নয়াদিল্লি : অযোধ্যা মামলায় শেষপর্যন্ত মধ্যস্থতার পক্ষেই সায় দিলেন শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ৷ এজন্য তিন সদস্যের একটি মধ্যস্থতাকারী প্যানেল নিয়োগ করেছে শীর্ষ আদালত৷ যার মাথায় রয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি ইব্রাহিম খলিফুল্লা৷এদিন শীর্ষ আদালতের তরফে জানানো হয়েছে যে তিন সদস্যের একটি প্যানেল মধ্যস্থতার কাজ করবে। চার সপ্তাহের মধ্যেধ্যস্থতার অগ্রগতি সংক্রান্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। আর আট সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দিতে হবে সুপ্রিম কোর্টে। গোটা প্রক্রিয়াটি চলবে আদালতের নজরদারিতেই।
প্যানেলে রয়েছেন শ্রী শ্রী রবিশংকর ও আইনজীবী শ্রীরাম পঞ্চু৷ সূত্রের খবর, রায়দানের সময় প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ জানিয়েছেন, এই মধ্যস্থতার ফলাফল গোপন রাখতে হবে৷
বিজেপি চেয়েছিল বাবরি মামলার রায় দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে। তারা দ্রুত শুনানির দাবিও জানিয়েছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট আট সপ্তাহ সময় দেওয়ায় স্পষ্ট যে— এবার আর রামমন্দির দিয়ে প্রচার করে কোনও লাভ হবে না বিজেপির। মন্দির আবেগা সামনে রেখে ক্ষমতায় এসেছিল বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার। কিন্তু বাজপেয়ী পারেননি বিতর্কিত জমিতে রামমন্দির বানাতে। ২০১৪-তে এই মন্দির বানানাের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন নরেন্দ্র মােদি। তিনিও বিফল।। গেরুয়া শিবিরের লাগাতার চাপের মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত মােদি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে চলতে হবে। তা ভেঙে কিছু করা যাবে না।
রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ মামলার নিষ্পত্তির লক্ষ্যে মধ্যস্থতাকারী নিয়ােগের পথে আগেই হেঁটেছিল শীর্ষ আদালত। এর আগে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি খেহর অযােধ্যা বিতর্কে মধ্যস্থতা চেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন তাকে ডাকা হলে তিনিও এই মধ্যস্থতায় থাকতে রাজি। কিন্তু সে প্রক্রিয়া বিশেষ এগােয়ানি। বুধবার প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের এজলাসে ছিল বাবরি মামলার শুনানি। রাম জন্মভূমি ও বাবরি মসজিদ সংক্রান্ত ৬০ বছরের পুরনাে মামলার নিষ্পত্তির ব্যাপারে প্রয়ােজনীয় রােডম্যাপ তৈরির প্রস্তুতি নেয় সুপ্রিম কোর্ট। বুধবারই রঞ্জন গগৈয়ের সাংবিধানিক বেঞ্চ বলে, এই মামলাটির মূল ভিত্তি সম্পত্তি নয়। বরং, মধ্যস্থতাই শান্তি বজায় রাখার একমাত্র উপায়। এই মামলায় প্রধান বিচারপতি ছাড়াও সাংবিধানিক বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি এ এস বােদড়ে, বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি আশােক ভূষণ এবং বিচারপতি এস এ নাজির। তাদের মধ্যে অন্যতম প্রবীণ বিচারপতি এ এস বােদড়ের পর্যবেক্ষণ, জমি নয়, বরং রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ মামলা ভাবাবেগ এবং বিশ্বাসের বিষয়। মধ্যস্থতাতে রাজি হন সুন্নি ওয়াকফ বাের্ডের আইনজীবী রাজীব ধাওয়ান। মধ্যস্থতায় রাজি হয়নি হিন্দু মহাসভা। তাদের দাবি, এটা শুধু মামলাকারী দুপক্ষের বিষয় নয়। দুই সম্প্রদায়ের সমস্যা। আমজনতা এই মধ্যস্থতা মানবে না। রামলালার আইনজীবী বলেছিলেন, ‘রামের জন্মস্থানেই মন্দির তৈরি করতে হবে। রাম যে অযােধ্যাতেই জন্ম নিয়েছিলেন, তা নিয়ে কোনও বিবাদ নেই। বিবাদ হল, সেই জন্মস্থান ঠিক কোথায়? রামের জন্মস্থান নিয়ে কোনও মধ্যস্থতা হতে পারে না। বিচারপতি বােদ,ড় বুধবার এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “আমরাও ইতিহাস জানি। অতীতের উপরে আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। কে হানা দিয়েছিল, বাবর কী। করেছিলেন, কে সে সময় রাজা ছিলেন, সেখানে মসজিদ ছিল না মন্দির, সেই ইতিহাসের উপরে আমাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।” আদালতে দু’পক্ষের মধ্যস্থতা দুই সম্প্রদায়ের মানুষ মানবে কি না, তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তুলেছিলেন বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ও। তিনি বলেন, “আমরা কীভাবে মধ্যস্থতার দায় লক্ষ লক্ষ মানুষের উপর চাপিয়ে দেব? এটা ততখানি সরল হবে না। কিন্তু বিচারপতি বােড়দে বলেছিলেন, যখন একপক্ষ একটি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করছে তখন আদালতের লড়াই হােক বা মধ্যস্থতা, তা মানতেই হবে