নয়াদিল্লি: আক্রমণ করার সময় কোভিড-১৯ জাত, ধর্ম, গায়ের রঙ, ভাষা দেখে না। তাই এনিয়ে আমাদের আমাদের প্রতিক্রিয়া দেখানোর সময় দেখাতে হবে তা যেন আমাদের ঐক্য ও ভাতৃত্বকে আঘাত না করে। এই সময় আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ।
শনিবারই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে দেশে কোভিড আক্রান্তদের প্রায় এক তৃতীয়াংশ কোনও না কোনও ভাবে তবলিগ জামাতের সঙ্গে সম্পর্কিত।তবলিগ জামাত থেকে সংক্রমণ নিয়ে দেশে চাপান উতোরও শুরু হয়েছে। এরকম এক অবস্থায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
রবিবার ট্যুইটার অ্যাকাউন্টে পোস্ট করে মোদী জানান, তিনি লকডাউনের সময় LinkedIn-এ একটি পোস্ট করে যুব সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিজের ভাবনা শেয়ার করেছেন। প্রধানমন্ত্রী লেখেন, ‘COVID-19-এর সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছে বিশ্ব। ভারতের এনার্জিতে ভরপুর ও সৃজনশীল যুব সম্প্রদায় দেখিয়ে দিতে পারে ভবিষ্যতের পথ। স্বাস্থ্যকর ও উন্নতিপূর্ণ ভবিষ্যত্ নিশ্চিত করতে পথ দেখাতে পারে তারা। লিংকডইনে কয়েকটি ভাবনা শেয়ার করে নিচ্ছি, যেটা তরুণ প্রজন্ম ও পেশাদারদের ভালো লাগবে।’
LinkedIn-এ নমো লিখেছেন, ‘পেশাদারী জীবনকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে করোনাভাইরাস। আজকালকার দিনে বাড়িই নতুন অফিস। নয়া বৈঠকের ঘর হল ইন্টারনেট। কিছুদিনের জন্য অফিসের সহকর্মীরা ইতিহাস…এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছি। বেশিরভাগ বৈঠকই, তা সে সহকর্মী মন্ত্রী, আধিকারিক, বিশ্বনেতা – যার সঙ্গেই হোক হচ্ছে ভিডিয়ো কনফারেন্সিঙের মাধ্যমে। মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকেও তাই হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, অতীতে বিভিন্ন দেশ বা সমাজ একে অপরের মুখোমুখি হয়েছে। কিন্তু এখন আমরা সবাই একই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। ঐক্যই আমাদের ভবিষ্যত। এই মহামারী মোকাবিলায় ভারত গোটা বিশ্বকে পথে দেখাবে।প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, এই শতকের তৃতীয় দশকের শুরুটা খুবই ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে শুরু হল। কোভিড-১৯ অনেক কিছুই ওলটপালট করে দিয়েছে। কোভিড পরবর্তি দুনিয়ার ভারত এক গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হয়ে উঠবে। সেই সুযোকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে।
এই প্রসঙ্গে বিশ্বে বিভিন্ন উপযোগী সামগ্রীর রফতানির ক্ষেত্রেও ভারত বড় মুখ হয়ে উঠতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। মোদী বলেন, “আগে আমরা দেখেছি রাস্তা, ওয়্যারহাউস, বন্দর প্রভৃতি ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা ব্যবহার করা হত। কিন্তু এখন ঘরে বসেই দুনিয়া জুড়ে রফতানির একটা চেন তৈরি করতেও এই পরিকাঠামো কাজে লাগছে।”
আরও পড়ুন: শুধু ‘পুল’ নয়, সংক্রমণ রুখতে রাজ্যের রেড জোনে শুরু হচ্ছে Rapid Test
মোদী আরও জানিয়েছেন, “ফিজিক্যাল ও ভার্চুয়াল সংমিশ্রণে ভারত বিশ্বে রফতানি চেনের প্রধান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্টিত করতে পারে। তাই এই পরিস্থিতিতে আমাদের এই সুযোগটা নিতে হবে। আমি সবাইকে আহ্বান করছি এই বিষয়ে চিন্তাভাবনা করে নিজেদের মতামত জানাতে।”
উত্তরপ্রদেশের একটি হাসপাতাল বিজ্ঞাপন দিয়েছে, মুসলিম রোগীদের কোভিড পরীক্ষার পরই ভর্তি করা হবে। নিজামুদ্দিনের ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক রঙ দেওয়ার হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে একটি মুসলিম সংগঠন। এরকম এক পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী ওই পোস্ট যথেষ্টই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য শুনে বহু মানুষ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারই মাঝে অনেকেই বলেছেন কেবল করোনার বিরুদ্ধে নয়, দাঙ্গাবাজদের বিরুদ্ধেও একইভাবে ঐক্যের বার্তা দিতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে। এ বিপদ আজ না হোক কাল কেটে যাবে। কিন্তু বিদ্বেষের কারবারিরা রয়ে যাবে। যারা করোনার এই আবহে বিশেষ সম্প্রদায়কে দোষারোপ করতে ছাড়ছে না, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা যে কি মূর্তি ধারণ করবে তা কল্পনা করা কঠিন নয়।
আরও পড়ুন: পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজের ব্যবস্থা করতে রাজ্যগুলিকে নির্দেশিকা কেন্দ্রের