নয়াদিল্লি: গত ফেব্রুয়ারিতে হিংসার আগুনে দীর্ঘ চারদিন ধরে জ্বলেছে উত্তর–পূর্ব দিল্লি। হিংসায় মারা গিয়েছেন ৫৩ জন। আহত ৩০০–রও বেশি। বারংবার বিরোধীরা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ইস্তফার দাবিতে সরব হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে বুধবার সংসদে দিল্লি হিংসা নিয়ে বক্তব্য রাখলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু যেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দিল্লি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, সেখানে শাহের মুখে শোনা গেল ভূয়সী প্রশংসা। সংসদে তুমুল হইচইয়ের মাঝেই এদিন শাহ বলেন, ‘২৫ ফেব্রুয়ারির পর নতুন কোনও হিংসার ঘটনা ঘটেনি উত্তর–পূর্ব দিল্লিতে। পরিস্থিতি দ্রুত শান্ত হয়েছে। পুলিশ ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি আয়ত্তে এনেছে। দাঙ্গা বিধ্বস্ত এলাকায় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালকেও আমিই পাঠিয়েছিলাম।’
বুধবার লোকসভায় ছিল দিল্লি হিংসা নিয়ে আলোচনা। এদিন ভাষণের শুরুতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দিল্লি হিংসায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন। ঘটনায় শোক প্রকাশ করে তিনি কেন হোলির পর এই নিয়ে আলোচনার জন্য সরকার সময় নির্ধারণ করেছে তাও ব্যাখ্যা করেন তিনি। বলেন, হোলিতে দেশে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়ানোর ইতিহাস রয়েছে। সেকথা মাথায় রেখেই এ নিয়ে হোলির আগে আলোচনা চায়নি সরকার।
আরও পড়ুন: বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেই রাজ্যসভার প্রার্থী করা হল জ্যোতিরাদিত্যকে
এদিন অধিবেশনের শুরু থেকেই সরকারপক্ষকে তুলোধোনা করে বিরোধীরা। বেশ কিছুক্ষণ বিরোধীদের হট্টগোলে অধিবেশন মুলতুবি হয়ে যায়। এরপর সন্ধেবেলা দিল্লি হিংসা নিয়ে বলতে ওঠেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।লোকসভায় দাঁড়িয়ে যিনি কিছুটা নাটকীয়ভাবেই বললেন, এই সংসদে প্রশ্ন উঠেছে দিল্লির দাঙ্গায় কত জন হিন্দু মারা গিয়েছেন। কত জন মুসলমান মারা গিয়েছেন। কত জন হিন্দুর ঘর পোড়ানো হয়েছে, মুসলমানেরই বা কত ঘর জ্বলেছে। আমি সেই পরিসংখ্যান দিতে পারি। কিন্তু সংসদে দাঙ্গা নিয়ে কোনওভাবেই হিন্দু মুসলমান করব না। দিল্লির দাঙ্গায় মারা গিয়েছেন ৫২ জন ভারতীয়। ৫৭৬ জন ভারতীয়র ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দোকান-সম্পত্তি নিয়ে নষ্ট হয়েছে আরও কয়েকশ ভারতবাসীর।
এদিন লোকসভায় জবাবি বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী শুরুতেই বলেন, কংগ্রেস ও বিরোধীরা অভিযোগ করেছিলেন, আমি দায় নিচ্ছি না কেন? দিল্লির দাঙ্গার ঘটনা নিয়ে পুলিশি ব্যর্থতার অভিযোগ করেছেন তাঁরা। কিন্তু আমি বলব, পুলিশ প্রশংসনীয় কাজ করেছে। যে জনবসতি এলাকায় দাঙ্গা হয়েছে সেখানে কুড়ি লক্ষ লোক বাস করেন। পুলিশ সেখান থেকে আগুন ছড়াতে দেয়নি। মাত্র ৩৬ ঘন্টার মধ্যে হিংসা দমন করে দেখিয়েছে। এখানেই থেমে না থেকে অমিত শাহ বলেন, কে বলেছে আমি এই মর্মান্তিক ঘটনায় দায় নিইনি। আমিই দায় নিচ্ছি। আমি এ ঘটনায় মর্মাহত।
HM Shri Amit Shah to reply on discussion over Delhi Violence in Lok Sabha
LIVE: Union Home Minister Shri Amit Shah's reply on discussion over the recent law & order situation in some parts of Delhi in Lok Sabha.
Posted by Bharatiya Janata Party (BJP) on Wednesday, 11 March 2020
তিনি জানান, দিল্লি পুলিশ খুব বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি আয়ত্ত্বে এনেছে। উত্তরপ্রদেশ থেকে ৩০০ দুষ্কৃতী আনা হয়েছিল হিংসা ছড়ানোর জন্য। শাহের অভিযোগ, এই হিংসার পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র ছিল। বিরোধীদের প্রশ্ন ছিল, দাঙ্গা বিধ্বস্ত এলাকায় কেন একবারও গেলেন না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী? কেন অজিত দোভালকে পাঠালেন তিনি? এর উত্তরে শাহ জানান, তিনি নিজে এলাকা পরিদর্শনে গেলে পুলিশ তাঁকে নিয়ে ব্যস্ত থাকত। এতে পুলিশের কাজে ব্যাঘাত ঘটত। এই কারণেই তিনি দোভালকে পাঠিয়েছিলেন। যাতে পুলিশের মনোবল বাড়ে। সেইসময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তাজমহল সফরেও তিনি না গিয়ে দিল্লির পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রেখেছিলেন।
আরও পড়ুন:সেভিংস অ্যাকাউন্টে সুদের হার কমাল SBI, তবে উঠে গেল মিনিমাম ব্যালেন্সের শর্ত,এসএমএস অ্যালার্টের চার্জ
হিংসা চলাকালীন মৌজপুর, ভজনপুরা, চাঁদ বাগ, কর্দমপুরী-সহ একাধিক জায়গা থেকে বার বার যোগায়োগের চেষ্টা করা হলেও, পুলিশের তরফে কোনও সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি বলে ক্ষতিগ্রস্তদের তরফে বার বার অভিযোগ করা হয়েছে। তা নিয়ে আদালতেও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে দিল্লি পুলিশকে। উস্কানিমূলক মন্তব্য করে যে বা যাঁরা হিংসায় মদত দিয়েছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হল না কেন, সেই নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় তাদের। কিন্তু এ দিন অমিত শাহ জানান, ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত ৭০০ এফআইআর দায়ের হয়েছে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে কাউকে রেয়াত করা হবে না বলেও জানান তিনি।
লোকসভায় এদিনের বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অনেকে ভাবছেন দাঙ্গা করে পার পেয়ে যাবেন। কিন্তু দিল্লির দাঙ্গায় যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবারকে আশ্বস্ত করে সংসদে দাঁড়িয়ে বলছি, কাউকে রেয়াত করা হবে না। কার কী ধর্ম, কী জাত, কী সম্প্রদায় তাও দেখা হবে না। দোষীরা শাস্তি পাবেই। তিনি এও বলেন, পুলিশ এখানেই থেমে থাকবে না। দাঙ্গার সময় কারা ঘর বাড়ি জ্বালিয়েছে সেই সব সিসিটিভি ও অন্যান্য ফুটেজ ঘেঁটে বের করা হচ্ছে। তাঁদের সম্পত্তি বিক্রি করে ক্ষতিপূরণের টাকা আদায় করা হবে। এবং সেই কাজ পুলিশ করবে না। তা করবেন দিল্লি হাইকোর্টের একজন বিচারপতি। এজন্য দিল্লি হাইকোর্টের কাছে চিঠিও পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী পুলিশের তারিফ করার পরই কংগ্রেস সহ বিরোধীদের একাংশ এদিন লোকসভা থেকে ওয়াক আউট করেন। ফলে তখন বিনা বাধায় তাঁর বক্তৃতা দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
(আপনার আশপাশের পরিবর্তনের অংশ হতে চান? আমাদের খবর পাঠান ইমেল্ ও হোয়াটআপের মাধ্যমে)