ক্যাপসিকাম, বেল পেপার, মিষ্টি মরিচ, সিমলা মরিচ – অনেক নামেই ডাকা যায় একে। সারা বিশ্বের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সবজি এটি। নামে মরিচ থাকলেও আসলে এটি এক ধরনের সবজি। আমাদের দেশের প্রচলিত সবজি না হলেও বর্তমানে এর চাহিদা বাড়ছে। মাছ, মাংস, সালাদ, পিজ্জা, বার্গার – অনেক খাবারেই রয়েছে ক্যাপসিকামের ব্যবহার। ক্যাপসিকামের অনেক গুণাগুণের মধ্যে একটি হচ্ছে – এটি শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদানগুলোকে সংযুক্ত হতে বাধা দেয়, অর্থাৎ শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে।
আপনার বেলকনি অথবা ছাদের টবে সহজেই ক্যাপসিকাম ফলিয়ে নিজের ও পরিবারের চাহিদা পূরণ করতে পারেন খুব সহজেই। আসুন জেনে নেই কিভাবে করবেন টবে ক্যাপসিকাম চাষ।
মাটি তৈরি: বেলে দোআঁশ মাটি অথবা দোআঁশ মাটি ক্যাপসিকাম চাষের জন্য উপযুক্ত। গাছ লাগানো অথবা বীজ বপনের পূর্বে মাটি ঝুরঝুরে করে নিন হয় এবং জৈব সার মিশিয়ে নিন। এটি গাছের বৃদ্ধির জন্য জরুরি। খেয়াল রাখবেন মাটিতে যেন ইটের টুকরা, আগাছা, ময়লা – এসব না থাকে।
বীজ সংগ্রহ: ক্যাপসিকাম চাষ করার জন্য বাজার থেকে কেনা ক্যাপসিকাম থেকেই বীজ সংগ্রহ করে নিতে পারেন। আবার বাজারে আলাদাভাবে ক্যাপসিকামের প্যাকেটজাত বীজ কিনতেও পাওয়া যায়। সেগুলোও আনতে পারেন। ক্যাপসিকাম থেকে বীজ সংগ্রহ করতে চাইলে অবশ্যই পরিপক্ক ক্যাপসিকাম থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন।
টব নির্বাচন: বীজ বা চারা সংগ্রহ করার পর ছিদ্রযুক্ত একটি টব বা কন্টেইনার নিন। কন্টেইনার বা টব যে পাত্রই ব্যবহার করবেন, তাতে অবশ্যই অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। নয়ত পানি জমে গাছের গোড়া পচে যাবে।
চারা রোপণ: সাধারনত এক মাস বয়সী চারা রোপণের জন্য উপযুক্ত। ক্যাপসিকাম চাষের জন্য প্রচুর আলো, বাতাস ও প্রখর কিন্তু তাপহীন রোদ উপকারী। তীব্র রোদে চারার ক্ষতি হয়। তাই তাপ কম থাকা অবস্থায় চারা রোপণ করা উচিত। সকালে রোদ ওঠার আগে অথবা বিকেলে রোদের তেজ কমে গেলে চার রোপণ করুন। চারা রোপণের পর নিয়মিত জল দিন, যেন মাটি শুকিয়ে না যায়।
আরও পড়ুন: টবে অ্যালোভেরা চাষ করার পদ্ধতি জেনে নিন…
বীজ বপণ: বীজ দিয়ে ক্যাপসিকাম গাছ করতে চাইলে প্রথমে বীজগুলোকে প্রায় বারোো ঘন্টা জলে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর মাটি একটু খুচিয়ে বুনে দিন। বোনার পরে আর্দ্রতার জন্য প্রয়োজন অনুসারে ঝাঁঝরি দিয়ে অল্প পরিমান জল দিন। বীজ গজাতে সাধারনত তিন থেকে চার দিনের মত সময় লাগে। চারা ছোট অবস্থায় ছায়াযুক্ত স্থানে রাখুন যাতে প্রখর সূর্যালোক বা ঝড়-বৃষ্টিতে চারার ক্ষতি না হয়। চারা একটু বড় হলে শক্ত করে খুঁটি দিয়ে দিন। এতে চারা হেলে পড়ে যাবে না, ভেঙ্গে যাবার ভয় কম থাকবে। গোড়ায় আগাছা থাকলে সেগুলো তুলে ফেলুন। তবে আগাছা তুলতে গিয়ে গাছের শিকড় নষ্ট করে ফেলবেন না।
ক্যাপসিকামের রোগবালাই দমন: প্রায়শই ক্যাপসিকাম গাছে নানান ধরনের পোকামাকড় ও রোগের আক্রমণ ঘটতে দেখা যায়। এদের মধ্যে আছে মিলিবাগ, ছোট শামুক, জাবপোকা, থ্রিপস পোকা, লাল মাকড়, এ্যানথ্রাকনোজ রোগ, ব্লাইট রোগ ইত্যাদি। এসবের আক্রমনে ভয় পাবার কিছুই নেই। গাছে কোনো রোগ বা পোকার আক্রমণ ঘটলে কীটনাশক ব্যবহার করুন। বাজারের রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করতে না চাইলে ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করুন। নিয়মিত গাছে ডিটারজেন্ট মিশ্রিত পানি স্প্রে করুন। লেবুর খোসা, ডিমের খোসা, চা পাতা গুড়ো করে গাছের গোড়ায় দিন। টবের মাটিতে হলুদ গুড়ো বা নিম পাতা গুড়ো ছিটিয়ে দিতে পারেন। এগুলো আপনার গাছকে বিভিন্ন রোগবালাই ও পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করবে।
ক্যাপসিকাম সংগ্রহ: চারার বয়স তিন মাস হলেই ক্যাপসিকাম চারা ফল দিতে শুরু করে। ক্যাপসিকাম চারা মোটামুটি তিন থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত ফসল দেয়। সাধারণত ক্যাপসিকাম সবুজ রঙের থাকতেই পরিপক্ক হয়ে যায়, অর্থাৎ তুলে ফেলার উপযোগী হয়। বেশি পরিপক্ক হলে ক্যাপসিকাম লালচে রঙের হয়ে যায়। ক্যাপসিকাম দীর্ঘদিনের জন্য সংগ্রহ করতে চাইলে সংগ্রহের সময় প্রত্যেকটা ক্যাপসিকামে বোঁটা রেখে দিবেন এবং ঠান্ডা ও ছায়াযুক্ত স্থানে সংরক্ষন করবেন।
আরও পড়ুন: বারান্দায় বাগান করতে চান? অথচ রোদ ঢোকে না, জেনে নিন উপায়