ইঁদপুর: লকডাউনের বাজারে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ এখন পরিচিত শব্দ। কিন্তু তাই বলে ‘ওয়ার্ক ফ্রম ট্রি’! তেমনই কাজের সাক্ষী থাকল জঙ্গলমহলের জেলা বাঁকুড়া।
বাঁকুড়ার ইঁদপুরের আহন্দা গ্রামের বাসিন্দা বছর পঁয়ত্রিশের সুব্রতবাবু লকডাউনে গ্রামের বাড়িতে এসে আটকে পড়েন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ। তবে তাতে কি পড়াশোনা বন্ধ থাকবে? তাই অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার পরিকল্পনা নেন তিনি। কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামে ইন্টারনেট পরিষেবা তো দূর, মোবাইলে নেটওয়ার্কও ঠিকমতো মেলে না। তাঁর দু’টি আলাদা সংস্থার ‘সিম’ থাকলেও একই অবস্থা। তাই বন্ধুদের সঙ্গে পরামর্শ করে গ্রামের মাঠ পেরিয়ে উঁচু নিম গাছে মাচা বেঁধে পড়ানোর প্রস্তুতি নেন। সুব্রতবাবুর কথায়, ‘‘এখান থেকে ভাল সিগন্যাল মেলে। রোজ সকাল থেকে ক্লাস চলছে। কখনও কখনও বিকেলেও ক্লাস থাকে। ছাত্রছাত্রীদের তরফে ভাল সাড়া পাচ্ছি।’’
আরও পড়ুন: করোনার কোপে রোজগার, প্রত্যন্ত এলাকার অভুক্তদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে নব দিগন্ত
প্রতিদিন সকাল সাড়ে ন’টার মধ্যে ল্যাপটপ, মোবাইল, অন্যান্য শিক্ষা সামগ্রী, সামান্য খাবার ও জল নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা উঠে পড়ছেন গাছে। তারপর গাছের উঁচু মগ ডালে মাচার উপর বসে চলছে পড়ানো। এমন ব্যবস্থায় গ্রামের মানুষও কমবেশী সবাই সাহায্যও করছেন তাঁকে। সুব্রতবাবুর প্রতিবেশী শুভজিৎ পতি বলেন, ‘‘গ্রামে নেটওয়ার্ক না থাকা যথেষ্ট দূর্ভাগ্যজনক। কিন্তু চাকরি বজায় রাখতে গেলে ওকে তো পড়াতেই হবে। তাই আমরাই উদ্যোগ নিয়ে নিম গাছের উপর ওই মাচা তৈরি করে দিয়েছি। সেখানে বসে অন্তত কাজটা চালাতে পারছে ও।’’
আর সুব্রতবাবুর নিজের কথায়, ‘‘আমাদের এই এলাকায় প্রায়ই হাতি ঢুকে পড়ে। ফলে গাছের উপর মাচা তৈরি করে হাতি তাড়ানো অনেক পুরনো অভ্যেস। পড়ানোর জন্যেও সেই অভ্যেসটাই কাজে লেগে গেল।’
আরও পড়ুন: ত্রুটিপূর্ণ টেস্ট কিট নিয়ে কেন্দ্রকে তোপ মমতার, বাংলাকে বদনামের অভিযোগ