Site icon The News Nest

সৌজন্যে মোদী, বার্ধক্যে সম্রাট শাহজাহানের মতই ‘গৃহবন্দী’ আদবানী

LKAdvani 630 630

নিউজ কর্নার ডেস্ক: রাজনীতি অতি বিষম বস্তু।সম্রাট শাহজাহানকে গৃহবন্দী করে মার্গদর্শক বানিয়েছিলেন পুত্র ঔরঙ্গজেব। ভেবেছিলেন শাহজাহানকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিলে তাতে আখেরে ক্ষতি হবে তাঁরই। ঔরঙ্গজেবের সময় মুঘল সাম্রাজ্য সব থেকে বড় হয়েছিল। একই সঙ্গে মোগল সাম্রাজ্যের পতনের জন্য সব থেকে বেশি দায়ী করা হয় ঔরঙ্গজেবকেই। বহু বছর পর অন্য মোড়কে ফিরে এসেছে সেই ইতিহাস।

প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসার পরে এলকে আদবানী, মুরলী মনোহর যোশীর মত দাপুটে অটল জামানার নেতাদের মার্গদর্শক বানিয়ে নির্বাক করে দেন নরেন্দ্র মোদী। গত পাঁচ বছরে আদবানী সংসদে মাত্র ৩৬৫ শব্দ উচ্চারণ করেছেন। সে সুযোগও তাঁর আর রইল না। এবার নির্বাচনে প্রার্থী করা হয়নি তাঁকে।আদবানীর গত ছয় বারের জেতা গান্ধীনগর লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী হচ্ছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। বিজেপির দাবি ‘লড়তে চাননি’ আদবানী নিজেই। যদিও সেকথা মানতে নারাজ রাজনৈতিক মহল।
নরেন্দ্র মোদী আজ হয়ত বুঝছেন না, ইতিহাস এই ভাবেই ফিরে ফিরে আসে। একসময় ঠিক এই ভাবেই গোটা দেশ দেখেছিল বাজপেয়ী – আদবানীর দাপট। এখন যে দাপট এখন দেখাচ্ছেন অমিত শাহ এবং স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী । এক সময় আদবানীর রথে তোলপাড় হয়েছিল গোটা দেশ। আজ এই রথের রিমেক বানিয়ে পুরনো ভাবমূর্তি ফিরে পেতে মরিয়া বিজেপি। এই ভোটে মোদী সরকারের নীতি হল, হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে মিলবে না টিকিট। সব প্রার্থীদের জয়ী হতে হবে। এযা অত্যন্ত মারাত্মক ধ্বংসাত্মক প্রবণতা গণতন্ত্রের জন্য । এতে লুকিয়ে রয়েছে স্বৈরতন্ত্রের ভয়ংকর ছায়া। যে তন্ত্র কেবলমাত্র জানে ক্ষমতার স্বাদ।আসলে আদবানীর এই পরিণতি শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। পাকিস্তান ফেরত হয়ে আসার পরই তার ‘সংঘ চরিত্রে’ দাগ লেগে ছিল। পাকিস্তান সফরে গিয়ে তিনি সেখানে একটি শনি মন্দিরের উদ্বোধন করেন। জিন্নাহর উৎকট সমালোচনা না করে তাঁর সম্পর্কে দু একটি নরম কথা বলে বসেছিলেন তিনি। ঠিক একই ভুল করে দল থেকে সরতে হয়েছিল যশবন্ত সিংকে। দেশভাগের উপর একটি নিরপেক্ষ বই লিখে ফেলেন তিনি। যা চায়নি সংঘ। তারপর বৃদ্ধ আদবানী মনে করেছিলেন মোদী জমানায় হয়তো তার ভাগ্যে রাষ্ট্রপতি হওয়ার শিকে ছিঁড়বে। কিন্তু সেটাও হল না। বলা ভালো তা করতে দেওয়া হল না। সিবিআই স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে ফের অযোধ্যা মামলা উসকে তুলল। কেন্দ্রীয় এই সংস্থাটি যে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের আজ্ঞাবহ তা নিয়ে তর্কের দরকার নেই । আদালতে আটকে গেলেন আদবানী। অথচ রাজস্থানের রাজ্যপাল হয়ে বহাল তবিয়তে দিন কাটালেন কল্যান সিংহ। শাহজাহানের বন্দীদশা নিয়ে আবেগঘন নাটক লিখেছেন ডিএল রায় এছাড়াও বহু নাটক রচনা হয়েছে যাতে ভিলেন হিসেবে দেখানো হয়েছে ঔরঙ্গজেবকে। রাজনীতির জন্য ক্ষমতার লোভে তিনি বৃদ্ধ পিতাকে নজরবন্দি করে রেখেছিলেন।একথা বলাই যায় নির্বাচনের টিকিট না দিয়ে শাহজাহানের মতই আদবানীকে ‘গৃহবন্দী’ করে ফেললেন
নরেন্দ্র মোদী।

গুজরাত দাঙ্গার পর যে নরেন্দ্র মোদীর জন্য বার বার ঢাল হয়েছিলেন আদবানী , পরবর্তী কালে তাঁর সঙ্গেই আস্থার সম্পর্কে ঘাটতি তৈরি হয়। তা মাঝে মধ্যে আদবানীর কিছু মন্তব্যেও প্রকট হয়ে পড়ে।সেই কারণে তাঁর ডানা কেটে হয়েছিল আগেই। এবার কেড়ে নেওয়া হল মাটিটুকু।বিজেপির বক্তব্য, জয়ই প্রার্থী করার আসল মাপকাঠি। কিন্তু বিজেপিরই একটি অংশের মতে, গাঁধীনগর আসন ১৯৮৯ সাল থেকে বিজেপির গড়। সেখানে আদবানী জিততে পারতেন না, এ ধারণা ভুল। অমিত যে বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জিতে এসেছেন, সেটিও আডবাণীরই সংসদীয় কেন্দ্রের অধীনে। একথা অস্বীকারের উপায় নেই যে বিজেপির উত্থানের অন্যতম কারিগর হলেন আদবানী। বাজপেয়ীর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পিছনে তাঁর অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু রাজনীতি অতি বিষম বস্তু। নরেন্দ্র মোদী এ মুহূর্তে বিজেপির অন্দরে নিজেকে সর্বেশ্বর বলে প্রমাণ করেছেন তাঁর সময় বিজেপির সাম্রাজ্য সব থেকে বড় হয়েছে। যদিও এর মধ্যে বহু বিরোধীদলের নেতা বিজেপি হয়েছেন। তাঁরা সসম্মানে জায়গা পেয়েছেন বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির মন্ত্রিসভায়।
অবশ্য, গেরুয়া শিবিরের এসব ইতিহাস নিয়ে বিশেষ কাজ নেই। তারা নিজেরাই ইতিহাস লিখতে যথেষ্ট দক্ষ। তাঁরা এমন এক গণতন্ত্রের জয়গান শোনাচ্ছে যেখানে ঘাপটি মেরে রয়েছে সাম্রাজ্যবাদী রাজনীতি। যে মোদীর জামানায় বিজেপি সর্বোচ্চ শিখর ছুঁয়েছে সেই মোদীকেই একদিন হয়তো আদবানী হয়ত বা শাহজাহান হতে হবে। ঈতিশাসইতিহাস ক্ষমা করে না কাউকে। সে কারণেই অতীত সবসময়ই প্রাসঙ্গিক বর্তমানে।

Exit mobile version