#কলকাতা: ‘আজকেই চার ঘণ্টার মধ্যে কাজে যোগ দিতে হবে। না হলে হস্টেল খালি করে দিতে হবে। যারা কাজে যোগ দেবে না তাদের হস্টেলে থাকা চলবে না।’ বৃহস্পতিবার দুপুরে এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়ে বিক্ষোভরত জুনিয়র ডাক্তারদের উদ্দেশ্যে এই হুঁশিয়ারিই দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তিনি আন্দোলকারীদের কড়া বার্তা দিয়ে বলেছেন, ‘মানুষকে পরিষেবা দিতে হবে।পরিষেবা না দিলে ডাক্তার হওয়া যায় না। যারা কাজে যোগ দেবে না তাদের কোনওরকম সাহায্য সরকার করবে না।’
এদিন ১২.৩০ মিনিট নাগাদ এসএসকেএম হাসপাতালে যান মুখ্যমন্ত্রী। গাড়ি থেকে নামতেই তাঁকে ঘিরে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান তুলে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা। সরাসরি চলে যান এমার্জেন্সি বিভাগে। রোগীর আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। বেশ কিছু রোগী দূরদূরান্ত থেকে এসে চিকিৎসা না পেয়ে বসেছিলেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন মমতা। সূত্রের খবর, আজ আন্দোলনের তৃতীয় দিন সকাল ন’টা থেকে এসএসকেএমের আউটডোরের টিকিট দেওয়া শুরু হয়। চিকিৎসাও শুরু হয়। কিন্তু কিছু পরেই তা বন্ধ হয়ে যায়। ক্ষোভে ফেটে পড়েন রোগীরা। এমার্জেন্সি পরিষেবাও না মেলার অভিযোগ ওঠে। এই সময়েই মমতা পৌঁছন সেখানে। এই আন্দোলনের মধ্যে বহিরাগতরা আছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করে এবং আন্দোলনকে ধিক্কার জানিয়ে মমতা বলেছেন, ‘কাজ করতে গিয়ে অনেক পুলিস মারা যান। কিন্তু তাঁরা কখনও স্ট্রাইক করে না।’ এদিনই দুপুর দুটোর মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে পুলিসকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এর মধ্যেই অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। শোনা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী ‘হায় হায়’ স্লোগানও। এক সময় কার্যত জুনিয়র চিকিৎসকরা তাঁকে ঘেরাও করেও রাখেন। দাবি করেন, তাঁরা বিচার চান। চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। তাতে আরও রেগে যান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন হাসপাতালগুলিতে চক্রান্ত চলছে। বহিরাগতরা হাসপাতালে ঢুকে পড়ে হাঙ্গামা বাধাচ্ছে। আন্দোলনকারীদের তরফে জানানো হয়, “মুখ্যমন্ত্রী হুমকি দিয়েছেন। আমরা তা মানি না। আমরা বৈঠকে বসছি। তার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত স্থির করব। তবে আন্দোলন চলবে”।
ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের তরফে তীব্র নিন্দা করা হয় মুখ্যমন্ত্রীর এই আচরণের। জানানো হয়, মুখ্যমন্ত্রী এসএসকেএম-এ গিয়ে শুধু রোগী ও তাদের পরিবারের সঙ্গেই দেখা করে কথা বলেন। আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করেননি তিনি। মাননীয়া এ রাজ্যের অভিভাবিকা। সকলের কথাই সহানুভূতির সঙ্গে শোনার কথা ছিল তাঁর।
গত সোমবার রাতে এনআরএস হাসপাতালে রোগীর মৃত্যু এবং তার জেরে জুনিয়র ডাক্তারদের নিগ্রহের প্রতিবাদে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছিল চিকিৎসক সংগঠন। যার জেরে বিপর্যস্ত রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবা। হাসপাতালের কাজ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসতেই এ দিন এসএসকেএমে যান মুখ্যমন্ত্রী। এদিন মমতা বলেন, “যেটা ঘটেছে সেটা মর্মান্তিক। আমরা কেউ সমর্থন করি না। এ রকম কত ঘটনা ঘটে। রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটলে কেউ এসে বাসে আগুন লাগিয়ে দেয়। লাগানো উচিত নয় তাও। সে রকমই একটা ঘটনা তাৎক্ষণিক উত্তেজনায় ঘটে গেছে। আমি পুলিশ বসিয়েছিলাম। কে সরিয়ে দিয়েছে জানি না। আমি সিপিকে পাঠিয়েছিলাম এনআরএসে। চন্দ্রিমাকে পাঠালাম পরিবহকে দেখতে। আপনারা কেউ জানেন না, আমি ফোন করে কথা বলতে চেয়েছিলাম এনআরএসের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে। চন্দ্রিমা ফোন নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। ওরা কথা বলেনি, এত অডাসিটি।”
তিনি আরও জানান, এক জন চিকিৎসককে তৈরি করতে ২৫ লক্ষ টাকা খরচ হয় সরকারের। যারা বাংলাকে ভালবাসে, তারা বাংলায় কাজ করেন। কিন্তু অনেকেই চলে যান বাইরে। আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “চোট নিয়ে পড়ে আছে এভাবে লোকজন। একটা বাচ্চা পুরুলিয়া থেকে এসেছে পেটে নল নিয়ে। তোমাদের মায়া নেই! আমরা মর্মান্তিক ঘটনাকে সাপোর্ট করি না। অ্যাকশন নিয়েছি। তোমরা কেন ইনঅ্যাকশন করছো!” তাঁর কথায়, “আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করব আমি। দু’পক্ষই মারপিট করেছে। কেন মারপিট হল, দেখতে হবে। কেন লোকটা মারা গেল, সেটাও দেখতে হবে। একটা ইঞ্জেকশনে মারা যাওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, সেটাও খতিয়ে দেখব। আমি সব দিক খতিয়ে দেখে সবাইকে জানাব। এর মধ্যে পুলিশ পিকেট বসিয়ে দেব।”