সপরিবারে আত্মহতার চেষ্টা গরফায়

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

সপরিবারে আত্মহত্যার চেষ্টা একই পরিবারের তিনজনের৷ তাদের মধ্যে এক জনের মৃত্যু হয়েছে৷ মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে গরফার পূর্বাচলে। বুধবার দুপুরে বহুতলের বাসিন্দারা পচা গন্ধ পান। গন্ধের উৎস খুঁজে পান এক তলার ফ্ল্যাটে। বার বার ফ্ল্যাটের দরজায় ঘা দিয়ে বা কলিং বেল বাজিয়েও কারওর সাড়া না মেলায় ফ্ল্যাটের জানলা দিয়ে উঁকি মারেন প্রতিবেশীরা। ভিতরে দেখেন, ফ্ল্যাটের বাসিন্দা বাসন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিথর দেহ পড়ে রয়েছে। তার পাশেই পড়ে আছেন বাসন্তীর মেয়ে অনিন্দিতা এবং তাঁর ১৫ বছরের ছেলে ঋষভ। সঙ্গে সঙ্গে গরফা থানায় খবর দেন তাঁরা। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে তিনজনকেই উদ্ধার করে নিয়ে যায় এম আর বাঙুর হাসপাতালে। সেখানে বাসন্তীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। বাকি দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাঁরা এ-ও জানিয়েছেন, বাসন্তীর দেহে পচন ধরে গিয়েছিল। চিকিৎসকদের সঙ্গে পুলিশ কথা বলে জানতে পারে, ঘুমের ওষুধ খেয়েই আত্মহননের চেষ্টা করেছিলেন তাঁরা। এই পদক্ষেপ করার আগে কয়েকদিন খাওয়া-দাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিলেন তাঁরা বলে অনুমান।
পুলিশ ওই ফ্ল্যাটে তল্লাশি করতে গিয়ে বাংলায় লেখা একটি সুইসাইড নোটের হদিশ পান। নোটটিতে বাসন্তী এবং অনিন্দিতার সই রয়েছে। ২৯ ডিসেম্বর তারিখে অনিন্দিতার লেখা সুইসাইড নোটে পরিবারের আর্থিক অনটন থেকে শুরু করে ছেলে ঋষভের অসুস্থতা এবং অনিন্দিতার দাম্পত্য জীবনের সমস্যার কথা লেখা আছে। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান প্রবীণ ত্রিপাঠি বলেন,’সুইসাইড নোটে বেশ কিছু সমস্যার কথা লেখা আছে। তবে ঠিক কী কারণে আত্মহত্যা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ২০১২ সাল থেকে স্বামী রাজীব মৈত্রর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে অনিন্দিতার। তখন থেকেই মায়ের কাছে মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে থাকেন অনিন্দিতা। তাঁর বাবা ব্যাঙ্কের কর্মী ছিলেন। মা বাসন্তী বাবার পেনশন পেতেন। সেই টাকাতেই চলত তিনজনের সংসার।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্বল বলতে মায়ের কয়েক হাজার টাকা পেনশন। কিন্তু সেই টাকাতে অসুস্থ ছেলের চিকিৎসা করিয়ে সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। তার উপর ভয় ছিল বয়স্ক মা মারা গেলে তার পর সংসার চলবে কোথা থেকে। সেই আশঙ্কাতেই ঘুমের বড়ি খেয়ে ১৫ বছরের ছেলে এবং ৬৫ বছরের মা-কে সঙ্গে নিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেন বছর তেতাল্লিশের মহিলা।অনিন্দিতার প্রতিবেশী সোমা ভট্টাচার্য বলেন,’ শনিবার ২৯ ডিসেম্বর ওরা পিকনিকে যাবেন বলেছিলেন। তার পর আর কাউকে দেখিনি। তবে গত কয়েক মাস ধরে বুঝতে পারছিলাম ওরা আর্থিক সমস্যায় ছিলেন।’ তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ছেলে ঋষভ জন্ম থেকেই অসুস্থ। সেই অসুস্থতার চিকিৎসা করানোর জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সঙ্গতি তাঁদের ছিল না। অন্য এক প্রতিবেশী শুক্লা ভট্টাচার্য বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগেই অনিন্দিতা বাড়ির আসবাবপত্র বিক্রি করার চেষ্টা করছিলেন। বোঝা যাচ্ছিল প্রচণ্ড আর্থিক চাপে রয়েছন।’

গোটা ঘটনায় একটা বিষয়ে খটকা লাগছে তদন্তকারীদের। এক তদন্তকারী বলেন,’ যদি সবাই এক সঙ্গে ঘুমের বড়ি খেয়ে থাকেন তবে বাসন্তীর দেহে পচন ধরে গেল অথচ বাকিদের তেমন কিছু হল না কেন?’ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে ময়না তদন্তে।” তবে তাঁদের প্রাথমিক অনুমান, ঘুমের বড়ি খেলে অনেক সময় বয়স্কদের হৃদযন্ত্রের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে ২৯ তারিখেই বাসন্তীর মৃত্যু হলে তাঁর দেহে পচনের সম্ভবনা রয়েছে। বাকিদের সেই ওষুধ হয়তো ততটা প্রভাব ফেলতে পারেনি।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest