পুণে: করোনাভাইরাসের প্রথম ছবি ধরা পড়ল পুণের বিজ্ঞানীদের অনুবীক্ষণ যন্ত্রে। ট্রান্সমিশন ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে তোলা এই ছবি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মেডিক্যাল রিসার্চে। গত ৩০ জানুয়ারি ভারতের প্রথম Sars-Cov-2 ভাইরাস আক্রান্তের গলা থেকে সংগৃহীত নমুনা গবেষণাগারে বিশ্লেষণ করার সময় ছবিটি তোলা হয়। এই পরীক্ষার ভিত্তিতেই চিনের উহান শহরে মেডিসিন পাঠরতা ছাত্রী দেশে ফিরলে তাঁর শরীরে Covid-19 রোগের উপস্থিতি ধরা পড়ে।
কেরালাবাসী ওই ছাত্রীর নমুনা থেকে পাওয়া করোনা ভাইরাসের ছবি দেখে বোঝা গিয়েছে, এই ভাইরাসের সঙ্গে আকারগত সাদৃশ্য রয়েছে ২০১২ সালে ব্যাপক সংক্রমণ ঘটানো Mers-Cov ভাইরাস বা মিডল ইস্ট রেস্পিরেটরি সিন্ড্রোম করোনাভাইরাসের এবং ২০০২ সালে ছড়িয়ে পড়া Sars-CoV বা SARS (সিভিয়র অ্যাকিউট রেস্পিরেটরি সিন্ড্রোম) করোনাভাইরাসের।
আরও পড়ুন: করোনায় আক্রান্ত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, রয়েছেন আইসোলেশনে
এনআইভি পুণের ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপি ও প্যাথোলজি বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর ড. অতনু বসুর কথায়, সাতটি ভাইরাল স্ট্রেনের অংশ আলাদা করা হয়েছে। এদের আয়তন ৭৫ ন্যানোমিটারের মতো। এদের ১% গ্লুটারালডিহাইডের কনসেন্ট্রেশনে ডুবিয়ে কার্বন-কোটেড কপার গ্রিড দিয়ে অ্যাবসর্ভ করা হয়েছে। নেগেটিভ স্টেনিং করা হয়েছে sodium phosphotungstic acid দিয়ে। ট্রান্সমিশন ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে ১০০ কেভি অ্যাকসিলারেটিং ভোল্টেজে পরীক্ষা করে এই ছবি সামনে এসেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের নীচে ফেললে মনে হয় এরা মুকুট পড়ে আছে। ল্যাটিন ভাষায় এগুলোকে বলে ‘করোনাম’ (Coronam)। এই খোঁচাগুলো আসলে স্পাইক গ্লাইকোপ্রোটিন (spike glycoproteins) যাদের প্রধান কাজ মানুষের শরীরে তাদের বন্ধু প্রোটিন খুঁজে নেওয়া। বাহক কোষের (Host Cell) প্রোটিনের সঙ্গে জুটি বেঁধেই এরা কোষের মধ্যে ঢুকতে পারে। অর্থাৎ এই মুকুটের মতো খোঁচাগুলো অনেকটা চাবির কাজ করে, যার সাহায্যে তারা মানুষের শরীরের কোষে এন্ট্রি নিতে পারে।
আরও পড়ুন: তিন মাস EMI না দেওয়ার পথ সুগম করল RBI, জেনে নিন কারা পাবেন এই সুবিধা?
গোল এবং ডিম্বাকার, দু’রকম আকারই হয়। এরা সিঙ্গল-স্ট্র্যান্ডেড আরএনএ জিনোম (RNA Genome) যার মধ্যে ২৯৮৯১ নিউক্লিওটাইড এবং ৯৮৬০ অ্যামাইনো অ্যাসিড রয়েছে। সার্স-সিওভি২ ভাইরাল জিনোমের সঙ্গে ব্যাট করোনাভাইরাসের (bat-SL-Cov-ZC45 এবং bat-SL-Cov-ZXC21) বিস্তর মিল। ভয়ঙ্কর মার্স-সিওভি (Mers-CoV) ভাইরাসের সঙ্গেও এদের জিনগত সাদৃশ্য আছে। তাই মনে করা হচ্ছে বাদুর বা প্যাঙ্গোলিনের থেকে এই স্ট্রেন ছড়িয়েছে।
মোহালি আইসারের (IISER-Mohali) ভাইরোলজিস্ট বিজ্ঞানী ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন এই ভাইরাসের ২৭টি ভাইরাল প্রোটিনের ৩৮০ বার মিউটেশন হয়েছে বা জিনের গঠনে বদল হয়েছে। তাই এই জিনোম এখন প্রাণঘাতী। মানুষের শরীরের বিশেষ জিন খুঁজে নিয়ে এরা জোট বেঁধে সরাসরি কোষে এন্ট্রি নিচ্ছে। পরিমাণ ফুসফুসের সংক্রমণ, সেখান থেকে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ভেঙে পড়া, অঙ্গ বিকল এবং কোনও ক্ষেত্রে মৃত্যু। বয়স্ক ব্যক্তি বা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম অথবা আগে থেকেই কোনও ক্রনিক বা সংক্রামক ব্যধি রয়েছে তারাই মূলত এই ভাইরাসের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। এর ভ্যাকসিন বা অ্যান্টিবডি তৈরির কাজ চলছে। যদিও বিশ্বের সব দেশেই সেই কাজ এখনও গবেষণার স্তরেই রয়েছে।
আরও পড়ুন: করোনা ত্রাণ তহবিলে ৫০ লক্ষ টাকা দিলেন শচীন, ভারতীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাহায্য