কলকাতা: করোনার দুশ্চিন্তার মধ্যেই আমফানের দাপট ৷ ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে প্রায় ধ্বংসস্তূপ কলকাতা সহ দুই ২৪ পরগণা ৷ আমফানের ধ্বংসলীলায় বিপর্যস্ত কলকাতা ৷ উপড়ে গিয়েছে তিলোত্তমার বুকে বেড়ে ওঠা হাজার হাজার গাছ ৷ মৃত সবুজের সেই সারি, ঘরহারা সম্বলহীন মানুষগুলির হাহাকার প্রভাব ফেলেছে হবু মা শুভশ্রীর মনেও ৷ সেই কষ্ট থেকেই শব্দ খুঁজে সন্তানের সঙ্গে ভাগ করে নিলে তাঁর অনুভূতি ৷
এলাকার পর এলাকা ধ্বংস, বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ। এমন অসহায় অবস্থা দেখে নিজেকে স্থির রাখতে পারলেন না অভিনেত্রী শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়। এদিন গর্ভস্থ সন্তানের জন্য কলম ধরলেন। জানালেন ছোট্ট প্রাণের সমস্ত না পাওয়া এবং এক মায়ের অসহায়তা। নিজের সোশাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে শেয়ার করলেন- তোর জন্য।
লিখলেন, ”মনটা বড্ড খারাপ। সারাক্ষণ চেষ্টা করছি মনটাকে ঠিক রাখার, কিছুতেই পারছি না। সবাই বলে প্রেগনেন্ট হলে হাসিখুশি থাকতে হয়, কী করে থাকব বল তো! তোর কথা ভেবেই সব ভোলার চেষ্টা করছি। কিন্তু এত ধ্বংসস্তূপ আগে কখনও দেখিনি যে… কান্না চেপে রাখতে পারছি না। নিজের মনটাকে বোঝানোর চেষ্টা করছি, যে না না এখন মন খারাপ করলে চলে না! ভাবছি তুই কী ভাববি… কিন্তু নিজেকে আটকে রাখতে পারছি না।”
”জানিস কত হাজার হাজার গাছ মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। কত আদ্যিকালের বটগাছ, অশ্বত্থগাছ আরও কত কী! সেগুলোকে আর ফেরানো যাবে না। আমি যে গাছকে এত ভালবাসতাম আগে কখনও অনুভব করিনি। গাছেদের জন্য এত মনখারাপ…ভাবিনি। তোকে গল্ফগ্রীন, সাউদার্ন এভিনিউ, ময়দানের সবুজ দৃশ্যগুলো আর দেখানো হল না। সেই বড় বড় গাছগুলো…সেগুলো তো শুধু গাছ ছিল না। ছিল হাজার হাজার পাখির বাসা। তুই দেখতে পেলি না।”
“শুনলাম সুন্দরবনে চাষের জমিগুলোতে নদীর জল ঢুকে গেছে, ওখানকার নদীর জল নোনা। সারাবছর আর চাষ হবে না। কী করে চলবে ওদের? আজকে সারাদিন একটা ছবি সোশাল মিডিয়ায় ঘোরাফেরা করছে, বছর চারেকের একটা বাচ্চা বুক সমান জল পেরিয়ে খাবার নিতে এসেছে ত্রাণ শিবিরে। এরপরেও তোর কথা ভেবে কী করে বেশি বেশি খাই বলতো? এই তো আর কিছু বছর পরে তুইও ওর সমানই হবি। ও তো তোর মতোই। কী দোষ করেছিল ও?”
“মাঝে চিৎকার করে প্রকৃতিকে বলতে ইচ্ছে করছে.. আর কত? আবার ভয় লাগছে। পাছে, পালটা প্রশ্ন আসে! পৃথিবীর হৃৎপিন্ড যখন দাউ দাউ করে জ্বলছিল, কোথায় ছিল তোদের মনুষ্যত্ব? প্রকৃতির কোল কেটে যখন ফ্ল্যাটবাড়ি বানাস, তখন তোদের বিবেকে বাঁধে না? জঙ্গলের মাঝেই রেল লাইন পাতিস, আর তাতেই কাটা পড়ে কত হাতির দল। কটা প্রশ্ন করিস তোরা মানুষরা? ছি-ছি সত্যিই কোনও উত্তর দিতে পারব না। তার জন্যেই চুপ করে আছি।”
সন্তানকে লেখা শুভশ্রীর এই মন খারাপের চিঠি শুনতে গলার কাছে কান্না দলা পাকিয়ে আসছে। ক্ষত সেরে ওঠার আশায় তো সকলেই।
লকডাউনের মধ্যেই এসেছিল সুখবর ৷ নিজেদের দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকীতে গৃহবন্দি রাজ শুভশ্রী তাই সোশ্যাল হ্যান্ডেলেই শেয়ার করেছিলেন তাদের প্রেগনেন্সির খবর ৷ তার মাঝেই আবাসনে করোনা সংক্রমণের খবরে আতঙ্কিত রাজ-শুভশ্রীও ৷ এরপরই এল ভয়ঙ্কর আমফান ৷ শুভশ্রীর মুখেই শুনে নিন তাঁর খুদের জন্য লেখা খোলা চিঠি-