#ইয়াঙ্গন: টানা ১৬ মাস জেলে কাটানোর পর অবশেষে মুক্তি পেলেন মায়ানমারে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থা রয়টার্সের দুই সাংবাদিক। মুক্তি পাওয়া ওই দুই সাংবাদিকের নাম ওয়া লোনে ও কায় সো ও। মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর অত্যাচারের চিত্র তুলে ধরার জন্যই ওই দু’জনকে শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছিল বলে আন্তর্জাতিক মহলের ধারণা। কিন্তু মায়ানমার সরকারের দাবি, ওই দুই সাংবাদিকের কাছে এমন কিছু সরকারি নথিপত্র ছিল যা সরকারের গোপনীয়তাকে খর্ব করেছে। এই অপরাধে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় লোনে ও সো-কে। সেই সাজা থেকেই এ দিন মুক্তি পেলেন তাঁরা।
২০১৭-এর আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে মায়ানমারের রোহিঙ্গা নিধন চালানো হচ্ছিল নির্বিচারে। চরমপন্থী বৌদ্ধ এবং সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় এই হত্যালীলা চলে বলে অভিযোগ। আন্তর্জাতিক মহলের প্রবল চাপে পড়ে মায়ানমার সরকার। এমনই এক সংকটের মুহূর্তে তদন্তমূলক সাংবাদিকতার কাজে নেমেছিলেন বছর ৩০-এর ওয়া লোন এবং ২৯ বছরের কাইয়া সোই৷ ঘটনাস্থল থেকে রোহিঙ্গা নিধনের দুর্ধর্ষ সব প্রতিবেদন দিচ্ছিলেন তাঁরা।এই খবর করার দোষেই তাঁদের ওপরে রুষ্ট হয় মায়ানমার সরকার এবং তাঁদের জেলের নির্দেশ দেয়। এর প্রতিবাদে গর্জে ওঠে বিভিন্ন সংগঠন। তীব্র নিন্দা করে রয়টার্সও।
এর পরেই শুরু হয় আইনি লড়াই। দুই সাংবাদিকের জামিনের আর্জি বার বার খারিজ করে দেয় ইয়াঙ্গন হাইকোর্ট৷ চলতি বছরের জানুয়ারি, এপ্রিলেও খারিজ হয়ে যায় আবেদন৷ কিন্তু দু’জনের বিরুদ্ধে অপরাধের যথাযথ প্রমাণ জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে৷ শেষ পর্যন্ত সেই প্রমাণের অভাবেই মুক্তি পান ওই দুই তরুণ সাংবাদিক। সাহসী সাংবাদিকতার অবদানের জন্য গত এপ্রিলেই এই দু’জনকে পুলিৎজার পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে।
মুক্তি পাওয়ার পর ইয়াঙ্গনের কুখ্যাত ইনসেন কারাগার থেকে বের হলে তাঁদের ঘিরে ধরেন সাংবাদিকরা। রয়টার্সের প্রধান সম্পাদক স্টিফেন অ্যাডলার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘মায়ানমার আমাদের সাহসী সাংবাদিকদের কারামুক্ত করায় দারুণ খুশি হয়েছি। ৫১১ দিন ধরে কারাবাস করা এই দুই সাংবাদিক সারা বিশ্বে গণমাধ্যম স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। তাঁদের ফিরে আসাকে আমরা স্বাগত জানাই।’’ জেল থেকে বেরনোর পর সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘‘পরিবারের লোকজন ও সহকর্মীদের দেখার জন্য আমি উদগ্রীব। নিউজরুমে ফেরার জন্য আমার আর তর সইছে না।’’