অমিতাভ মুখার্জি
অতিমারি করোনার দাপট রুখতে যা করা প্রয়োজন তা মোটেই করছে না সরকার৷ভারতে মোটেই পর্যাপ্ত করোনা টেস্ট হচ্ছে না, বলে অভিযোগ কংগ্রেসের প্রাক্তন অধ্যক্ষ রাহুল গান্ধীর ৷ একইসঙ্গে ৯ এপ্রিল রাত ৯টায় প্রধানমন্ত্রীর মোমবাতি, টর্চ ও প্রদীপ জ্বালানোর ‘নতুন টাস্ক’কে কটাক্ষ করে রাহুল বলেন, হাততালি দিয়ে আর টর্চ জ্বালিয়ে মোটেও করোনার সমাধান হবে না৷
বলে রাখা ভালো, করোনা নিয়ে সবথেকে আগে সাবধান করেছিলেন রাহুল গান্ধীই। তখন প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে আশ্বাস দিতে ব্যস্ত ছিলেন। ফেরুয়ারি মাসের সেই টুইটে রাহুল লিখেছিলেন ডুবন্ত টাইটানিকের ক্যাপ্টেনের মত প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে আশ্বাস দিচ্ছেন। রাহুল যখন বলেছিলেন তখনই ব্যবস্থা নিলে আজ ফল আলাদা হতে পারত। সমস্যা হল, রাহুলের ব্যক্তিত্বটা ঠিক পাকাপোক্ত হল না।মনে হয়েছিল আর একটু বড় হলে বোধহয় ওঁর কথার ওজন বাড়বে। কিন্তু তা হল না।
মনে হয় রাহুলের উচিত টানা কয়েক মাস ইউটিউবে মোদির ভাষণের স্টাইল ফলো করা। সেলসম্যানশিপ কাকে বলে দেখিয়ে দিয়েছেন মোদীজি। আর সেখানে মোটামুটি ১৫ আনাই ফেল রাহুল বাবা। মোদীজি বহু পরে করোনা নিয়ে ফুটেজ খেয়ে নিলেন। থালা, ঘন্টা বাজানোর ফরমান দিয়ে দেশকে প্রাথমিকভাবে সেলিব্রেশন মোডে পাঠিয়ে দিলেন। এখন মোমবাতি জ্বালিয়ে অকাল দেওয়ালি পালনের কাজ দিয়েছেন, আর মানুষ তাতে গদগদ হয়েছে।
এটাই মোদীজির বাহাদুরি। তিনি দেশবাসীকে নাচাতে জানেন।এর ছিটেফোঁটাও রাহুলের মধ্যে থাকলে কংগ্রেস সভাপতি পদ তাঁর কাছ থেকে মা সনিয়াকে কেড়ে নিতে হত না। সব মায়ের মতই সনিয়াও দেখতে চান তাঁর ছেলে প্রধানমন্ত্রী হবে। কিন্তু ব্যর্থ হওয়াতে অগত্যা রাশ ফের টানতে হয়েছে সনিয়াকে। তবে সময় বিশেষে ‘রাজা তোর কাপড় কোথায়’ গোছের কিছু স্পষ্ট প্রশ্ন রাহুল তাঁর সারল্য থেকেই করে বসেন।
একথা ঠিক যে মোদী সরকার চাইলে আগেই আন্তর্জাতিক উড়ান নিষিদ্ধ করতে পারত। তাতে সংক্রমণ এই ভাবে ছড়িয়ে পড়ত না। ‘বাবুদের উড়ান’ বন্ধ না করে তিনি লকডাউন করে দিলেন গোটা দেশ। অগণিত পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা একবারও ভাবলেন না। বাবুদের উড়ান বন্ধ করতে তিনি এতদিন সময় নিলেন। অথচ লকডাউনের সময় নিজের দেশের মানুষকে কোনও সময় দিলেন না। ঠিক যেমন নোটবন্দির সময় তিনি দেশবাসীকে সময় দেননি। ওঁর যত সমস্যা দেশের আমজনতাকে নিয়ে।
করোনা সংক্রমণ গোটা দেশে ৭৫ জনের প্রাণ নিয়েছে। নোটবন্দির কারণে একশোজনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ভক্তরা অবশ্যই বলবেন দেশের এমন সংকটে পুরোনো কাসুন্দি ঘেঁটে কোনও লাভ নেই। মোদীজি জানেন কিভাবে দেশ চালাতে হয়।
বেচারি রাহুল গান্ধীর কোনও ভক্ত নেই। তাঁর হয়ে দুটো কথা বলার কেউ নেই। নিজেই গুছিয়ে দুটো কথা বলতে না পারলে কে আর বলে দেবে! বঙ্কিমচন্দ্র থাকলে রাহুলের মাথাকে তিনি নির্ঘাৎ নারকেলের সঙ্গে তুলনা করতেন। খানিকটা শাঁস বাকিটা জল। সেই হিসাবে রাহুল ঠিক জায়গাতেই গিয়েছেন। কেরলের লোক নারকেলের যেমন কদর করে তেমনটা আর কেউ করবে না। তবে একথা স্পষ্ট ভাবে বলা যায়, করোনা নিয়ে রাহুল রাজনীতি করেননি। বরং সরকারের পাশে থেকেছেন। তবে তিনি আগাম সতর্ক করেছিলেন। রাহুলের এমনই বাজার যে সোশ্যাল সাইটেও তাঁর টুইটের কথা মনে পড়ছে না কারও!
তবে এটাও ঠিক যে রাহুল কি বলেছিলেন, মোদী মন কি বাতে কি শোনালেন, কিংবা মমতা কত বড় গন্ডি কাটলেন তা নিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকরা কি করবেন। তাদের বাড়ি ফিরতে দিন প্লিজ। ফিরতে না পারলে ওরা এমনিতেই মরে যাবে না খেতে পেয়ে। তখন চক্ষু দুটি বাঁচি গেল দশা হবে। একজনের কপালে সাপে কামড়েছিল। ফলে তিনি পঞ্চত্ব প্রাপ্ত হন। গভীর আবেগে তখন একজন জিজ্ঞাসা করেন, সাপ কোথায় কামড়েছিল। উত্তর আসে কপালে। তিনি আবেগ ঝরিয়ে বলেছিলেন চক্ষু দুটি বাঁচি গেল! দেশের অবস্থা তাই। যা পরিস্থিতি তাতে বহু জনের প্রাণ যাবে বেঘোরে। তখন ভক্তরা স্বস্তির নিঃস্বাস ফেলে বলবে করোনা কিছু করতে পারেনি, ওরা মরেছে না খেতে পেয়ে। এটা কি নতুন। স্বাধীনতার পর থেকে এমনটা হয়েই আসছে। তাছাড়া এই অসুখের জন্যেও তো দায়ী নেহেরু। হিন্দি-চিনি ভাই ভাই কার সময়ের স্লোগান ছিল মনে পরে না। এখন আবার ওরা এসেছে মোদীজির সমালোচনা করতে। চোরের মায়ের বড় গলা আরকি!