কলকাতা: করোনা আক্রান্ত ইংল্যান্ড ফেরত তরুণের বাবা, মা এবং গাড়ির চালকের দেহে ভাইরাসের সংক্রমণ হয়নি। বুধবার সকালেই এই তিন জনের লালারসের নমুনা পাঠানো হয়েছিল নাইসেডে। এ দিন বিকেলে নাইসেডের রিপোর্ট এসে পৌঁছয় বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। সেই রিপোর্টে জানানো হয়েছে, বাবা, মা এবং গাড়ির চালকের দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এই রিপোর্ট আসার সঙ্গে সঙ্গে রীতিমতো হাঁফ ছেড়ে বাঁচে গোটা রাজ্য প্রশাসন। কারণ, ওই তরুণের মা যিনি রাজ্য প্রশাসনের আমলা ছেলের সংস্পর্শে আসার পরে নবান্নে নিজের দফতরে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ আমলার সঙ্গেও দেখা করেন।
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাস চ্যালেঞ্জ! বিমানের কমোড চাটলেন টিকটক স্টার
রবিবার ইংল্যান্ড থেকে বিমানে কলকাতায় ফিরেছিলেন ওই তরুণ। এরপর নিয়ম ভেঙে মায়ের সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন। গিয়েছিলেন দক্ষিণ কলকাতার একটি শপিংমলে। সরকারি আমলা মায়ের সঙ্গে ওই তরুণ গিয়েছিলেন নবান্নে। বাবা সরকারি হাসপাতালের চিকিত্সক। গতকাল, মঙ্গলবার পর্যন্তও রোগী দেখেছেন। ফলে উত্কণ্ঠা বেড়েছিল। মা, বাবা ও গাড়ির চালককে পাঠানো হয়েছিল কোয়ারেন্টাইনে। তাঁদের শরীর থেকে সাতটি নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয় এসএসকেএম ও নাইসেডে। এসএসকেএমে পাঠানো হয়েছিল ২টি। নাইসেডে ৫টি নমুনার রিপোর্টের মধ্যে চারটিতেই ভাইরাসের উপস্থিতি মেলেনি। ফলে আপাতত উত্কণ্ঠার কোনও কারণ নেই। তবে এসএসকেএমের দুটি ও নাইসেডের একটি নমুনা রিপোর্ট আসা এখনও বাকি।
ওই আমলার পরিবারের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, মায়ের প্রভাব খাটিয়ে জোর করে এম আর বাঙুর হাসপাতালে চিকিৎসক দেখান তিনি। সেখান থেকেও তাঁকেও বেলেঘাটা আইডি-তে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু ওই তরুণ সাফ জানায়, “আমি ভর্তি হব না।” এরপরই মায়ের সঙ্গে নবান্নে আসেন ওই তরুণ। নবান্নে ঘোরাফেরা করেন। এমনকি তারপর মায়ের সঙ্গে মহাকরণেও যান। জানা যাচ্ছে, তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে ওই তরুণ শপিং মলে যান। পাশাপাশি, আরও জানা যাচ্ছে পার্ক স্ট্রিটের একটি ক্লাবেও গিয়েছিল ওই তরুণ। তারপর আবাসনে ফিরে ফের ওই তরুণ বন্ধুদের সঙ্গে একদফা আড্ডা মারেন।
আরও পড়ুন: করোনা: স্টেশনে ভিড় কমাতে পাঁচ গুণ বাড়াল প্ল্যাটফর্ম টিকিটের দাম
এই নিয়ে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘হঠাৎ করে বিদেশ থেকে এসে একটা শপিং মলে চলে গেলাম। সেখানে আরও পাঁচ জন আক্রান্ত হলেন। পার্কে গেলাম, সেখানে আরও কয়েক জনের সংক্রমণ হল। এটা আমি সমর্থন করি না।’’
মুখ্যমন্ত্রী যে এই ঘটনায় অসন্তুষ্ট তার প্রমাণ মিলেছে, বার বার ঘুরে ফিরে তিনি ওই প্রসঙ্গ তোলায়। তিনি বলেন, ‘‘বার বার বলছি, নিজেরা নিজেদের মতো করে সুস্থ থাকার চেষ্টা করুন। যিনি বিদেশ থেকে আসছেন, তাঁর বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন রয়েছেন। তাঁরাও সংক্রমিত হতে পারেন। অথচ কোনও ডায়াগনসিস করা হল না!’’ করোনা নিয়ে স্বাস্থ্যবিধির পরামর্শ দেওয়ার ফাঁকে আবার তিনি বলেন, ‘‘আমি কেন চেষ্টা করব না, আমার রোগ যাতে অন্য জায়গায় না ছড়ায়। আমি কেন নিজেকে আইসোলেশন করে রাখব না। কালকে যে ঘটনা ঘটেছে, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। বিমানবন্দরে কী চেক করেছে, আমি জানি না। তার পরেও ঘুরে বেড়িয়েছে এখানে-সেখানে।’’