Site icon The News Nest

জানেন কি কর্ন পিশাচিনী সাধনা কি? জেনে নিন, তবে অনুশীলন করতে না যাওয়ায় ভাল!

krna pisachini

কর্ন মানে কান, অর্থাৎ কানে শোনার হেতু যে সাধনা। কিন্তু কানে কিছু বললে তো শোনার প্রশ্ন। কানে কানে ফিসফিস করে বলবে এক পিশাচিনী।

রূদ্রযামল তন্ত্র মতে কর্ণপিশাচী হলেন চৌষট্টি যোগিনীর এক যোগিনী। স্বাক্ষাৎ, শক্তির এক রূপ। আবার ভুতডামোর মতে উনি একজন মহাশক্তিধর যক্ষিনী। কর্ণ পিশাচীনি হলেন পিশাচদের এক বিশেষ ভাগ। বৌদ্ধ তন্ত্রেও তাঁর উল্লেখ আছে। কর্ন পিশাচিনী এক রকম ঋণাত্মক শক্তি হিসেবে পরিচিত। এর সংস্পর্শে আসা মানে ধ্বংসকে আহ্বান করা।

এর সাধনা করে সিদ্ধি পেলে এই কর্ন পিশাচিনী যে কোন মানুষের ভুত ও ভবিষ্যৎ ফিসফিস করে কানে কানে বলে দেন। সাধক অতি সহজেই যে কোন মানুষের ভূত ভবিষ্যত সব জেনে যায়। কর্ন পিশাচিনী সাধনার সমস্যা হচ্ছে যে এই পিশাচিনী একবার বলতে শুরু করলে আর থামতে চায় না। এই দেবীকে বশে রাখতে হয়, না হলে এ সাধকের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

এর গুরুত্ব জ্যোতিষ শাস্ত্রে অতুলনীয়। সাধক যদি জ্যোতিষের কাজে এর ব্যবহার করে তবে এর প্রোয়োগে সমস্ত মক্কেলের ভূত ও ভবিষ্যৎ বলে দেন।সাধক সহজেই যে কোনো কাজের কী পরিনাম হতে চলেছে তা পূর্বেই জানতে পেরে যায়।তবে কর্ন পিশাচিনী খুব নীচু স্তরের সাধনা। পিশাচ টিশাচ কাছে আসা মানে খুব খারাপ লক্ষন। সাধকের চেহারা কালো হয়ে যায়। ভুত ভবিষ্যত জানার অন্য অনেক পথ আছে।

সাধারণ ভাবে এই সাধনা যে কেউ করতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অঘোরি সম্প্রদায়ের সাধুরা এই সাধন বেশি করে। বিবাহিত ব্যক্তির এই সাধনা এড়িয়ে চলা উচিত। কারন পিশাচিনী অন্য নারীর সাথে সম্পর্ক থাকলে সেই নারীকে হত্যা করতে পারে।

এটা এক প্রকার শত্রু দমনকারী সাধনা। এর সাধনা কালে হয় সিদ্ধি নয় মৃত্যু। আর যদি কর্ন পিশাচিনী বিরুপ হয়ে যায় তবে সাধকের মৃত্যু অনিবার্য। এবং সে ক্ষেত্রে সাধকের প্রেত লোকে স্থান হয়, যাকে দ্বিতীয় নরক বলা যায়।

এই সাধনা করার কথা বা কর্ন পিশাচিনীর আগমনের সংবাদ গুপ্ত রাখতে হয়। কেউ যেন জানতে না পারে এই সাধনার ব্যাপারে। এই সাধনা করার সময় বর্জ্য পদার্থ ভক্ষন করাই রিতী। অর্থাৎ, নিজের মল ও মুত্র ভক্ষন করতে হয়। একটি তেল বা ঘী এর প্রদীপ জ্বালিয়ে মন্ত্র সাধনা করতে হয়। সাধনার সময় হাতের আঙ্গুল গুলি তেলে চুবিয়ে রাখতে হয়। মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে এক সময় উলঙ্গ পিশাচিনী এসে হাজির হয় এবং যৌন সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী হয়। আর যৌন সংযোগের জন্য উলঙ্গ পিশাচিনী জোরাজুরি করতে থাকে। যৌন কামনায় বশীভূত করে ফেলে। আমি বলি সাধ্য না থাকলে সাধনা হয় না। সাধকের লিঙ্গ পিশাচিনীর যোনিতে প্রবেশ করে। এবং সাধক পিশাচিনীর সাথে সম্পূর্ন রুপে যৌন ক্রিয়াতে নিমগ্ন হয়ে পড়ে। এই সময় সাধকের যদি বীর্যপাত ঘটে তবে নিশ্চিত মৃত্যু।

বীর্যপাত ঘটলে পিশাচিনী তার নিজের মাথা কেটে ফেলে এবং এমন সব দৃশ্য দেখাতে শুরু করে তখন সাধক আত্ম হননের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়। আর যদি সিদ্ধি হয় তবে প্রতি রাত্রিতে ঐ রতীক্রিয়া চলবে, যদিও পিশাচিনীকে স্পর্শ করা নিষিদ্ধ। পিশাচিনী অন্য কোন নারীর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে দেবে না। করলে তাকে মেরে দিতে পারে।

