#নয়াদিল্লি: কংগ্রেস সভাপতি পদে আর থাকতে চান না, লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পরেই তা জানিয়ে দিয়েছিলেন। তার পরেও বেশ কয়েক বার বুঝিয়ে দিয়েছেন, সিদ্ধান্ত বদলাতে চান না। বুধবার, টুইটে তাঁর ইস্তফাপত্রটিও দিয়ে দিলেন রাহুল গান্ধী। আর দলের ওয়ার্কিং কমিটিকে বললেন, দেরি না করে দলের নতুন নেতা বেছে নিতে।
এ দিন রাহুল বলেন, ‘‘আর দেরি না করে খুব দ্রুত নতুন সভাপতি বেছে নিক কংগ্রেস। দলের ওয়ার্কিং কমিটি (সিডব্লিউসি) এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য শীঘ্র বৈঠকে বসুক। আমি এই প্রক্রিয়াটায় আর থাকতে চাই না। ইস্তফা দিয়েছি ইতিমধ্যেই। আমি আর সভাপতি নই।’’ ও দিকে কংগ্রেসের শীর্ষ স্তরের কয়েকটি সূত্রের খবর, নেতা বেছে নিতে আর এক সপ্তাহের মধ্যেই বৈঠকে বসছে দলের ওয়ার্কিং কমিটি।
এদিন চার পাতার ইস্তফাপত্রের কপি টুইট করে প্রথম খবরটি প্রকাশ্যে আনেন রাহুল গান্ধী নিজেই৷ কংগ্রেস সভাপতি হিসাবে কাজ করতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান বলে জানান তিনি৷ ইস্তফাপত্রে তিনি বলেন,‘‘ উনিশের নির্বাচনী ব্যর্থতার জন্য আমিই দায়ী। দলের ভবিষ্যতের জন্যই দায়বদ্ধতা সুনিশ্চিত করা প্রয়োজন। কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে সেই কারণেই ইস্তফা দিয়েছি।দলকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে উনিশের ভোট-ব্যর্থতার জন্য অসংখ্য লোককে দায়ী করা দরকার। নিজে দায় স্বীকার না করে অন্যকে দায়ী করা যায় না।’’
‘‘দলের অনেক নেতা আমাকে বলেছিলেন পরবর্তী সভাপতি-র নাম প্রস্তাব করতে। সেটা ঠিক হবে না। আমি বিশ্বাস করি এ ব্যাপারে দল সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম। দলের নেতারা এমন একজনকে সভাপতি পদে নির্বাচিত করবেন, যিনি সাহস, ভালবাসা আর নিষ্ঠার সঙ্গে কংগ্রেসকে নেতৃত্ব দেবেন। আমার রাজনৈতিক লড়াই কখনও সহজ ছিল না। বিজেপি-র বিরুদ্ধে আমার কোনও রাগ বা ঘৃণা নেই। কিন্তু ওরা যে ভাবে ভারত-কে দেখে, তাতে আমার দেহের প্রতিটি জীবন্ত কোষের আপত্তি রয়েছে। ওরা যেখানে ফারাক খোঁজে, আমি খুঁজি সামঞ্জস্য। ওঁরা যেখানে দেখে ঘৃণা, আমি দেখি ভালবাসা। আমি প্রধানমন্ত্রী ও আরএসএসের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। সেই লড়াই থেকে সরে আসছি না। কারণ, দেশ ও সংবিধানের উপর ক্রমাগত যে আঘাত হানা চলছে তাতে সৌভ্রাতৃত্বের বাতাবরণের জন্য সংকট তৈরি হয়েছে। কংগ্রেসের এক জন অনুগত সৈনিক হিসাবে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত এর বিরুদ্ধে লড়াই করব।’’
It is an honour for me to serve the Congress Party, whose values and ideals have served as the lifeblood of our beautiful nation.
I owe the country and my organisation a debt of tremendous gratitude and love.
Jai Hind ?? pic.twitter.com/WWGYt5YG4V
— Rahul Gandhi (@RahulGandhi) July 3, 2019
‘‘দেশের প্রতিষ্ঠানগুলি নিরপেক্ষতা বজায় রাখলে তবেই সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন সম্ভব। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা এবং নির্বাচন কমিশনের কাজের স্বচ্ছতা না থাকলে ভোট সুষ্ঠু হতে পারে না। আর্থিক রসদের উপর কোনও একটি রাজনৈতিক দলের একচেটিয়া অধিকার থাকলেও ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয়। উনিশের ভোটে কোনও রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে লড়িনি। বরং আমরা লড়েছি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান বিরোধীদের খর্ব করার চেষ্টা করেছে। প্রাতিষ্ঠানিক নিরপেক্ষতাই অস্তিত্ব হারিয়েছে।’’
এই নির্বাচনের ফলাফল আগামী দিনে ভারতকে কী কী দিতে পারে আরও বেশি পরিমাণে, ইস্তফাপত্রে তারও উল্লেখ করেছেন রাহুল। লিখেছেন, ‘‘এই ক্ষমতাদখল (দ্বিতীয় মোদী সরকার) দেশজুড়ে হিংসাকে পৌঁছে দেবে এমন এক মাত্রায়, যা আমরা ভাবতেও পারছি না। তা দেশের দুর্দশা আরও বাড়াবে। কৃষক, বেকার, মহিলা, উপজাতি, দলিত ও সংখ্যালঘুরাই তার শিকার হবেন সবচেয়ে বেশি।প্রধানমন্ত্রী ভোটে জিতেছেন ঠিকই। কোনও অর্থ এবং প্রচারের ঘনঘটা সত্যিকে লুকিয়ে রাখতে পারবে না। কংগ্রেসই আমার শরীরের রক্তস্রোত। আজীবন তাই থাকবে।’’