কলকাতা: রাজ্যে করোনায় মৃতের সংখ্যা বাড়ল। শুক্রবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা জানালেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজ্যে আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজ্যে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় পশ্চিমবঙ্গে ৫১ জন নতুন করোনা রোগীর খোঁজ মিলেছে। যার ফলে করোনা আক্রান্ত অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গে চিকিৎসাধীনের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৮৫।
বিরোধীরা বারবার অভিযোগ করেছেন, করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে দেখাচ্ছে সরকার। করোনায় মৃতদের দেহ গোপনে সৎকার করে দেওয়া হচ্ছে। যদিও সরকারের তরফে বারবার দাবি করা হয়েছে, করোনায় মৃত্যু খতিয়ে দেখতে অডিট কমিটি নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁরাই রিপোর্ট দিচ্ছে। এ দিন অবশ্য নবান্নে মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা রাজ্যে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ৩ বেড়েছে বলে জানান। ফলে রাজ্যে এই মুহূর্তে করোনা আক্রান্ত মৃতের সংখ্যা ১৮।
এদিন অবশ্য মুখ্যসচিব জানান, অডিট কমিটি মোট ৫৭ জনের মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখেছে। তার মধ্যে ১৮ জনের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষভাবে করোনা দায়ী। বাকি ৩৯ জনের কারও মৃত্যু হয়েছে রেনাল ফেলিওর, কারও বা মাল্টি অর্গ্যান ফেলিওরের মতো কারণ রয়েছে বলে জানিয়েছে অডিট কমিটি। তবে ওই ৩৯ জনও করোনা পজিটিভ হয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘ডেথ অডিট কমিটি গত ২০ দিন ৫৭ টা মৃত্যুর অডিট করেছে। এর মধ্যে ৩ এপ্রিল থেক ১৮ টা কোভিড-১৯ এর কারণে মৃত্যু বলে নিশ্চিত করেছে ওই কমিটি। বাকি ৩৯ জনের মৃত্যু র কারণ হিসাবে কো-মরবিড বলা হচ্ছে। তবে মৃত্যুর কারণ যাই হোক না কেন এই ৫৭ জনের মৃত্যুর কমন ফ্যাক্টর কোভিড পজিটিভ।’ অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গে করোনায় আক্রান্ত অবস্থায় মোট মৃতের সংখ্যা ৫৭।
আরও পড়ুন: সূর্যালোক শরীরে ঢুকিয়েই বধ করা যাবে করোনা! ট্রাম্পের পরামর্শে হতবাক বিজ্ঞানীরা
ঘটনাচক্রে এ দিন দুপুরেই কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের তরফে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে দু’টি চিঠি পাঠানো হয়। সেই চিঠিতে করোনা মোকাবিলায় রাজ্য সরকার গঠিত চিকিৎসকদের বিশেষ কমিটি সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা হয়। কী কারণে ওই কমিটি গঠন করা হল, তা-ও জানতে চাওয়া হয়। এমনকি চিঠির একটা অংশে লেখা হয়েছে, ‘‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে কমিটি গঠনের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়েপ্রিন্সিপাল সেক্রেটারি তাঁর প্রেজেন্টেশনে ২৩ এপ্রিল জানিয়েছিলেন, করোনা আক্রান্ত কারও যদি পথদুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়, সে ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তিকে করোনায় মৃত বলে গণ্য করা যায় না। এটা আইএমসিটির কাছে যুক্তিগ্রাহ্য লাগছে না। হাসপাতালে কোনও রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পথদুর্ঘটনায় মৃত্যুর এই তুলনার ব্যাপারটা আমাদের বুঝতে হবে।’’ আর সে কারণেই বেশ কিছু বিষয় জানতে ওই চিঠির মাধ্যমে রাজ্যের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
কেন্দ্রীয় দল যে রাজ্যকে চিঠি দিয়েছে, তা স্বীকার করেছেন মুখ্যসচিব। তিনি বলেন, ‘‘ওঁরা আজকেও দু’টি চিঠি দিয়েছেন। হাওড়া যেতে চেয়েছেন। গিয়েছেন। আমাদের লুকনোর কোনও কিছু নেই। কেন্দ্রীয় দল অডিট করতে আসেনি। আমরাও পরীক্ষা দিচ্ছি না যে, পাশ-ফেল থাকবে। আমরা আাশা করব তাঁরা প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন।”
অন্য দিকে, বিজেপির তরফে রাজ্যের এই মৃত্যু-হিসেবকে কটাক্ষ করা হয়েছে। বিজেপি আইটি সেলের সর্বভারতীয় প্রধান অমিত মালব্য টুইটও করেছেন বিষয়টি নিয়ে। তিনি লিখেছেন, ‘‘ডেথ অডিট কমিটি নিয়ে বাংলার মুখ্যসচিবকে আইএমসিটি প্রধান চিঠি পাঠিয়েছেন। তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই, মুখ্যসচিব চাপের মুখে স্বীকার করেছেন, রাজ্যে করোনা-মৃত্যুর মোট সংখ্যা ৫৭, আজকের মেডিক্যাল বুলেটিনে লেখা ১৮ নয়। ৩৯ জনের মৃত্যুর কারণ অন্য। পর্দা উঠছে।’’
কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের চাপের মুখে পশ্চিমবঙ্গে করোনায় মৃত্যুর আসল সংখ্যাটা বলতে বাধ্য হয়েছে রাজ্য সরকার। শুক্রবার বিকেলে এই ভাষাতেই রাজ্য সরকারকে আক্রামণ করলেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সঙ্গে তিনি বলেন, করোনায় মৃতের সংখ্যা লুকিয়ে সামাজিক অপরাধ করেছে রাজ্য সরকার।
আরও পড়ুন: করোনা যোদ্ধাদের স্যালুট, মুক্তি পেল নতুন করে লেখা ‘তেরি মিট্টি’, দেখুন ভিডিও