কর্ন পিশাচিনী সাধনার ক্ষেত্রে রক্ষাকারী কবচ নিয়ে সাধনা করা উচিত। কারন একবার পিশাচিনী বিরুপ হলে তার থেকে বাঁচতে এই কবচের ভূমিকা থাকবে। পিশাচিনীকে যদি শেষ না করে ফেলা যায় তবে পিশাচিনী সাধককেই মেরে ফেলবে। এই রক্ষাকারী কবচ পিশাচিনীকে শেষ করতে পারে।

একদিনে এই সাধনা হয় না। দিনের পর দিন ধরে রাতের সময় এই সাধনা করতে হবে। শ্মশানে বা কোন ফাঁকা জায়গায় করা যায়। আর, বাড়ির মধ্যেও করা যায়। কিন্তু, বাড়ির ক্ষেত্রে বাড়িটি বা জমিটি বিশেষ হওয়া প্রয়োজন।

এমন কিছু স্থান আছে যা দৈব্যগুন সম্পন্ন। মানে বলা যেতে পারে যেখানে ঈশ্বর চলাচল করে বা বিভিন্ন তলের বা ডাইমেনশনে যাওয়ার রাস্তা থাকে। সেই রকম জমিতে বাড়ি থাকলে সেখানে সমস্ত সাধনাই করা যায়।

এই সাধনা করতে করতে হঠাৎ একদিন কানে নারী কন্ঠ শুনতে পাওয়া যাবে। তখন বোঝা যাবে পিশাচিনী সাড়া দিয়েছে। তার পর সে সামনে এসে হাজির হবে।

সাধনার মন্ত্র 

এর অবশ্য অনেক মন্ত্র আছে এর মধ্যে নিম্নলিখিত মন্ত্রটি বহুল প্রচলিত। ফট বা ফাট স্বাহা দিয়ে যে মন্ত্র শেষ হয় সেটি ক্লিবলিঙ্গ আর ফট বা ফাট মন্ত্রের মাধ্যম হলো শত্রুর নাশ করার জন্যে এক প্রকার অস্ত্র প্রোয়োগ প্রক্রিয়া বা মন্ত্র। মন্ত্রের সব থেকে বড় সমস্যা হলো এর সঠিক উচ্চারণ। ঠিক মতো উচ্চারণ না করতে পারলে কোন লাভ নেই।

“ওম ঐম হ্রীম শ্রীম দম হম ফট কনকবজ্রবৈদূর্যমুক্তালংকৃতভূষণে অহে অহে আগচ্ছ আগচ্ছ মম কর্ণে প্রবিশ্য প্রবিশ্য ভূতভবিষ্যবর্তমান কালজ্ঞান দূরদৃষ্টিদূরশ্রবণম ব্রুহি ব্রুহি অগ্নি স্তম্ভনম শত্রু স্তম্ভনম শত্রু মুখ স্তম্ভনম শত্রু গতি স্তম্ভনম শত্রু মতি স্তম্ভনম পরেশম গতিম মতিম সর্ব শত্রুনাম ভাগ আরম্ভ স্তম্ভনম কুরু কুরু শত্রুকার্যহানিকারী মম কার্যসিদ্ধিকারী শত্রুনামউদ্যোগবিন্ধনকারী বীরচামুন্ডনী হঠকধারিণী পুরীপত্তনস্থানসন্মোহনী অসাধ্যসাধিনী ওম হ্রীম শ্রীম ঐং ওম দেবী হন হন হুম ফট স্বাহা”

তবে কর্ন পিশাচিনীকে এক মনে ডেকেও আনা যায়। সেক্ষেত্রে মনের মধ্যে কর্ন পিশাচিনী সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে। ভূত সিদ্ধি না থাকলে অবশ্য প্রেতকে বা পিশাচ ডাকা যায় না। ঐ যে বলেছি সাধনার শুধু সাধ থাকলে হবে না সাধ্য থাকতে হবে।

সাধককে প্রথমে আধ্যাত্মিক হতে হবে। তার পর আত্মা জাগরন ঘটাতে হবে। আর এই আত্মা জাগরন ব্যাপারটি মোটেই সহজ নয়। আধ্যাত্মিকতা থেকে জাগরন গুরুর কাছে শেখাই পরম্পরা। তবে জাগরন ভিতর থেকে ঘটে। আর এক জন্মে নাও ঘটতে পারে। তবে, প্রচুর মানুষের হয়। আর একবার হলে সেই সৌভাগ্যের অধিকারীকে গুরুর সংস্পর্শে থেকে নিজেকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। এবং সে একদিন খালি চোখে ভূত দর্শন করতে সমর্থ হবে।যদি সে ভূত দেখতে না পারে তবে কর্ন পিশাচিনীকেও দেখতে পাবে না। তখন এ সাধনা কেন কোন সাধনাই করাই বৃথা।

 

Exit mobile version