ওয়েব ডেস্ক: সত্যজিৎ রায়। নামটাই যথেষ্ট বাঙালিদের কাছে। শুধু বাংলা নয় গোটা দেশের সমস্ত মানুষের মনের মনিকোঠায় যার অবাধ বিচরণ। সেই কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার তথা সাহিত্যিক, সঙ্গীত পরিচালক, চিত্র নাট্যকার, গীতিকার সত্যজিৎ রায়ের আজ জন্মদিন। আজ বাঙালির আবেগের জন্মদিন।
১৯২১ সালের ২ মে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন সত্যজিৎ রায়। ডাকনাম ছিল মাণিক। সেই নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন তিনি। পিতা স্বনামধন্য শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায় ও মাতা সুপ্রভা দেবী। পিতামহ ছিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী। খুব অল্প বয়সেই পিতৃবিয়োগ হওয়ায় অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে কাটে তাঁর শৈশবকাল। ১৯৪০ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএ পাশ করার পর তিনি তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন এক ব্রিটিশ বিজ্ঞাপন কোম্পানির জুনিয়র ভিজুয়ালাইজার হিসেবে।
আরও পড়ুন: অসুস্থতার জল্পনা ওড়ালেন কিম,কারখানা পরিদর্শনে এসে হাসিমুখে তুললেন ফটো
সিগনেট প্রেসে বইয়ের প্রচ্ছদ ডিজাইনের কাজ করতেন তিনি। তখনই হাতে পায় বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালীর ছোটদের সংস্করণ ‘আম আটির ভেঁপু’। সেখান থেকে শুরু পথ চলা। ১৯৫৫ সালের ২৬ শে আগস্ট মুক্তি পায় তাঁর কালজয়ী সিনেমা ‘পথের পাঁচালি’। এরপর ‘অপরাজিত’, ‘পরশ পাথর’, ‘জলসাঘর’, ‘অপুর সংসার’, ‘দেবী’, ‘তিনকন্যা’, ‘অভিযান’, ‘মহানগর’, ‘মহাপুরুষ’, ‘নায়ক’, ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’, ‘অরণ্যের দিন রাত্রি’, ‘সীমাবদ্ধ’, ‘অশনি সংকেত’, ‘সোনার কেল্লা’, ‘জন অরণ্য’, ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ী’, ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’,’ হীরক রাজার দেশে’, ‘ঘরে বাইরে’, ‘গণ শত্রু’, ‘শাখা প্রশাখা’, ‘আগন্তুক’ -এর মতো একের পর এক অনবদ্য সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি সিনেমাপ্রেমীদের। সত্যজিৎ রায় মোট ৩৬ টি ছবি পরিচালনা করেছেন। যার মধ্যে এর মধ্যে ২৯টি ছিল কাহিনিচিত্র, পাঁচটি তথ্যচিত্র ও দু’টি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি। নিজের ছবির অধিকাংশ গান তিনি নিজেই লিখেছেন এবং নিজেই সুর দিয়েছেন।
শুধু চলচ্চিত্রই নয়। সাহিত্য জগতে শিশু ও কিশোরদের জন্য তিনি সৃষ্টি করে গেছেন অসংখ্য ছোটো গল্প। কল্পবিজ্ঞান নিয়ে লেখা তাঁর গল্প গুলো পাঠক হৃদয়ে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। তাঁর সৃষ্টি ‘ফেলুদা’, ‘প্রফেসর শঙ্কু’, ‘তারিণী খুড়ো’ – এর মতো চরিত্রগুলি বাঙালির মনে আজীবন গাঁথা থাকবে।
দেশে বিদেশে সমানভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন সত্যজিৎ। ১৯৯২ সালে সারাজীবনের অসামান্য কাজের জন্য ৬৪ তম একাডেমী পুরস্কার জেতেন তিনি। ‘পথের পাঁচালি’র জন্য মোট ১১ টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন। যার মধ্যে বিশেষ হলো কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাওয়া ‘Best Human Document’ পুরস্কারটি। ১৯৮৪ সালে ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের সর্বোচ্চ সম্মান দাদা সাহেব ফালকে পুরষ্কার দেওয়া হয় তাঁকে। ১৯৯২ সালে ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্ন লাভ করেন সত্যজিৎ রায়।
পৃথিবীতে বাস করে চন্দ্র সূর্য না দেখা আর সত্যজিতের সিনেমা না দেখা দুটোই একই ব্যাপার’_ বিখ্যাত জাপানি পরিচালক কুরোসায়া এভাবেই শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন বন্ধু সত্যজিতকে।
আরও পড়ুন: ক্রমশ চওড়া হচ্ছে করোনার থাবা! দিল্লির সিআরপিএফ ক্যাম্পে ১২২ জন করোনা আক্রান্ত