নয়াদিল্লি: দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি এস মুরলীধরের বদলি নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণের মধ্যেই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল কেন্দ্র। তাদের দাবি, যথাযথ নিয়ম মেনেই বদলি করা হয়েছে বিচারপতিকে। এ ব্যাপারে তিনিও সম্মতি দিয়েছেন।
দিল্লিতে হিংসার আবহে হাইকোর্টের বিচারপতি এস মুরলীধরের বদলি নিয়ে সরগরম জাতীয় রাজনীতি। বিচারপতির বদলির সিদ্ধান্ত ‘দুর্ভাগ্যজনক ও লজ্জাজনক’ বলে সোচ্চার হয়েছেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। এ প্রসঙ্গে টুইটারে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী লিখেছেন, ‘‘মাঝরাতে বিচারপতি মুরলীধরের বদলি বর্তমান পরিস্থিতিতে অবাক করার মতো ঘটনা না হলেও এটা নিঃসন্দেহে দুর্ভাগ্যজনক ও লজ্জার। বিচারব্যবস্থার উপর আস্থা জড়িয়ে রয়েছে লাখ লাখ ভারতীয়র। সরকার বিচারব্যবস্থার মুখ বন্ধ করে তাঁদের বিশ্বাস ভেঙে দিতে চাইছে’’।
The midnight transfer of Justice Muralidhar isn’t shocking given the current dispensation, but it is certianly sad & shameful.
Millions of Indians have faith in a resilient & upright judiciary, the government’s attempts to muzzle justice & break their faith are deplorable. pic.twitter.com/KKt4IeAMyv
— Priyanka Gandhi Vadra (@priyankagandhi) February 27, 2020
টুইট করে রাহুল গান্ধী লিখেছেন, ‘‘সাহসী বিচারপতি লোয়ার কথা মনে পড়ছে, যাঁকে বদলি করা হয়েছিল না’’। উল্লেখ্য, দিল্লিতে হিংসার ঘটনায় উস্কানিমূলক মন্তব্যের পরও কেন বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না, এ প্রশ্নে পুলিশকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি এস মুরলীধর। এরপরই রাতারাতি তাঁকে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টে বদলি করা হয়েছে।
Remembering the brave Judge Loya, who wasn’t transferred.
— Rahul Gandhi (@RahulGandhi) February 27, 2020
বুধবারই দিল্লি হাইকোর্টের শুনানিতে বিচারপতি মুরলীধর ও বিচারপতি তালবন্ত সিংহর ডিভিশন বেঞ্চ উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে হিংসার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকায় তীব্র ক্ষোভপ্রকাশ করে। দিল্লির বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র, কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর, বিজেপি সাংসদ প্রবেশ বর্মা ও বিজেপি বিধায়ক অভয় বর্মার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দেয় ডিভিশন বেঞ্চ।
বিচারপতির বদলি প্রসঙ্গে কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘রাতারাতি বিচারপতি মুরলীধরকে বদলি করা হল। এই নির্লজ্জ আচরণে দেশ হতবাক নয়’’। মোদী-শাহকে বিঁধে সুরজেওয়ালা আরও বলেন, যাঁরা উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছেন, নিপুণ দক্ষতায় তাঁদের আশ্রয় দিচ্ছে মোদী-শাহর সরকার। অন্যদিকে, বিচারপতি মুরলীধরের বদলি পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে কলেজিয়ামের দ্বারস্থ হয়েছে দিল্লি হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন।
এই সব টুইটের পরই ময়দানে নেমে পড়ে বিজেপি। বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ এক টুইট-বার্তায় জানিয়েছেন, মুরলীধরের বদলি কার্যত রুটিন বদলি। ১২ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম এই বদলির নির্দেশ জারি করে। সেই মোতাবেকই কাজ চলছে। মুরলীধরের ‘রুটিন বদলি’ নিয়ে কংগ্রেস রাজনীতি করছে বলে অভিযোগ করে বৃহস্পতিবার একের পর এক টুইট করেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ। তিনি বলেন, “১২.০২.২০২০ তারিখ প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়ামের প্রস্তাবের ভিত্তিতেই সম্মাননীয় বিচারক মুরলীধরের বদলি হয়েছে। বদলির সময় বিচারপতির সম্মতিও গ্রহণ করা হয়েছে। যথাযথ নিয়ম মেনেই এই বদলি হয়েছে।” প্রসাদ আরও বলেন, “একটা রুটিন বদলি নিয়ে রাজনীতি করে কংগ্রেস আবারও প্রমাণ করে দিল যে বিচারব্যবস্থার প্রতি তাদের কদর কতটা কম। দেশের মানুষ কংগ্রেসকে প্রত্যাখ্যান করেছে।”
বুধবার রাত ১১টা নাগাদ রাষ্ট্রপতির তরফে দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি মুরলীধরকে পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টে বদলির নির্দেশ জারি করা হয়। নিয়ম মাফিক বদলির আগে বিচারপতিকে ১৪ দিন সময় দেওয়ার কথা। কিন্তু এই ‘রাতারাতি’ বদলির পিছনে অন্য কারণ বিদ্যমান বলে ময়দানে নেমেছে বিরোধী দলগুলি।