কলকাতা: পুরভোটের মুখে রাজ্যের বিজেপি কর্মীদের চাঙ্গা করতে অমিত শাহের হাত দিয়ে নতুন কর্মসূচির সূচনা করল রাজ্য বিজেপি। ‘আর নয় অন্যায়’ নামে এই কর্মসূচিতে বাড়াবাড়ি গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের অপশাসনের দিকগুলি তুলে ধরবেন বিজেপি কর্মীরা। সঙ্গে একটি নম্বরে মিস কল দিয়ে রাজ্য সরকারের প্রতি নিজের অনাস্থার কথা নথিভুক্ত করতে পারবেন সাধারণ মানুষ।
আরও পড়ুন: এবার ‘গোলি মারো’ স্লোগান বিজেপি কর্মীদের মুখে, উত্তেজনা কলকাতার রাজপথে
একুশের ফলাফল কী হবে এখনই বলা সম্ভব নয়। কিন্তু হালফিলে দৃশ্যতই ঝিমিয়ে পড়া বিজেপিকে একুশের জন্য প্রস্তুত করতে রবিবাসরীয় দুপুরে তৃণমূল ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চরম রাজনৈতিক আক্রমণ করলেন অমিত শাহ। যে আক্রমণ পুরোদস্তুর কৌশলগত। সে জন্য কখনও দুর্নীতি প্রশ্নে ‘ভাতিজা’ থেকে পঞ্চায়েত প্রধানের প্রসঙ্গ তুললেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। বাংলার অনুন্নয়ন ও উন্নয়নের প্রশ্নে কেন্দ্রের সঙ্গে তৃণমূল সরকারের অসহযোগিতার কথা জানাতে চাইলেন। আবার কখনও রাম মন্দির নির্মাণের কথা টেনে এনে হাত মুঠো করে ধ্বনি তুললেন, ‘জয় জয় শ্রীরাম’। এবং সে সবের সঙ্গেই বাংলার মানুষকে পষ্টাপষ্টি জানিয়ে দিতে চাইলেন, যতই প্রতিবাদ হোক, সিএএ লাগু হবেই।
আরও পড়ুন: CAA লাগু করেই ছাড়ব, শহীদ মিনারের সভায় হুঁশিয়ারি শাহের
উনিশের ভোটে এই বাংলাতেই বিষ্ময়কর ফলাফল হয়েছে বিজেপির। দিদি যখন ৪২টি আসনের মধ্যে ৪২টিই জিতে নেওয়ার প্রত্যয় দেখাচ্ছিলেন, তখন বাংলা থেকে ১৮ টি আসন জিতে নিয়েছিল মোদী-শাহর দল। কিন্তু তার পর থেকে গত সাত-আট মাসে বিজেপির বাড়-বৃদ্ধি বিশেষ দেখা যায়নি। উপনির্বাচনে তিনটি আসনে বিজেপি তো হেরেছেই, সেই সঙ্গে যেন দিশাহীনতা গ্রাস করতে শুরু করেছিল গেরুয়া শিবিরকে। বিশেষ করে তৃণমূল যখন প্রশান্ত কিশোরের মতো ভোট কৌশলীর পরামর্শ নিয়ে একুশের প্রস্তুতিতে নেমে পড়েছে, তখনও বিজেপির ঘর দৃশ্যত অগোছালো। একে নিজেদের মধ্যে গোষ্ঠী কোন্দল, বিবাদ, মন কষাকষি, সেই সঙ্গে নেতৃত্বহীনতার জন্য গোটা দলটাই একাদশীর উপোসের মতো তাকিয়ে ছিল দিল্লির দিকে। মোদী-অমিত শাহ কবে বাংলায় আসবেন, কবে একুশে আঘাত হানার মন্ত্র দেবেন। রবিবার শহিদ মিনারের মঞ্চে দাঁড়িয়ে সেই কাজটাই করতে চাইলেন প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ।
উগ্র মেরুকরণের মন্ত্রও বাংলার গেরুয়া শিবিরের মধ্যে গুঁজে দিতে চান অমিত শাহ। সে জন্য রাম মন্দির নির্মাণের প্রসঙ্গ তোলেন, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বিচারতার বিরুদ্ধে সরব হন, পাশাপাশি তৃণমূলের তুষ্টিকরণের রাজনীতির বিরুদ্ধে চাঁচাছোলা সমালোচনা করেন। তারপর বলেন, বিজেপিকে এবার বছর সময় দিন, কথা দিচ্ছি ফের সোনার বাংলা করে দেব।
এদিন শাহ বলেন, আর নয় অন্যায় অভিযানে বাড়াবাড়ি গিয়ে মানুষের কাছে তৃণমূলের অপশাসন সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরতে হবে। শত বাধা এলেও থেমে থাকলে চলবে না। এই নিয়ে উপস্থিত জনতাকে হিন্দিতে কয়েকটি স্লোগানও মুখস্ত করান শাহ। পাশাপাশি বলেন, এবার থেকে দিদিকে বলোকে ফোন করে বলবেন ‘আর নয় অন্যায়’।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘দিদিকে বলো’-র মাধ্যমে যখন সরকার ও দলের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ প্রশমণে মরিয়া তৃণমূল তখন ‘আর নয় অন্যায়’-এর মাধ্যমে সেই ক্ষোভকে খুঁচিয়ে তুলতে চায় বিজেপি। যে ক্ষোভের ওপর নির্ভর করে ২০২১-এ পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাট দখল করতে চায় তারা। তারই সূচনা হল রবিবার।