চাপা পরে গিয়েছিল করোনায়, নিজামুদ্দিন টেনে এনে গেরুয়া শিবির ফিরিয়ে আনছে CAA-NRC

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

এডুইন তাপস মল্লিক

করোনা ছাড়া এখন কোথাও আর কোনও খবর নেই। আক্রান্ত কত বাড়ল, কিংবা মৃত্যু সংখ্যা বেড়ে কত হল, এই আলোচনা সবখানে। দেশ ও বিদেশের সব সংবাদ মাধ্যমের কাছে বিক্রি করার মত খবর একটাই। কোথাও সভা সমিতি নেই। বয়ানবাজি নেই। সবকিছু যেন কেমন পানসে। এমনই একটা সময়, যখন প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীরা ছাড়া কেউ কোনও কথা বলছেন না। ফলে তেজপাতা সদৃশ নেতারা পড়েছেন বেজায় সংকটে। কোনও দল কাউকে দোষ দিতে পারছে না। কুকথার বন্যা বইছে না। বিশেষ কোনও সম্প্রদায়কে আলাদা করে গালি দেওয়ার বিশেষ সুযোগও মিলছিল না। বিশেষ সম্প্রদায়কে গাল দেওয়ার ফ্রাঞ্চাইজি অবশ্য গেরুয়া পার্টির একচেটে। দিল্লি হিংসার পর সংখ্যালঘু বিশেষ সম্প্রদায়কে খোঁচা দেওয়ার বেশ একটা যুতসই সুযোগ মিলছিল না। কিন্তু কথাতেই আছে, ‘যে খায় চিনি তাকে যোগায় চিন্তামনি’।

নিজামউদ্দিনের ঘটনায় গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছেন সম্বিৎ পাত্ররা। এতদিনে মিলেছে আসল ভিলেন। ওরাই যত নষ্টের গোড়া। ওদের ধম্ম-কম্মের জন্যেই আজ ভারতের এই হাল। কিন্তু প্রশ্ন হল ইতালি, স্পেন কিংবা ট্রাম্প বাবুর দেশেও কি তাবলীগ জামায়াতই যত নষ্টের গোড়া? কিন্তু এসব যুক্তির কথা বলে ওদের দোষ ঢাকতে পারবেন না! ওরা সেই ৪৭-এর আগে থেকে ঝামেলা পাকাচ্ছে। আরে বাবা সেদিনই তো পাকিস্তান গেলে পারতিস! কোনো কথা শোনে না। সবকটা ধর্মান্ধ। আবার বিদেশ থেকে এসেছে সব দাড়ি নাচিয়ে।

আরও পড়ুন: নিজামউদ্দিন: বিদেশিদের কেন আটকানো হয়নি? প্রশ্নের মুখে কেন্দ্র ও দিল্লি সরকারের ভূমিকা

তবে অস্বীকারের উপায় নেই যে নিজামুদ্দিন কান্ড না হলে যেন সবটা কেমন ক্লিশে হয়ে যাচ্ছিল। এ কৃতিত্বও সেই মোদিবাবুরই। উনি দূরদর্শী। আন্তর্জাতিক উড়ান আগেই বন্ধ করে দিলে ব্যাটাদের পাকড়াও করা যেত না। দেখছেন না, গত দুদিনে প্রাইমটাইমে প্রাণ এসেছে। ভক্তরা করোনার থেকেও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে।

দিল্লির নিজামুদ্দিনে ছিল তাবলীগ জামাতের সভা। বিদেশ থেকেও বহু মানুষ এসেছিলেন। উড়ানের মাধ্যমে নিরাপদে দিল্লি এসেছিলেন সকলে । অথচ প্রথম থেকেই জানা ছিল এই অসুখের উৎসস্থল বিদেশ। প্রশ্ন উঠছে যারা নিজামুদ্দিন এসেছিলেন তাঁরা কি অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ছিলেন। যাঁরা হাজির হয়েছিলেন তাদের কি আগেই বাধা দেওয়া হয়েছিল? এর কোনটি যদি করা না হয়ে থাকে তাহলে সে দায় কার? এ কথা জোর গলায় বললে ভক্তরা আহত হবেন। তারা ধরেই নেবেন কেন্দ্রকে দায়ী করতে এসব বলা হচ্ছে। 

এখন দেখা যাক সত্যিই নিজামুদ্দিন যাওয়া তাবলীগের লোকেদের করোনা ছড়ানোর পিছনে দায় কতখানি। ১৩ই মার্চ স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানাল, করোনা ভাইরাস হেল্থ ইমারজেন্সি নয়। ওই দিনই দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাযে ৪০০০ জন ‘মুসলিম’ নিয়ে তাবলীগি জামাত আরম্ভ হল। নিজামুদ্দিনে তাবলীগের সভা শেষ হল ১৫ই মার্চ। করোনা রুখতে ১৬ই মার্চ হিন্দু মহাসভা গোমূত্র পার্টি আয়োজন করল। ওই দিনই দিল্লি সরকার সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধের আদেশ দিল। ১৭ই মার্চ ৪০,০০০ হিন্দু তীর্থযাত্রীদের জমায়েত হল তিরূপতি মন্দিরে। ১৮ মার্চ তারা সেখানেই ছিলেন। ১৯ই মার্চ প্রধানমন্ত্রী জনতা কার্ফু ঘোষণা করলেন। তিরূপতি মন্দির বন্ধ হল। দেশজুড়ে জনতা কার্ফু হল ২২ই মার্চ। ওই দিনই সন্ধেবেলা হাজার হাজার বিজেপি সমর্থকরা পথে ভিড় করে উদ্দাম নৃত্য ও থালা বাজিয়ে কার্ফু সেলিব্রেট করল। ২৫শে মার্চ মোদি সারা ভারত লকডাউনের নির্দেশ দিলনে। ২৬ মার্চ অযোধ্যায় যোগী আদিত্যনাথ রামলালা যাত্রা করলেন লকডাউন ভেঙে। ৩০শে মার্চ সরকারি অপদার্থতার ফলে ২৫ জন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হল। ওই দিনই কাশ্মীরে বৈষ্ণদেবী মন্দিরে ফেঁসে গেল ৫০০ জন হিন্দু তীর্থযাত্রী।৩০শে মার্চ দিল্লির রাজপথে ফেঁসে গেলেন ৫০,০০০ জন পরিযায়ী শ্রমিক।সেদিনই দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাযে আগত ৫ জন জামায়াতির মৃত্যু হল। আর সেদিন থেকেই গোদি মিডিয়া এবং গেরুয়া পার্টির নেতারা প্রচার করতে শুরু করেছে মুসলিম তীর্থযাত্রীরা করোনা ছড়িয়েছে।

আরও পড়ুন: জানেন কি মোবাইল, ঘড়ি, চশমা বা বাজারের ব্যাগ থেকেও ছড়াতে পারে করোনা!

বিজেপির কুচো নেতারা প্রচার শুরু করে দিলো অবিলম্বে দরকার CAA & NRC দরকার। নাহলে আরো বড়ো বিপর্যয় আসবে। তবে একটা আবেদন করতে পারি পাঠকদের, ভোট যাকেই দিন, পছন্দ যাকেই করুন, চেতনা ও বিবেক বন্ধক দেবেন না। ভক্ত না হয়ে নাগরিক হন। তবেই দেশ এগোবে। তা না হলে বিশেষ সম্প্রদায়ের বাপান্তি করে গোমূত্র পার্টি চলবে। সঙ্গে চলবে মনকি বাত।তাতে আর যায় হোক জিডিপি বাড়বে না।

                                                              (মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)

Gmail 7

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest