নয়াদিল্লি: করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের প্রায় সব বড় প্রতিষ্ঠানের শেয়ার সূচক নিম্নগামী। এমন পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে যাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভারতীয় সংস্থাগুলির দখল না নিতে পারে, সে বিষয়ে সরকারের নজর রাখা উচিত্। রবিবার এইচডিএফসি-তে চিনের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির পরেই সরকারের উদ্দেশ্যে টুইট করে সতর্কবার্তা দিলেন রাহুল গান্ধী।
এদিন টুইটারে রাহুল লেখেন, “দেশের মন্থর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনেক ভারতীয় প্রতিষ্ঠানতে দূর্বল করে দিয়েছে। ফলে সেগুলিতে অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির জন্য লোভনীয় লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। দেশের এমন সংকটের সময়ে সরকার যেন কোনও মতেই ভারতীয় সংস্থাগুলিতে বিদেশি হস্তক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রণের সুযোগ না দেয়।”
আরও পড়ুন: পাশ দিয়ে যাচ্ছে করোনা সংক্রমিত ব্যক্তি? জানিয়ে দেবে এই মোবাইল অ্যাপ!
গত আর্থিক বছরের শেষে ৩১ মার্চ বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ তথা বিএসই-তে এইচডিএফসি তাদের সংস্থার অংশীদারিত্ব নিয়ে বিবরণ পেশ করেছে তা থেকেই এই তথ্য জানা গিয়েছে। হিসাব মতো এইচডিএফসি-র ১.০১ শতাংশ তথা ১.৭৫ কোটি শেয়ার পিপলস ব্যাঙ্ক অব চায়নার কাছে রয়েছে।
দেশজোড়া লকডাউনের ফলে আম্বানি, আদানি-সহ ভারতের বহুজাতিক কর্পোরেট সংস্থাগুলির লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। অনিল আম্বানী, গৌতম আদানিরা বিশ্বের ধনী ব্যক্তির ১০০ জনের তালিকা থেকেও বেরিয়ে গিয়েছেন। ফলে সংকট কতটা গুরুতর তা স্পষ্ট।
আরও পড়ুন: আগামীকাল সকাল ১০টায় জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা দেবেন প্রধানমন্ত্রী
একই আশঙ্কা করছে স্পেন, ইটালি, জার্মানির মতো দেশও। ওই সমস্ত দেশেও দেখা দিচ্ছে মন্দা। ঋণের ভারে জর্জরিত বহু সংস্থা শেয়ার বিক্রির পথে হাঁটতে পারে। ইউরোপীয় কয়েকটি দেশ মনে করছে, চিন এই সুযোগ নিতে পারে। বকলমে সরকারি অর্থ লগ্নি করে ইউরোপীয় সংস্থাগুলির শেয়ার কিনে নিতে পারে চিনা সংস্থা। সে জন্য চিন সরকার সস্তায় মূলধনও জোগাচ্ছে। তাই প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের নিয়ম বদলে ফেলছে স্পেন, ইটালি, জার্মানির মতো বহু ইউরোপীয় দেশ।
তবে, এই প্রথম এইচডিএফসি-র অংশীদারিত্বে পিপলস ব্যাংক অফ চায়না ভাগ বসাল না। এর আগেও এইচডিএফসি-র ০.৮ শতাংশ অংশীদার ছিল পিপলস ব্যাংক অফ চায়না। এইচডিএফসি-তে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ৭০.৮৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। তার মধ্যে সিঙ্গাপুর সরকারেরও ৩.২৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, এই বিপুল আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি জানা গিয়েছে চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকের হিসাব প্রকাশ্যে আসার পর। যা রীতিমতো উদ্বেগজনক। এই শেয়ার কেনার সময়টি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কারণ ওই শেয়ার কেনা হয়েছে গত ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে মার্চ মাসের মধ্যে। সেই সময় থেকেই এইচডিএফসি লিমিটেডের শেয়ারের দাম প্রায় ৪১ শতাংশ কমে গিয়েছিল।
আরও পড়ুন: সন্তান জন্মের পরই করোনায় আক্রান্ত মা,বন্ধ হতে পারে মেডিক্যালের ইডেন বিল্ডিং
গতকাল দেশের সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সেই ভার্চুয়াল বৈঠকে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। মোদী বলেন, “জান হ্যায় তো জাহান হ্যায়।” যার মোদ্দা কথা, জীবন থাকলে সব থাকবে। ওটাই যদি না থাকে তাহলে আর বাকি কিছুরই গুরুত্ব থাকবে না।
কিন্তু পর্যবেক্ষকদের অনেকের বক্তব্য, সরকারকে মাল্টিটাস্কিং চালিয়ে যেতে হবে। করোনা সংক্রমণ মোকাবিলার পাশাপাশি দেশে অর্থনীতির চাকা ঘোরানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। সেই সঙ্গে এও সুনিশ্চিত করতে হবে যে এই দুর্বল পরিস্থিতির সুযোগ যেন বাইরের কেউ নিতে না পারে।
আরও পড়ুন: জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি নুসরত জাহানের বাবা, আজই করোনা টেস্টের জন্য লালারস সংগ্রহ