ওয়েব ডেস্ক: বীরভূমের লাল মাটির স্পর্শ লেগে থাকা, ‘বড়লোকের বিটি লো, লম্বা লম্বা চুল, এমন মাথা বিন্ধে দিব, লাল গেন্দা ফুল।’ একটু ঘষামাজা, ডাকসাইটে অভিনেত্রীর শরীরী আবেদন এবং দুর্বোধ্য শব্দগুচ্ছের ব্যবহার করে বাদশার ‘গেন্দাফুল’ সুপারহিট। কিন্তু কোথাও স্রষ্টার নামটুকু দেওয়ার সৌজন্য দেখায়নি Sony Music India। শুধু লেখা, ‘বাংলা লোকসংগীত।’
আরও পড়ুন: স্মৃতির ঝাঁপি! রামায়ণ, মহাভারতের পর এ বার দূরদর্শনে ফিরছে ‘সার্কাস’, ‘ব্যোমকেশ’ও
১৯৭৬ সালে গানটির রেকর্ডিং করেন স্বপ্না চক্রবর্তী৷ অশোকা রেকর্ড কোম্পানির সেই গান লোকের মুখে মুখে ফিরতে শুরু করে৷ জেতে গোল্ডেন ডিস্ক পুরস্কারও৷ লোকসঙ্গীতের সমঝদার বাদে আমজনতার ক’জন শুনেছেন রতন কাহারের নাম?গানটি ১৯৭২ সালে লিখেছিলেন সেদিনের তরুণ রতন কাহার। তাঁর পরিচয় তিনি নিজেই-‘মু মুখে পান, হাতে চুন, এই নিয়ে মানভূম, আমার ভাদুর বাড়ি, সিউড়ি, জেলা বীরভূম’। ভাদু গানে তাঁর অবাধ বিচরণ। তবে ঝুমুর, লোকগান, প্রভাতী কীর্তনেও রতন কাহারের তুলনা নেই। এমন গুণী মানুষের সঙ্গী কিন্তু নিত্য অভাব। বিঁড়ি বেঁধে সংসার চালিয়েছিলেন। এখন ভরসা বলতে, এদিক-ওদিক দু-চারটে অনু্ষ্ঠান, আর সরকারি ভাতা।
শুনে নিন স্বপ্না চক্রবর্তীর গাওয়া গানটি
গানটি ভারতে ইউটিউবে এক নম্বর ট্রেন্ডিং চলছে এই ভয়াবহ লকডাউনের সময়। বাদশার গানের ইউএসপি একটাই, ‘বড়লোকের বিটি লো, লম্বা লম্বা চুল, এমন মাথা বিন্ধে দিব, লাল গেন্দা ফুল।’ রতন কাহারের লেখা এই লোকগীতিই এখন ভারত কাঁপাচ্ছে। কোটি কোটি টাকা মুনাফা কামাচ্ছে সোনি। অভিনেত্রী জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ ও বাদশার ব্যাঙ্ক ব্যালেন্সও বাড়ল। কী পেলেন রতন কাহার? তাঁর নামটাও নেই। কেন? নাম দিলেই তো রয়্যালটির টাকা দিতে হবে। কোথাকার কোন অজ পাড়াগাঁয়ের শিল্পীকে সম্মান দেবেই বা কেন? যাঁর দিন আনতে পান্তা ফুরোয়, তিনি তো আর স্বত্ত্বাধিকার চেয়ে আদালতে যেতে পারবেন না। তাই শুধু লিখে দেওয়া হল, ‘বাংলার লোকগীতি’। তবে শুধু বাদশা নন, বাংলার বহু শিল্পীই রতন কাহারের গান গেয়ে সুনাম অর্জন করেছেন। কিন্তু, স্রষ্টাকে কৃতিত্ব দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি।
আরও পড়ুন: Corona Outbreak: বন্ধ ত্রাণ শিবির থেকে ফের পোড়ো বাড়িতেই ফিরছেন দিল্লি হিংসার আর্তরা
শুনুন বাদশার সেই বিতর্কিত গান
অন্যদিকে, বাদশা গাইছেন, ‘বডি তেরি মাখান জেইসি/খানে মে বস তু বাটার খায়ে’। বাদশার গানের এই পংক্তি নিয়ে তীব্র আপত্তি উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ‘গেন্দা ফুল’ শুধু জ্যাকলিনের কোমর নাচায়নি। জ্যাকলিনের কোমরের নীচের অংশে ট্যাটু নিয়ে করেছে অরুচিকর রসিকতাও।পুরো শরীরকেন্দ্রিক গান। অশালীন শব্দ। বাদশা জ্যাকলিনের পেটটাকে গিটারের মতো বাজাচ্ছে তো কখনও কোমর নিয়ে মন্তব্য করছে। বাংলার কালজয়ী লোকগান পাঞ্চলাইন হিসেবে কাজ করেছে এই ভিডিয়োয়। নেটাগরিকদের এক অংশের বক্তব্য, ‘এই ফিউডাল, সেক্সুয়াল কমেন্ট এই সময়ে আমরা শুনছি। কেন? বন্ধ হোক এই গান।’
আরও পড়ুন: পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর পুলিশের অত্যাচার, ক্ষোভে ফেটে পড়লেন অনুরাগ কাশ্যপ