজ’ পর্ব। অরুণ জেটলি যখন বক্তব্য রাখছিলেন, তখন কংগ্রেস সাসংদরা কাগজের উড়োজাহাজ ওড়াতে শুরু করলেন। তা দেখেই স্পিকার সুমিত্রা মহাজনের কড়া ধমক, ‘ছোট বেলায় হাওয়াই জাহাজ উড়িয়েছেন। এখনও কি বাচ্চা আছেন?’
পরে সাংবাদিক সম্মেলন করে নরেন্দ্র মোদীকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন রাহুল গান্ধী। তিনি বলেন,‘২০ মিনিট সময় দিন৷ সাহস থাকলে আমার সঙ্গে মুখোমুখি বিতর্কে বসুন৷ তখনই জলের মতো সব পরিস্কার হয়ে যাবে৷’ দিল্লির সাংবাদিক সম্মেলন থেকে রাহুল গান্ধীর ঘোষণা, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে তারাই এই দুর্নীতির তদন্ত করবে৷

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest