#নয়াদিল্লি: সংখ্যার জোরে লোকসভায় তিন তালাক বিল পাশ করাল মোদী সরকার। বৃহস্পতিবার প্রায় দিনভর বিতর্কে কংগ্রেস, তৃণমূল, বিজেডি-সহ অধিকাংশ বিরোধী দল ওই বিলের বিরোধিতা করলেও ধ্বনি ভোটে পাশ হয়ে গিয়েছে তিন তালাক বিল। ধ্বনি ভোটে খারিজ হয়ে গিয়েছে আসাদউদ্দিন ওয়েইসির আনা সংশোধনীও। ওয়াকআউট করেছে তৃণমূল, বিজেডি সাংসদরা। যদিও রাজ্যসভায় এই বিল পাশ হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
আইনমন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ এদিন লোকসভায় বিলটি পেশ করে বলেন, লিঙ্গসাম্য ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে এই বিলটি পাশ হওয়া প্রয়োজন। ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট তাৎক্ষণিক তিন তালাকের বিরুদ্ধে রায় দেওয়া সত্ত্বেও এই প্রথা বন্ধ হয়নি। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ২০১৭ সালের পরে তাৎক্ষণিক তিন তালাক নিয়ে ৫৭৪ টি মামলা হয়েছে।এর আগের দফায় মোদী সরকার লোকসভায় তাৎক্ষণিক তিন তালাক বিল পাশ করাতে পারেনি। সেজন্য অধ্যাদেশ জারি করে ওই প্রথা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এদিন যে বিলটি লোকসভায় পেশ করা হয়েছে, তার নাম মুসলিম উইমেন (প্রোটেকশন অব রাইটস অন ম্যারেজ) বিল, ২০১৯।
রবিশংকর প্রসাদ বলেন, নতুন আইনের যাতে অপব্যবহার না হয়, সেজন্য কয়েকটি ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিলে বলা হয়েছে, তাৎক্ষণিক তিন তালাক দেওয়া জামিন অযোগ্য অপরাধ। কিন্তু বিচার শুরু হওয়ার আগে অভিযুক্ত ব্যক্তি বিচারকের কাছে জামিন চাইতে পারেন। বিচারক স্ত্রীর কথা শুনে জামিন দিতে পারবেন। এদিন বিলটির বিরোধিতা করেন এআইএমআইএম সাংসদ আসাউদ্দিন ওয়াইসি। তাঁর যুক্তি, স্বামী জেলে থাকলে খোরপোষ দেবেন কীভাবে। ৩ বছর জেল খাটার পর স্ত্রীকে গ্রহণ করবেন না স্বামী। তাছাড়া এই বিলে কেবল মুসলিম মহিলাদেরই সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য ধর্মের মানুষও স্ত্রীকে পরিত্যাগ করেন।
ফৌজদারি বিধি দণ্ডবিধি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে তৃণমূলও।দলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ওয়াকআউট করেন সাংসদরা। বিলের বিরোধিতা করে ওয়াকআউটে শামিল হন বিজেডি সাংসদরাও। তেলুগু দেশম পার্টির জয়দেব গাল্লার প্রশ্ন, ‘‘হিন্দু আইনে বিবাহ-বিচ্ছেদ ফৌজদারি অপরাধ নয়, খ্রিস্ট ধর্মেও নয়, তাহলে শুধুমাত্র মুসলিম আইনেই কেন হবে।’’বিলটিকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবিও ওঠে বিরোধী শিবির থেকে।
কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ বলেন, লোকসভায় এনডিএ-র যথেষ্ট গরিষ্ঠতা আছে ঠিকই, কিন্তু তার মানে এই নয় যে, সরকার সংসদীয় কমিটিকে এড়িয়ে যাবে। সেই কমিটিতেই এই ধরনের বিতর্কিত বিল নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত। তাঁর দাবি, ধর্ম ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে মহিলাদের সুরক্ষার জন্য আইন করা হোক। দিনভর বিতর্কের শেষে স্পিকার ধ্বনি ভোটে পাশ হয়ে যায় তিন তালাক বিল। আগামিকাল শুক্রবারই রাজ্যসভায় পেশ হতে পারে এই বিল। তবে লোকসভার মতো রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই বিজেপির। তাই বিরোধীদের সমর্থন ছাড়া কার্যত বিল পাশ কার্যত অসম্ভব।