কলকাতা: করোনা আক্রান্ত হয়ে দ্বিতীয় মৃত্যুর ঘটনা ঘটল পশ্চিমবঙ্গে। রবিবার গভীর রাতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে কালিম্পঙের এক মহিলার (৪৪)। দিন তিনেক আগেই তাঁর করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছিল।
কর্মসূত্রে চেন্নাইতে থাকতেন কালিম্পংয়ের গরুবাথান ব্লকের বাসিন্দা বছর ৪৫-এর মহিলা। দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা হওয়ার ঠিক আগে, মঙ্গলবার তিনি চেন্নাই থেকে ফিরেছিলেন বাড়িতে। পরেরদিন শ্বাসকষ্ট দেখা যায় তাঁর। বুকে ব্যথা ক্রমশ তীব্র হতে থাকে। প্রথমে শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান তিনি। সেখান থেকে তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই গত শনিবার রাতে রক্তপরীক্ষার রিপোর্টে জানা যায়, তিনি করোনায় আক্রান্ত। আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয় তাঁকে। রবিবার দুপুর পর্যন্ত ওষুধে সাড়া দিচ্ছিলেন কালিম্পংয়ের ওই মহিলা। কিন্তু সন্ধে হতেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। তারপরই রাত ২টো নাগাদ মৃত্যু হয় তাঁর।
আরও পড়ুন: জানেন কি মোবাইল, ঘড়ি, চশমা বা বাজারের ব্যাগ থেকেও ছড়াতে পারে করোনা!
জানা গেছে ওই মহিলা গত ৭ মার্চ তাঁর মেয়েকে চিকিৎসার জন্য চেন্নাই নিয়ে যান। তারপর সেখান থেকে তাঁরা গত ১৯ মার্চ বিমানে বাগডোগরা নামেন। সেখান থেকে নিজেদের গাড়ি করেই শিলিগুড়ির জ্যোতিনগরে এক আত্মীয়র বাড়িতে আসেন। সেখানে আধাঘন্টার মতো থাকেন। ওই গাড়ি করেই এরপর চলে যান কালিম্পঙে নিজের বাড়িতে। জ্বর হওয়ায় ২০ মার্চ স্থানীয় এক ডাক্তারের কাছে পরীক্ষা করান। এরপর ২৬ মার্চ আবার গাড়ি নিয়ে শিলিগুড়ির আত্মীয়র বাড়িতে এসে ওঠেন। সেখানে থেকে শহরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডাক্তারের পরামর্শ মতো সিটিস্ক্যান ও এক্স-রে করান। রিপোর্ট পাওয়ার পর উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কোভিড ক্লিনিকে যান। এরপর ডাক্তারদের পরামর্শে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ভর্তি হন তিনি।
কিন্তু তার মাঝে তিনি অনেকের সংস্পর্শে এসেছেন বলে জানা গেছে। ওই মহিলার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন কালিম্পং এর বাসিন্দা ছ’জন। তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তাঁর গাড়ির চালককেও পরিবার-সহ কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। শিলিগুড়ির ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বোতল কোম্পানি সংলগ্ন জ্যোতিনগরের বাসিন্দা যে আত্মীয়ের বাড়িতে তিনি দু’দফায় এসেছিলেন, তাঁদেরও স্ক্রিনিং করে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। খোঁজ চলছে তাঁদের গাড়ির চালকেরও। শুধু তাই নয় ওই মহিলা শিলিগুড়ির এক ডাক্তারের কাছে আগে পরীক্ষা করেন। সেই ডাক্তারও কোয়ারেন্টাইনে গিয়েছেন বলে জানা গেছে। তাঁর চেম্বারও বন্ধ। কালিম্পঙে যে ডাক্তার তাঁকে দেখেছিলেন তিনি এতদিন আরও অনেক রোগীকে দেখেছেন। তাঁদেরও চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুন: ২১ দিনের লকডাউন কী বাস্তব কোনও পরিকল্পনা? নাকি সবটাই মোদী করলেন নোটবন্দির স্মৃতি থেকে!
হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়, ওই মহিলা ভিনরাজ্য থেকে জীবাণু বহন করে আনতে পারেন। কিংবা বিমানের অন্য যাত্রীদের থেকেও সংক্রমিত হতে পারেন। তাই চেন্নাই থেকে ফেরার সময় এবং পরে তিনি কোথায় কোথায় গিয়েছেন বা কাদের সঙ্গে মেলামেশা করেছেন তার বিস্তারিত খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে।দার্জিলিং এর মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্য বলেন, ‘‘আমরা খোঁজখবর করছি। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেইসব মানুষকে হোম আইসোলেশনে পাঠানো হবে। স্বাস্থ্যদফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: করোনায় আক্রান্ত কম্যান্ড হাসপাতালের এক চিকিৎসক, রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১৯