নয়াদিল্লি: তবে কি আশার আলো পাওয়া গেল? শেষ হবে করোনা প্রকোপ? ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক রক্ষাকবচ হতে পারে করোনাভাইরাসের সংক্রমণেও। ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্সের সবুজ সঙ্গেত পেল হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন (hydroxychloroquine)। তবে সংক্রামিত রোগীদের উপরে এই ড্রাগ প্রয়োগ করার জন্য এখনই ছাড়পত্র দিল না ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব ড্রাগ রিসার্চ (আইসিএমআর)। সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে আইসিএমআরের বিশেষজ্ঞরা বললেন, স্বাস্থ্যকর্মী যাঁরা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করছেন, অথবা হোম-কোয়ারেন্টাইনে থাকা রোগী যাঁদের শরীরে কোভিড-১৯ পজিটিভ, এমন রোগীদের চিকিৎসা বা কাছ থেকে দেখাশোনা করছেন যাঁরা, শুধুমাত্র তাঁদের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা যাবে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন। এই ড্রাগ তাঁদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলবে।
আরও পড়ুন: করোনায় মৃত ব্যক্তির সৎকার হবে সরকারি তত্ত্বাবধানে, পরিবারকে দেওয়া হবে না দেহ
একদল ফরাসি গবেষকদের গবেষণা সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। এই গবেষকরা সম্প্রতি একটি ওপেন লেবেল নন randomised ক্লিনিকাল ট্রায়াল করেছেন। সেখানেই তাঁরা দাবি করেছেন, হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন এবং এজিথ্রোমাইসিন মিশ্রিত ড্রাগ করোনা প্রতিরোধে অনেকটাই সক্ষম। করোনার জেরে বিশ্বে মৃত্যু মিছিল চলছে, মৃতের সংখ্যা ১৫০০০ এর কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে।
কী জানা গিয়েছে গবেষণায়? একদল ফরাসি গবেষক এই গবেষণা করেছেন। নতুনভাবে করোনা আক্রান্ত চীনের কিছু রোগীর উপর এই মিশ্রণটি কাজ করেছে বলে দাবি করছেন এই ফরাসি গবেষকরা। গবেষকরা মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত একদল করোনা আক্রান্তের উপর রোজ ৬০০ মিলিগ্রাম হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন প্রয়োগ করা হয়। তারপর তাদের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তাদের উপর এজিথ্রোমাইসিন প্রয়োগ করা হয় ।
আরও পড়ুন: স্টেজ টুতেই করোনা আটকাতে কড়া পদক্ষেপ, মহারাষ্ট্র ও পঞ্জাবে জারি কার্ফু
এই ড্রাগ প্রয়োগের তিন থেকে ছয় দিনের মাথায় ২২জন রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার লক্ষণ দেখা যায়। হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন এর সঙ্গে এর প্রয়োগ এজিথ্রোমাইসিন এর প্রয়োগ রোগীদের দ্রুত সুস্থ হতে সহায়তা করছে। যদিও অত্যন্ত কমসংখ্যক রোগীর উপর এই পরীক্ষা চালানো হয়েছে কিন্তু গবেষণার ফল গবেষকদের মনে আশা জাগিয়েছে। হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ম্যালেরিয়া সারাতে সাহায্য করে এবং এজিথ্রোমাইসিন ব্রঙ্কাইটিস ও নিউমোনিয়া সারায়। ফ্রেঞ্চ ন্যাশনাল এজেন্সি ফর ড্রাগ সেফটি এবং ফ্রেঞ্চ এথিকস কমিটি এই পরীক্ষাকে মান্যতা দিয়েছে।
ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনকে ছাড়পত্র দিলেও তার কিছু বিধিনিষেধ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সব ক্ষেত্রে এবং সব রোগীর উপরে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন প্রয়োগ করা যাবে না।
#WATCH: ICMR Director-General: Hydroxychloroquine is recommended only for a healthcare worker who is treating a #COVID patient. Secondly, it's recommended only for persons staying&caring for a household positive patient. They can take that only for prophylaxis,only for prevention pic.twitter.com/jylhDHFe3b
— ANI (@ANI) March 23, 2020
আরও পড়ুন: বেহাল অবস্থা! করোনা টেস্টের যোগ্য নয় এ রাজ্যের কোনও বেসরকারি ল্যাব
কী কী বিধিনিয়েধ রয়েছে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের প্রয়োগে—
১)আইসিএমআর জানিয়েছে, সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন। তবে এখনও এর ক্লিনিকাল ট্রায়াল বাকি। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এর প্রয়োগ করা যেতে পারে। যে স্বাস্থ্যকর্মীরা ২৪ ঘণ্টা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করছেন তাদের উপরে প্রয়োগ করা যেতে পারে এই ড্রাগ।
২) উপসর্গ ধরা পড়েনি (Asymptomatic) কোয়ারেন্টাইনে থাকা এমন রোগী যাদের শরীরে কোভিড-১৯ পজিটিভ, তাঁদের সংস্পর্শে থাকছেন বা চিকিৎসা করছেন এমন ব্যক্তিদের উপরেও প্রয়োগ করা যাবে এই ড্রাগ।
৩) কার উপর হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন প্রয়োগ করতে হবে এবং ঠিক কতটা ডোজে, সেটা শুধুমাত্র অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই করা যাবে। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন কখনওই প্রয়োগ করা ঠিক হবে না।
৪) সংক্রামিত রোগীদের চিকিৎসা করতে গিয়ে যদি স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিৎসকদের মধ্যেও উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে ল্যাবরেটরি টেস্টের পরে পরামর্শ নিয়েই হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার করা যেতে পারে। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা যে ক্ষেত্রে বেশি শুধুমাত্র সেক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা যাবে এই ড্রাগ।