লঙ্কাজবা অত্যন্ত পরিচিত ও জনপ্রিয় এক ফুল। ফুল লঙ্কার মতো নিচের দিকে ঝুলে থাকে বলে এর এই নাম। কোনো কোনো এলাকায় একে ‘লঙ্কা ফুল’ হিসেবেও জানে। আদি নিবাস গ্রিস।
লঙ্কাজবা গুল্মজাতীয় বহু বর্ষজীবী ফুলগাছ। উচ্চতা গড়ে ৪ থেকে ৬ ফুট। তাছাড়া উচ্চতা নির্ভর করে ছাঁটাই প্রক্রিয়ার ওপর। প্রয়োজনে ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে গাছের আকার-আকৃতি ছোট-বড় করেও রাখা যায়। গাছ ঝোপালো আকৃতির। শাখা-প্রশাখা ও কাণ্ড মাঝারি শক্ত মানের হয়ে থাকে। পাতা গাঢ় সবুজ রঙের এবং কিনারা করাতের মতো খাঁজকাটা থাকে ও গঠন বর্শাকৃতির। পাতার শিরা-উপশিরা স্পষ্ট। ডাল কাটিংয়ের মাধ্যমে লঙ্কাজবার বংশ বিস্তার করা হয়। ফুলের রং টকটকে লাল এবং নমনীয় কোমল বেশ কয়েকটি পাপড়ির সমন্বয়ে সৃষ্ট এই ফুল। এর অন্য একটি জাত রয়েছে যার রং গোলাপি। তবে লাল রঙের ফুলের দেখা মেলে সর্বত্র। মাঝে ঝুলন্ত পরাগ অবস্থিত। ফুল গন্ধহীন। প্রায় প্রতি শাখা-প্রশাখায় ফুল ধরে। সবুজ পাতার ফাঁকে উঁকি দেওয়া ফুটন্ত ফুল ও ফুলগাছ দেখতে খুবই মনোরম। ফুল সারা বছরব্যাপী ফোটে। তবে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরত্ ও হেমন্ত ঋতুতে গাছে অধিক পরিমাণে ফুল ফুটতে দেখা যায়। লঙ্কাজবা ফুলের রয়েছে নানারকম ভেষজ গুণ। তাই তো লঙ্কাজবার ফুল, পাপড়ি ও গাছের ছাল বিভিন্ন রোগের চিকিত্সায় ব্যবহার লক্ষ করা যায়।
লঙ্কাজবা গাছের চাষের জন্য আর্দ্র মাটি প্রয়োজন। তবে মাটি যাতে বেশী ভিজে কাদা কাদা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর কোনো কারণে মাটি স্যাঁতসেঁতে থাকলে সেই কয়দিন জল দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এছাড়া প্রতিদিন নিয়ম করে জল দেওয়া উচিৎ।
টব..লঙ্কা জবাফুল চাষের জন্য মাঝারি ও বড় সাইজের টব হলে ভাল হয়।
সার মাটি.. যে কোনও মাটিতেই লঙ্কাজবা গাছ জন্মায়। তবে দোঁয়াশ ও বেলে মাটিতে লঙ্কাজবা গাছের ভাল চাষ হয়। আপনি যদি টবে লঙ্কাজবা চাষ করতে চান তাহলে প্রথমেই যেটি করবেন, পরিমান মতো দো-আঁশ বা বেলে মাটি, এর সাথে অল্প লাল সিলেকশন বালি, একমুঠো হাঁড়ের গুঁড়ো, দু’মুঠো ছাই মিশিয়ে নিন। এতে টবের মাটি ভাল থাকবে। এর সঙ্গে কিছুটা পরিমান পাতা পচা সার, গোবর, খৈল ও কিছুটা টিএসপি সার মিশিয়ে মাটি তৈরি করলে ভাল হয়।
সার.. গোবর সার, চাপান সার ও রাসায়নিক সার এই গাছের জন্য ভাল। নিমের গুড়ো খোল, কাঠের ভষ্ম, গুঁড়ো হাড়, ও গোবড় সার মিশিয়ে তৈরী করুণ চাপান সার।
সার প্রদান
- বর্ষাকালে চাপান সার দিতে হবে।
- বর্ষা শুরু হওয়ার পর ১৫-২০ দিন ছাড়া তরল সার দিতে হবে।
আরও পড়ুন: ছাদ বাগানে পুদিনা পাতা চাষ করবেন যেভাবে…
পরিচর্যা
আপনাকে প্রথমে পাট কাঠি,কঞ্চি,শক্ত লাঠি জোগাড় করতে হবে। এরপর এগলি দিয়ে গাছগুলিকে ঠেকনা দিয়ে রাখা যায়। এরপর সার হিসেবে চাপান সার বা তরল সার দিতে হবে। জবা গাছে জল দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে গোড়ায় জল না জমে। মাসে দুবার মাটি খুঁচিয়ে দিতে হবে। মাটি যদি কোনো কারণে স্যাঁতস্যাঁতে হয়, তাহলে কলি ঝরে যাবে, পাতা ঝরে যাবে।
ডাল ছাঁটাই
একটি সতেজ গাছ তৈরির প্রক্রিয়াটি হল গাছটি বড় হলে ডগাটি ছেটে দিতে হবে। এরপর কয়েকদিন পর কান্ডের পাশ থেকে শাখা বের হবে, তাদের মধ্যে কয়েকটি শাখা রেখে বাকীগুলি ছিড়ে ফেলুন। এরপর গাছের গোড়ায় মাটি দিন। সতেজ গাছ রাখতে হলে একটি সোজা শাখা ও ৪-৫ টি পার্শ্ব শাখা রাখতে হবে। গাছের পার্শ্ব কুঁড়িগুলি ছাটলে, অনেক ফুল হবে। বেশী ফুল পেতে হলে গাছের আগা ভেঙ্গে দিন। এতে ঝাকড়ানো গাছ হবে। বর্ষাকালের প্রথমে ও শরৎকালে ডাল ছাঁটতে হবে। ছাঁটাই এর পরে চাউবান্টিয়া পেন্ট ব্যবহার করুন।
লঙ্কাজবা ফুলের পোকামাকড় ও প্রতিকার:
লঙ্কাজবাগাছের ক্ষেত্রে ছত্রাকের আক্রমনের সম্মুখীন হতে হয়। গাছে ছত্রাক/মিলিবাগ আক্রান্ত হলে, ফুলের বোটা নরম হয়ে যায়। এক্ষেত্রে প্রতিমাসে একবার নিয়মিত কীটনাশক স্প্রে করলে ভাল হয়। তবে বড়িতে তৈরী কীটনাশক ব্যবহার করতে পারলে ভাল হয়। পেঁয়াজ,রসুন,আদা,গোল মরিচের পেস্ট সহ ট্রিকস লিকুইড জলে মিশিয়ে স্প্রে করলে কীটনাশকের কাজ হয়। থ্রিপস ভাইরাস আবার জবার কুঁড়ি ঝড়িয়ে দেয়। এতে পাতা কুঁকড়িয়ে যায়। মনোফিল,নিকোটিন সালফেট,রোগার প্রয়োগ করুন।
আরও পড়ুন: Capsicum Plant: ব্যালকনি বা ছাদের টবে সহজেই করে ফেলুন ক্যাপসিকাম চাষ