কলকাতা: রাজ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হল ২৭। সেই সঙ্গে নতুন করে গৃহ-পর্যবেক্ষণে গেলেন এক লক্ষেরও বেশি মানুষ। মৃতের সংখ্যাও বেড়ে হল তিন।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, সোমবার গভীর রাতে হাওড়া জেলা হাসপাতালে মারা গিয়েছেন শালকিয়ার বাসিন্দা এক মহিলা। তিনি জ্বরের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁর লালরসের নমুনা পাঠানো হয়েছিল পরীক্ষার জন্য। মৃত্যুর পর সেই রিপোর্ট এসেছে। জানা যায়, তিনিও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মঙ্গলবার বেলঘরিয়ার এক প্রৌঢ়ও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বেলেঘাটা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।গত ২৪ ঘন্টায় রাজ্যে আরও তিন জনের শরীরে করোনার প্রমাণ মিলেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে দাসপুরের এক যুবক করোনা আক্রান্ত হয়ে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছেন। তাঁর সঙ্গে মুম্বই-যোগ রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এ ছাড়া সল্টলেকের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি। টালিগঞ্জের ৫২ বছর বয়সি এক বাসিন্দা ঢাকুরিয়ার অন্য এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। সব মিলিয়ে রাজ্য এখনও পর্যন্ত ২৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
অন্য দিকে, গৃহ-পর্যবেক্ষণের সংখ্যা এক লাফে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। এ দিন নতুন করে এক লক্ষেরও বেশি মানুষকে গৃহ-পর্যবেক্ষণে পাঠানো হয়েছে। সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৭৭৭ জন। ৫৪৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সন্দেহ, তাঁদের লালারসের নমুনা পাঠানো হয়েছিল পরীক্ষার জন্য। তার মধ্যে ৫১২ জনের কোভিড-১৯ নেগেটিভ এসেছে। পজিটিভ ২৭ জন। বাকি চার জনের রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।
বাংলা অত্যন্ত জনবহুল রাজ্য হলেও করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা যে অন্য অনেক রাজ্যের তুলনায় কম, তা নিশ্চিত ভাবেই রাজ্যবাসীর কাছে স্বস্তির খবর। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে করোনার টেস্ট দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অনেকটাই কম। সত্যি কথা বলতে, এই মাপকাঠিতে একেবারেই পিছনের সারিতে বাংলা। তবে সার্বিকভাবে বিশ্বের নিরিখে ভারতের টেস্টিং রেকর্ডও তেমন ভালো নয়।দেশে ৩০ মার্চ অবধি মোট ৩৮,৪৪২ টেস্ট হয়েছে বলে হিন্দুস্তান টাইমসের হিসাব বলছে। এর মধ্যে ৬,৬৯০ টেস্ট হয়েছে কেরালায়। রাজস্থানে ৪০৮৫ করোনা টেস্ট হয়েছে, মহারাষ্ট্রে হয়েছে ৩৬৫৬টি টেস্ট। কর্নাটকে হয়েছে ৩১৭০ টেস্ট, তামিলনাড়ুতে ২৪৫৬, দিল্লিতে ২০৪৯টি টেস্ট। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে হয়েছে মাত্র ৪৭৫টি টেস্ট। দশ লক্ষ মানুষের হিসাবে দেখলে মাত্র ৫.২ জনের করোনার পরীক্ষা হয়েছে। দেশে গড় যখন, ৩১.৭ প্রতি মিলিয়নে, পশ্চিমবঙ্গে সেটি ৫.২। এটি যে অনেকটা বৃদ্ধি করার প্রয়োজন, তা বলাই বাহুল্য।
আরও পড়ুন: করোনা এবং নরেন এসেছে দেশ ও বিশ্বকে শিক্ষা দিতে!
ওপরের গ্রাফিক্সটি দেখলেই বুঝবেন, ৩০ মার্চ অবধি প্রতি মিলিয়ন অর্থাত্ দশ লক্ষে ভারতে গড়ে ৩১.৭ টেস্টিং হয়েছে । দক্ষিণ কোরিয়াতে সেখানে তুলনায় ৭৬৫৩.৬ লোকের টেস্টিং হয়েছে, ইতালিতে ৭৫১৩.২, আমেরিকায় ১৯২১.৭ জনের। এমনকী জাপানও প্রতি দশ লক্ষ মানুষে ২১৩.৪ জনকে টেস্ট করেছে।
যেসব রাজ্যের তথ্য আছে এই ওপরের গ্রাফিক্স, এক মিলিয়নে কত লোকের টেস্ট হয়েছে, সেই মাপকাঠিতে পশ্চিমবঙ্গ একেবারে নীচে। ধারেকাছে তিন পড়শি রাজ্য বিহার (৭.৬), ঝাড়খণ্ড (৫.৯) ও ওড়িশা (৮.৮)। বড় রাজ্যের মধ্যে দশের নীচে আছে মধ্যপ্রদেশ (৮.৩)। এখানেও কেরালা শীর্ষে। প্রতি দশ লাখে ২০০.৩ গড়ে লোকের টেস্ট হচ্ছে করোনা আছে কিনা দেখার জন্য। একশোর ওপর আছে দিল্লি (১২২.১)। দেশের মধ্যে শীর্ষে লাদাখ (১২৮৩.৩)।
আরও পড়ুন: এপ্রিল ফুল দিবসে করোনা নিয়ে ভুয়ো গুজব রটালে কঠিন শাস্তি, কেন্দ্রকে নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের