উৎসবের বিজ্ঞাপনে হিন্দু-মুসলিম ঐক্য তুলে ধরতে গিয়ে বিপাকে গয়না প্রস্তুতকারী সংস্থা। ‘লভ জিহাদ’ এর তত্ত্ব প্রচার করার অভিযোগ উঠল তাদের বিরুদ্ধে। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের গয়না বয়কট করার ডাকও উঠল। বাধ্য হয়ে বিজ্ঞাপনটি তুলে নিতে বাধ্য হল ওই সংস্থা।
নয়া সদস্য আসবে। সেজন্য মুসলিম পরিবারে দক্ষিণ ভারতীয় রীতিতে সাধ অনুষ্ঠান নিয়ে বিজ্ঞাপন তৈরি করেছিল তানিশক। আর ‘লাভ জিহাদের’ অভিযোগে সেই বিজ্ঞাপনের উপর চটে যায় নেটিজেনদের একাংশ। বিজ্ঞাপন বয়কটের দাবি তোলা হয়। চাপের মুখে সেই বিজ্ঞাপন প্রত্যাহারের পথে হাঁটল গয়না প্রস্তুতকারক সংস্থা।
Please @TanishqJewelry also show an ad where a muslim woman celebrates eid with her hindu in-laws.
Also hire few dozen exxtra security guards around your showrooms and offices because that offense generally tends to become deadly. #BoycottTanishq https://t.co/ImACJ3mFEs
— Maddy (@jai_in_) October 12, 2020
গত ৯ অক্টোবর তানিশকের তরফে ৪৫ সেকেন্ডের একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। ‘একতবাম’-র (একতা) বার্তা দিয়ে সেই বিজ্ঞাপনে দেখানো হয়, চিরাচরিত দক্ষিণ ভারতীয় রীতি মেনে অন্ত্বঃসত্ত্বা বৌমার সাধ ভক্ষণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে একটি মুসলিম পরিবার।
আরও পড়ুন :
ঐক্যই বিজ্ঞাপনটির মূল বিষয়বস্তু ছিল। তাতে দেখানো হয়, মুসলিম পরিবারে বিয়ে হয়ে আসা এক হিন্দু তরুণী গর্ভবতী। হাত ধরে তাঁকে সাধভক্ষণ অনুষ্ঠানে নিয়ে যাচ্ছেন শাশুড়ি। আয়োজন দেখে ওই তরুণী বলেন, ‘আপনাদের তো এ সবের রীতি নেই!’ জবাবে শাশুড়ি বলেন, ‘মেয়েকে খুশি করার রীতি সব জায়গাতেই রয়েছে।’
বিজ্ঞাপনটি সামনে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই দাঁত-নখ বের করে চলে আসে নেটিজেনদের একাংশ। সেই বিজ্ঞাপনে নাকি ‘লাভ জিহাদ’-কে মহিমান্বিত করা হয়েছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা যে শব্দের প্রচলন করেছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, ভালোবাসার আড়ালে হিন্দু মেয়েদের ধর্মান্তকরণ করেন মুসলিমরা। একইসঙ্গে ‘ভুয়ো’ ধর্মনিরপেক্ষতা এবং একটি নির্দিষ্ট ধর্মের সম্প্রদায়ের বিশ্বাসে ‘আঘাত’ করায় তানিশকের সমালোচনা শুরু হয়। টুইটারে শুরু হয় #BoycottTanishq ট্রেন্ডিং।
Why are you showing a Hindu "daughter in law" to a muslim family and glorifying it?
Why dont you show a Muslim daughter in law in your ads with a Hindu family?
Look like you are promoting #LoveJihad & favouring a particular Faith only…#BoycottTanishq
— khemchand sharma #Brajwasi #RadheRadhe (@SharmaKhemchand) October 12, 2020
বিজ্ঞাপনটি যাঁরা তৈরি করেছেন, তাঁদের সন্ত্রাসবাদী বলেও আক্রমণ করেন কঙ্গনা। তিনি লেখেন, ‘সৃজনশীল এই সন্ত্রাসবাদীরে আমাদের অবচেতনে যা ঢুকিয়ে দিতে চাইছে, হিন্দু হিসেবে সে ব্যাপারে আরও সচেতন হতে হবে আমাদের। এ নিয়ে সমালোচনা করতে হবে, বিতর্কে যোগ দিতে হবে, যা কিছু মগজে ছুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে, তা বিচার বিবেচনা করে দেখতে হবে। তবেই আমাদের সভ্যতাকে বাঁচানো সম্ভব।’
https://twitter.com/KanganaTeam/status/1315911856188354562?ref_src=twsrc%5Etfw%7Ctwcamp%5Etweetembed%7Ctwterm%5E1315912815509598208%7Ctwgr%5Eshare_3&ref_url=https%3A%2F%2Fwww.anandabazar.com%2Fnational%2Ftanishq-pulls-down-ekatvam-campaign-due-to-trolling-and-allegations-of-promoting-love-jihad-dgtl-1.1214899
নিজেদের গয়না বিক্রি করতে ওই সংস্থা জিহাদি তাস ব্যবহার করছেন বলেও অভিযোগ করেন নেটাগরিকদের কেউ কেউ। অনেকে আবার প্রশ্ন তোলেন, তথাকথিত ধর্মীয় ঐক্যের বিজ্ঞাপন বা ভিডিয়োয় শুধুমাত্র মুসলিমদেরই মহিমান্বিত করে দেখানো হয় কেন? ওই সংস্থার গয়না বয়কটের ডাক দেন তাঁরা। তাতেই ইউটিউব থেকে বিজ্ঞাপনটি তুলে নেয় ওই সংস্থা।
তবে অনেকেই এই বিজ্ঞাপনের ভূয়ষী প্রশংসা করেন। যেভাবে সেই বিজ্ঞাপনে দু’ধর্মের মানুষের মধ্যে বন্ধন তুলে ধরা হয়েছে, তা প্রকৃত ভারতের ধারণার সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে জানান অনেকেই। বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘হিন্দু-মুসলিম ঐক্য নিয়ে সুন্দর বিজ্ঞাপন তৈরি করায় হিন্দুত্ববাদী ধর্মান্ধরা ওই সংস্থাকে বয়কট করার ডাক দিয়েছে। হিন্দু-মুসলিম ঐক্য যদি এতই বিরক্তিকর লাগে, তা হলে গোটা বিশ্বে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের দীর্ঘজীবী প্রতীক ভারতকে কেন বয়কট করারা ডাক দিচ্ছেন না ওঁরা?’
So Hindutva bigots have called for a boycott of @TanishqJewelry for highlighting Hindu-Muslim unity through this beautiful ad. If Hindu-Muslim “ekatvam” irks them so much, why don’t they boycott the longest surviving symbol of Hindu-Muslim unity in the world — India? pic.twitter.com/cV0LpWzjda
— Shashi Tharoor (@ShashiTharoor) October 13, 2020
সাধারণ মানুষ অনেকেই সংস্থার পাশে দাঁড়িয়েছে। ভিডিওটি তুলে নেওয়ার জন্য সংস্থার ওপর অনেকেই অভিমান প্রকাশ করেছে। এই ধরণের লোকেরা হিন্দু নন। তারা আসলে মানবতার শত্রু। এরা বিদ্বেষী। মৌলবাদী। এদের ধর্ম বলে কিছু নেই। এরা আদ্যোপান্ত ধান্দাবাজ। বর্তমান শাসকদলের প্রশ্রয়ে এরা উৎসাহ পাচ্ছে। নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে শাসকদল এদের প্রশ্রয় দিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকে। তানিষ্কের মত প্রতিষ্ঠানের উচিত হয়নি এদের বিদ্বেষের কথা শুনে ভিডিও সরিয়ে নেওয়া। অন্যায় ওরা করবে। তবে ‘অন্যায় যে সহে তবে ঘৃণা তারে যেন তৃণসম দহে।’ এমন মত পোষন করেছেন অনেকেই।
আরও পড়ুন :