Today is the 22nd Shravan! 70th death anniversary of Ravi Tagore

আজ ২২শে শ্রাবণ! ৮০তম প্রয়াণ দিবসে ফিরে দেখা রবি ঠাকুরের মৃত্যুচিন্তা

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

‘মরণ রে, তুঁহুঁ মম শ্যামসমান।/মেঘবরণ তুঝ, মেঘজটাজুট,/রক্ত কমলকর, রক্ত অধরপুট/ তাপবিমোচন করুণ কোর তব/মৃত্যু অমৃত করে দান’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনের প্রথম প্রভাতে দাঁড়িয়ে মৃত্যুকে অমৃতের স্বরূপ বলেই আহ্বান করেছিলেন ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলীতে ‘মরণ’ কবিতায়। আবার, ‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে/তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে’ (পূজা-২৪৮)—গানটির আলোকে সহজে অনুমান করা যায় রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুচিন্তায় নান্দনিকতার সফল উপস্থিতি আছে। অসীম প্রতিভাধর রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যকে যেমন বিশ্বস্বীকৃতি এনে দিয়েছেন, তেমনি তার চিন্তার স্তরে স্তরে যে মানবকল্যাণের বিচিত্র দিক প্রতিফলিত, রবীন্দ্র-গবেষণায় এসব দিকও উঠে এসেছে। তবে সুদীর্ঘ সাহিত্যিক জীবনে রবীন্দ্রনাথকে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত ধারণ-লালন করতে হয়েছে। বালক বয়সে মায়ের মৃত্যু এবং পরবর্তীতে সন্তান ও স্ত্রীর অকাল মৃত্যু এর মধ্যে অন্যতম। মৃত্যুর মতো বেদনাবহ ঘটনা যেখানে সমগ্র মানব সত্তাকে উলোট-পালট করে দিতে সক্ষম, সেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একান্ত স্বজন হারিয়েও নিজেকে স্থির রেখেছিলেন। তবে কাব্য-সাহিত্যে কবির ‘মৃত্যু-দর্শন’ নানা অনুষঙ্গে বিকশিত ও সমন্বিত হওয়া থেকে উপলব্ধ হয়, তারও অন্তঃস্থলে প্রচুর ভাংচুর চলেছে। যতই তিনি বেদনাবহ ঘটনাগুলো সসম্মানে আত্মস্থ করে উপেক্ষা করুন না কেন। নিজের জন্মদিনের আড়ম্বর নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় লেখেন—‘খ্যাতির কলবরমুখর প্রাঙ্গণে আমার জন্মদিনের যে আসন পাতা রয়েছে, সেখানে স্থান নিতে আমার মন যায় না। আজ আমার প্রয়োজন স্তব্ধতায় শান্তিতে।’ আবার, নৈবেদ্য কাব্যগ্রন্থে ‘মৃত্যু’ কবিতায় বলেন—

‘মৃত্যু অজ্ঞাত মোর

আজি তার তরে

ক্ষণে ক্ষণে শিহরিয়া কাঁপিতেছি ডরে

এত ভালোবাসি

বলে হয়েছে প্রত্যয়

মৃত্যুরে আমি ভালো

বাসিব নিশ্চয়’

অস্বীকারের সুযোগ নেই, ‘মৃত্যু’ এমনই এক বাস্তব সত্য যে, মৃত্যু সম্পর্কে বিশ্বাসের কোন প্রয়োজন পড়ে না। যদিও মৃত্যু পরবর্তী জীবন নিয়ে নানা কথা প্রচলিত আছে। মৃত্যু পরবর্তী অবস্থা উঁকি দিয়ে কিংবা যন্ত্র দিয়েও অনুভবযোগ্য নয়, বিধায় বিষয়টি নিয়ে নানা কথা-চিন্তন উঠে আসাও স্বাভাবিক। মানুষ সবচাইতে বেশি ভয় করে মৃত্যুকে। তাই সব সময় মৃত্যুকে এড়িয়ে পালিয়ে বেড়াতে চায়। তবুও মৃত্যুকে আলিঙ্গন না করে কোনও উপায় নেই মানুষের।

