Site icon The News Nest

৮৯ বছর বয়সে মারা গেলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হুসেন মহম্মদ এরশাদ

ershad 1

#ঢাকা: মারা গেলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হুসেন মহম্মদ এরশাদ।তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। রবিবার, ভারতীয় সময় ৭.১৫ নাগাদ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। গত ২৭ জুন থেকে আইসিইউতে ছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ। ফুসফুসে সংক্রমণ, কিডনির জটিলতা-সহ একাধিক অসুখে ভুগছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বার্ধক্যজনিত সমস্যায় গত কয়েক মাস ধরেই কার্যত শয্যাশায়ী ছিলেন এরশাদ। গত মাসের শেষের দিকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদকে ভরতি করা হয় ঢাকার সামরিক হাসপাতালে। রাতে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরের দিন সকালে এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন, যে ফের এরশাদকে ভরতি করতে হয় হাসপাতালে। গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার থেকে লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমে ছিলেন এরশাদ। চিকিৎসকের আশঙ্কা ছিল, তিনি নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত হয়েছেন। শেষপর্যন্ত রবিবার সকাল পৌনে আটটা নাগাদ ঢাকার সামরিক হাসপাতালে প্রয়াত হলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ। তাঁর মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন জাতীয় পার্টি বা জাপ-র সদস্য খালেদ আখতার। তিনি এরশাদের আত্মীয়ও বটে।

১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত ভারতের কোচবিহারে জন্মগ্রহণ করেন এরশাদ। পরে তাঁর পরিবার রংপুরে চলে যায়। সেখানেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন এরশাদ। ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন তিনি। ১৯৫২ সালে পাক সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এরশাদ। পরে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে উন্নীত হন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অধিনায়কের দায়িত্ব ছিল এরশাদের উপরে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে তাঁকে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে নেওয়া হয়। প্রাক্তন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের উদ্যোগে তাঁকে সেনা উপপ্রধানের দায়িত্বে আনা হয়। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর এরশাদকে আনা হয় সেনাপ্রধান পদে। ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে খুন হন জিয়াউর রহমান। এর পেছনে এরশাদের হাত ছিল, অভিযোগ করেছিলেন খালেদা জিয়া।

১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন এরশাদ। ১৯৮৩ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তিনি দেশ শাসন করেন। পরে, রাষ্ট্রপতি আহসানউদ্দিন চৌধুরীকে সরিয়ে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। কিন্তু, দেশবাসীর প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়ে শেষপর্যন্ত পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি তৈরি করেন এরশাদ। ১৯৯১ সালে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। জেলে থাকাকালীনই ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন তিনি। ছ’বছর জেলে থাকার পর, ১৯৯৭ সালের জামিনে মুক্ত হন এরশাদ।

গত বছরের শেষে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের সময়ে প্রথমে আওয়ামি লিগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক হওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল এরশাদের দল। কিন্তু তার পরের দিনই দলের তরফ থেকে জানানো হয় মহাজোটে নয়, বিরোধী দল হিসেবেই থাকতে চায় তারা। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত বাংলাদেশের বিরোধী দলনেতা হিসেবেই ছিলেন এরশাদ।তাঁর মৃত্যুতে শেষ হল বাংলাদেশের ইতিহাসের এক বর্ণময় অধ্যায়ের।

 

Exit mobile version