কলকাতা: রাম নবমীর শোভাযাত্রাকে ঘিরে গত কয়েক বছর ধরেই নানান কাণ্ড কারখানা চলছে বাংলায়। কখনও সেই শোভাযাত্রায় শিশু-কিশোরের হাতে অস্ত্র ঝলসে উঠছে। কখনও বা দেখা গিয়েছে, প্রতিযোগিতা মূলক রাজনীতির ফাঁদে পা দিয়ে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ তৃণমূলও রামাবলী গলায় জড়িয়ে মিছিলে পা বাড়িয়েছে।
রামনবমীর শোভাযাত্রা এ বারও রাজনীতির উর্ধ্বে রইল না, তা স্পষ্ট হয়ে গেল ট্যাবলোর ছবিতেও। সেই শোভাযাত্রায় আবার পা মেলালেন বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও দলের কেন্দ্রীয় সংগঠনের সচিব রাহুল সিংহরা।
শনিবার উত্তর কলকাতার হরিনাথ দে স্ট্রিটে সকাল থেকে সাজো সাজো রব। রামনবমীর মিছিলের জন্য লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে ট্যাবলো। তারই একেকটিতে নানান স্লোগান লেখা। হোর্ডিংয়ে পিঠ ঢেকে গেছে টেম্পোর। আর সেই হোর্ডিয়ে রামচন্দ্র ও হনুমানের ছবি দিয়ে বড় হরফে স্লোগান লেখা, ‘সামনেই লঙ্কাকাণ্ড, তার পরই রামরাজত্ব’। অন্য ট্যাবলোর হোর্ডিংয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের ছবি লাগানো। তাতে আবার লেখা, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি রামভক্ত। আমরা গর্বিত।’
প্রসঙ্গত, গোটা কলকাতায় ষোলটির বেশি মিছিল হবে বলে আগেই জানিয়েছিল বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের ডাকে। উত্তর থেকে দক্ষিণ সর্বত্র এই মিছিল হবে বলে তারা জানিয়েছে।তবে সেই মিছিলে মোদী-কোবিন্দের ছবি স্বাভাবিক ভাবেই বিতর্ক তৈরি করেছে। এ ব্যাপারে সোজা সাপ্টা উত্তর দিয়েছেন উত্তর কলকাতার বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিনহা। তিনি বলেন, “ভারত মানেই রাম। এটাই সংস্কৃতি। ১৩০ কোটি ভারতবাসী সকলের মনেই রাম বিরাজ করছেন।” তাঁর এও বক্তব্য, “ধর্ম ও রাজনীতি পারস্পরিক সহাবস্থান ভারতীয় সংস্কৃতিতে গোড়া থেকেই রয়েছে। একটি ছাড়া অপরটি পূর্ণ হয় না।” যদিও পর্যবেক্ষকদের মতে, এ সব গোল গোল কথা অর্থহীন। এ বার রাম নবমী পড়েছে ভোটের মাঝে। তাই ধর্মীয় মেরুকরণের সবরকম চেষ্টা করছে গেরুয়া শিবির। লঙ্কাকাণ্ড বলতে হয়তো লোকসভা ভোটকেই বোঝাতে চাইছে ওঁরা। এবং এও চাইছেন, রাজ্যে তৃণমূল সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে সংখ্যাগুরুদের একাংশের ভাবাবেগে আঘাত লেগেছে বলে রব উঠেছে, তার পূর্ণ সুবিধা নিতে।
শনিবার সকালে খড়্গপুরে রামনবমী উপলক্ষে এক আয়োজিত মিছিলে যোগ দেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি। সেখানেই গদা এবং তলোয়ার নিয়ে হাঁটেনও তিনি। রামনবমীর মিছিল বা অনুষ্ঠান ঘিরে কোনও রকম অশান্তি যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে আগেই সতর্ক করেছিল নির্বাচন কমিশন।জেলায় জেলায় কড়া নজরদারির নির্দেশও দিয়েছিল।তা সত্ত্বেও খড়্গপুরে অস্ত্র হাত কী ভাবে বিজেপি মিছিল করল, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস।তবে বিষয়টি নিয়ে মোটেই বিচলিত নন রাজ্য বিজেপির সভাপতি। রাম নবমীর সঙ্গে নির্বাচনের কোনও সম্পর্ক নেই বলে তাঁর ঘনিষ্ঠরা দাবি করছেন। বিজেপির দাবি, প্রতি বছরই রামনবমীতে প্রতীকী অস্ত্র নিয়ে মিছিল হয়।এ বারও হয়েছে।তাতে আচরণবিধি লঙ্ঘনের কিছু নেই।অস্ত্র নিয়ে মিছিল করার ব্যাপারে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে দিলীপবাবু বলেন, “আমরা এটা করব। যাদের অসুবিধে হচ্ছে তারা ভাবনা বদল করুক।”