ওয়েব ডেস্ক: মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলার একটি ছোট্ট গ্রাম। সুস্বাদু স্ট্রবেরির চাষের জন্যেই খ্যাত সারা দেশে। তবে এবার সম্পূর্ণ অন্য একটি কারণের জন্যে সংবাদ শিরোনামে ভিলার গ্রাম। স্ট্রবেরির বাগানে এবার নতুন সংযোজন, হাজার পনেরো বই। টোকিও, ওয়েলস, ভিক্টোরিয়া, মিনেসোটার মতো শহরে এই ভাবনা নতুন না, কিন্তু খোদ নিজের দেশে বই-পোকাদের কথা ভেবে আস্ত একটা গ্রাম। ভাবা যায়?
সে গ্রাম রয়েছে মহারাষ্ট্রে। মহাবালেশ্বর ও পঞ্চগনির মাঝে সাতারা জেলার ছোট্ট গ্রাম ভিলার। পাহাড়ের কোল ঘেঁষা ভিলার ২০১৭ সালের আগে ছিল নিতান্তই ছাপোষা একটা হিল স্টেশন। স্ট্রবেরি চাষের জন্য ভিলারের নাম জানতেন পর্যটকেরা। তাজা স্ট্রবেরি ক্ষেত দেখতে মাঝে সাঝে ভিন রাজ্যের লোকের আনাগোনা হত এখানে। বদলটা আসে ২০১৭ সালের পর থেকে। সরকারি উদ্যোগে ভিলার গ্রামের খোলনলচেই বদলে যায়। এখন ভিলারের কথা লোকের মুখে মুখে ফেরে। দেশ-বিদেশের পর্যটকদের ভিড়ে এই গ্রাম এখন গোটা বিশ্বের কাছে পরিচিত। আগন্তুকরা বলেন বই-প্রেমীদের গ্রাম, সরকারি ভাষায় ‘দ্য ভিলেজ অব বুকস’ আর স্থানীয়দের কাছে ‘পুস্তকাঞ্চ গাব’, মারাঠি ভাষায় যার অর্থ বইয়ের গ্রাম।
বইয়ের গ্রাম, মানে এক গ্রাম বই। বাড়ির ভিতরে, বাইরে, রাস্তা-ঘাটে, দোকান-বাজারে, গাছের নীচে যেন বইয়ের মেলা। বাড়ির দালানকে ঘিরে তৈরি হয়েছে লাইব্রেরি, পথ চলতে দু’পাশের দেওয়ালে থরে থরে সাজানো বই, বাজারের বাঁক ঘোরার মুখে কাঁচের আলমারিতে সাজানো বই, পথের ধারে ঝুপড়ি দোকানের চালার পাশে সাজানো বই। বই ছাড়া এক মুহুর্ত থাকতে পারেন না এই গ্রামের মানুষ। বই পড়াতেই আনন্দ, বই-ময় জীবন। বইয়ের সঙ্গেই বন্ধুত্ব, বই সেখানে অর্ধেক আকাশ। এমন বই-পাগল গ্রামের বইয়ের চাহিদা মেটাতে উদ্যোগী হয়েছে খোদ রাজ্য সরকার। বইয়ের উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে ভিলারের পর্যটনকেন্দ্র। একচালের ছোট বাড়ি থেকে অট্টালিকা— বই প্রীতিতে কোনও ভেদাভেদ নেই সেখানে। শীতের নরম রোদের মতোই বই প্রেমে মজে সে গ্রামের বাসিন্দারা। অন্ধ সংস্কার আর বিভেদের কালো ধোঁয়া সেখানে নাক গলাতে ভয় পায়।
আরও পড়ুন: বাড়ছে বিপন্নতা: গণমাধ্যমের স্বাধীনতার নিরিখে আরও দু’ধাপ নিচে নামল ভারত
সাহিত্য আর শিল্পকে বোধহয় আলাদা করা যায়নি কোনোদিনই। ভিলারও তার ব্যাতিক্রম নয়। সারা গ্রামে ২৫টা জায়গাকে বেছে নেওয়া হয়েছিল বই-এর ঘর হিসেবে। সেখানে বুঝি যেমন তেমন করে বই রাখা হবে? প্রতিটা বাড়িতে নিজেদের শিল্পকর্মের ছাপ রেখেছেন ৭৫জন শিল্পী। বাড়ির দেওয়াল জুড়ে কোথাও আঁকা হয়েছে মারাঠাদের গৌরব গাঁথা, কোথাও জীবন্ত হয়ে উঠেছে ইতিহাস।
বেশির ভাগ বই ভিলারের নানা পরিবার সরকারকে দান করেছে খুশি মনে। মারাঠি সাহিত্যের পাশাপাশি আগামী দিনে হিন্দি আর ইংরেজি সাহিত্যও স্থান পাবে এই বই-এর গ্রামে, বলছেন বাসিন্দারা। সাকুল্যে ৫০০০ লোকের বাস, অথচ বই রয়েছে ১৫ হাজারের বেশি। ইন্টারনেটের যুগে বই পড়া তো কমেই আসছে ক্রমশ। উপহার হিসেবেও কদর কমেছে। তবু কালো কালো ছাপা অক্ষরগুলো নিয়েই এখনও স্বপ্ন দেখছে কিছু মানুষ।
তবে হ্যাঁ, বই পড়তে হলে ওখানে বসে পড়তে হবে। সব বই পাওয়া যাবে এক্কেবারে বিনামূল্যে। রাস্তায় রাস্তায় চেয়ার, টেবিল, রঙিন ছাতা পেতে দেওয়া হয়েছে। মনের মতো বই বেছে নিয়ে পড়তে শুরু করলেই হল। যতক্ষণ খুশি বই পড়া যাবে, কেউ মানা করবে না। তবে পড়া হয়ে গেলে সঠিক জায়গায় বই ফেরত দিয়ে যেতে হবে পাঠকদের। এটাই নিয়ম। প্রতিটি গ্রন্থাগারের তদারকি করেন গৌরব ধর্মাধিকারি। বললেন, ‘‘কম্পিউটারে প্রতিটি বইয়ের ক্যাটালগ করা আছে। বইয়ের উপর ট্যাগ দিয়ে রাখা আছে, যাতে সেগুলি হারিয়ে না যায়। অনেক দুষ্প্রাপ্য বই আছে গ্রন্থাগারগুলিতে, তাই এই বিশেষ ব্যবস্থা। বর্ষার সময় বইগুলো প্লাস্টিকে মুড়িয়ে রাখা হয় যাতে নষ্ট না হয়ে যায়। প্রতিটি বইকে যত্নে রাখার চেষ্টা করি আমরা।’’
আরও পড়ুন: Ramadan 2020: রইল কিছু শুভেচ্ছা মেসেজ, যা পাঠাতে পারবেন প্রিয়জনদের