রবীন্দ্রনাথ মৃত্যু নিয়ে অনেক ভেবেছেন। ‘অল্প বয়স থেকেই মৃত্যুবিরহ কাতর হৃদয়ের একটি আর্তনাদ, এই দুঃখস্বর প্রশ্নরূপে উত্থিত হয়েছে বার বার কিন্তু পরিণত বয়সে বিশেষ করে বিদায়ের কয়েক বছর পূর্ব থেকে মৃত্যু সম্বন্ধে বহু কবিতা লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ—সেগুলি কেবল প্রশ্ন নয়, মানুষের চির-নিরুত্তর কিছু প্রশ্নের উত্তরও তার মধ্যে রয়েছে।’ একবার কঠিন রোগ থেকে মুক্তি লাভের পর একখানা চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘মৃত্যুর ভিতর দিয়ে ফিরে আসা সকলের ভাগ্যে ঘটে না। যদি ঘটে, তবে অন্তত তখনকার মত অহমিকা শিথিল হয়ে আসে কতখানি স্থায়ী হয় বলতে পারিনে। প্রিয়জনের মৃত্যুর পর বৈরাগ্য আসে নিজের মৃত্যুর সময় দেখি যে সব জিনিস অত্যুক্তি করেছে। মৃত্যুর ব্যথা দেখে তাকে যেন অশ্রদ্ধা না করি।’ মৃত্যু বেদনা মানুষকে ক্ষণিকের জন্য হলেও পৃথিবীর প্রতি অনাসক্ত করে তোলে- এ বাস্তবতা ফুটে উঠেছে কবির কথায়। মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর হওয়া উচিত নয় বলে তিনি উপদেশ দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় থ্রিলার লেখক Dan Brown -এর সেরা ৫ বই

জীবনকে আটকে রাখা যাবে না, এই পরম সত্যকে বার বার উপলব্ধিতে এনে রবীন্দ্রনাথ তার রচনায় যে মৃত্যুদর্শন এঁকেছেন, তা কালক্রমে হয়ে উঠেছে নান্দনিক এক জীবনদর্শন। তিনি লিখেছেন, ‘জীবনেরে কে রাখিতে পারে, আকাশের প্রতি তারা ডাকিছে তাহারে।’ তিনি স্বাভাবিকভাবে ঝরে যাওয়ার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেছেন বিভিন্ন লেখায়। এ সব সত্য কবি জীবন দিয়ে বুঝেছেন। তাই তিনি মৃত্যু সম্পর্কে সানাই-এর ‘ক্ষণিক’ কবিতায় লিখেছেন—

‘এ চিকন তব লাবণ্য যবে দেখি

মনে মনে ভাবি একি

ক্ষণিকের পরে অসীমের বরদান

আড়ালে আবার ফিরে নেয় তারে

দিন হলে অবসান।’

কবি যতই পরিণতের দিকে ধাবমান হয়েছেন ততই তার চিন্তার ব্যাপ্তি ও গভীরতাও বেড়েছে। মৃত্যু সম্পর্কে ধারণারও পরিবর্তন ঘটছে। গীতিমাল্যের কবিতায় ইন্দ্রিয় জগত ও ইন্দ্রিয়াতীত জগতের জিজ্ঞাসা ও প্রসঙ্গ বর্ণিত হয়েছে। কবির জিজ্ঞাসা-

‘ওগো পথিক, দিনের শেষে

যাত্রা তোমার কোন্ সে দেশে,

এ পথ গেছে কোন খানে?’

রবীন্দ্রনাথের ‘জীবন-দর্শন’ এর মতো তার ‘মৃত্যু-দর্শন’ও গুরুত্বপূর্ণ। বোধ করি, জীবনের প্রতিটি মাধুর্যমণ্ডিত মুহূর্তেই তিনি পরম মমতায় মৃত্যুর অনিবার্য শূন্যতাকে উপলব্ধি করেছিলেন; তাই ছিন্নপত্রাবলীতে তিনি লিখেছেন—‘ইচ্ছে করে জীবনের প্রত্যেক সূর্যোদয়কে সজ্ঞানভারে অভিবাদন করি এবং প্রত্যেক সূর্যাস্তকে পরিচিত বন্ধুর মতো বিদায় দিই।’

কবির ভাবনা- ‘জীবনকে সত্য বলে জানতে গেলে মৃত্যুর মধ্য দিয়েই তার পরিচয় পেতে হবে। যে মানুষ ভয় পেয়ে মৃত্যুকে এড়িয়ে জীবনকে আঁকড়ে রয়েছে, জীবনের পরে তার যথার্থ শ্রদ্ধা নেই বলে জীবনকে সে পায়নি। যে লোক নিজে এগিয়ে গিয়ে মৃত্যুকে বন্দি করতে ছুটেছে, সে দেখতে পায়, যাকে সে ধরেছে সে মৃত্যুই নয়, সে জীবন’, (ফাল্গুনী, ১৩২২)। রবীন্দ্রনাথ মূলত জীবন অনুসন্ধানের দিকেই গুরুত্বারোপ করেছেন। আর তাই জীবন-মৃত্যুর নিঃশব্দ প্রণয়খেলা কবির কাছে নবজীবন, নবযৌবন লাভের আহ্বান নিয়ে এসেছে।

আরও পড়ুন: Best Bengali Romantic Novels: বাংলা সাহিত্যে ১০ সেরা প্রেমের উপন্যাস (শেষ পর্ব)

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest