রবিবার রাতে বাংলাদেশের জনপ্রিয় নায়িকা পরীমণির ফেসবুক পোস্ট নিয়ে তোলপাড় সোশ্যাল মিডিয়ায়। পরীমণির অভিযোগ পুলিশে অভিযোগ জানানোর চেষ্টা করলেও কোনও ফল পাননি তিনি। বেজায় হতাশ হয়ে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে ফেসবুকের দেওয়ালে খোলা চিঠি লেখেন পরীমণি। যদিও সেই চিঠিতে অভিযুক্তের নাম প্রকাশ্যে আনেননি নায়িকা।
ফেসবুক পোস্টে পরীমনি লেখেন- ‘আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমাকে রেপ এবং হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’ শৈশবে মাতৃহারা নায়িকা দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করে লিখেছেন, ‘আমার আপনাকে দরকার মা। আমার এখন বেঁচে থাকার জন্য আপনাকে দরকার মা। মা আমি বাচঁতে চাই। আমাকে বাঁচিয়ে নাও মা।’
অভিনেত্রী পরিষ্কার জানান, বারবার পুলিশে অভিযোগ জানানোর চেষ্টা সত্ত্বেও কেউ তাঁর অভিযোগ পর্যন্ত জমা নিচ্ছে না। চারদিন ধরে থানা (বনানী থানা) তাঁকে ঘোরাচ্ছে, কিন্তু অভিযোগ গ্রহণ করছে না। নিরুপায় হয়ে প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি লিখছেন তিনি। চিঠিতে তাঁর সাফ বয়ান, ‘আমি মেয়ে, আমি নায়িকা, তার আগে আমি মানুষ। আমি চুপ করে থাকতে পারি না। আজ আমার সাথে যা হয়েছে তা যদি আমি কেবল মেয়ে বলে, লোকে কী বলবে এই গিলানো বাক্য মেনে নিয়ে চুপ হয়ে যাই, তাহলে অনেকের মতো (যাদের অনেক নাম এক্ষুণি মনে পরে গেল) তাদের মতো আমিও কেবল তাদের দল ভারী করতে চলেছি হয়তো’।
এরপর রাতেই নিজের বাড়িতে সংবাদিক বৈঠক ডাকেন পরীমণি এবং সেখানে অভিযুক্তদের নাম-পরিচয় ফাঁস করেন এই জনপ্রিয় নায়িকা। পাশাপাশি কোথায়, কীভাবে এই ঘটনা তাঁর সঙ্গে ঘটেছে তাও জানান অভিনেত্রী। নায়িকা জানান, ঘটনার মূল দোষী (অভিযুক্ত) নাসির ইউ মাহমুদ নামে এক ব্যক্তি। উত্তরা বোট ক্লাব নামে এক ক্লাবের প্রাক্তন সভাপতি তিনি। পেশায় ব্যবসায়ী। ঘটনার দিন (গত বুধবার) রাত ১২টার পর পরিচিতজনদের নিয়ে ওই ক্লাবে গিয়েছিলেন পরীমনি। সেদিন চারজন মদ্যপ ব্যক্তি পরীমনিকে শারীরিক নির্যাতন করে, চড়-থাপ্পড় পর্যন্ত মারেন। এরপর নেশার জাতীয় কিছু খাইয়ে ধর্ষণের চেষ্টাও করা হয় বলে অভিযোগ জানান নায়িকা।
আরও পড়ুন: Dhoom 4: দীপিকার সঙ্গে জুটি বাঁধবেন সলমন নাকি অক্ষয়? নেটদুনিয়ায় জল্পনা তুঙ্গে
পরীর কথায় জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের পুলিশের আইজিপি বেনজির আহমেদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলে পরিচয় দিয়েছিলেন অভিযুক্ত ব্যক্তি। এ ছাড়া সেই ব্যক্তির সম্পর্কে আর কোনও তথ্য তাঁর কাছে নেই বলেই জানিয়েছেন পরী। ফেসবুক পোস্টে পরী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন, ‘কে করবে সঠিক বিচার ? আমি খুঁজে পাইনি গত চার দিন ধরে। থানা থেকে শুরু করে আমাদের চলচ্চিত্রবন্ধু বেনজির আহমেদ আইজিপি স্যার! আমি কাউকে পাই না।’
এরপর সাংবাদিক বৈঠকের মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়েন নায়িকা, এবং কোনও প্রশ্নের জবাব দেননি তিনি। তবে পরীমণির ফেসবুক পোস্ট ও সাংবাদিক বৈঠক ঘিরে হইচই ওপার বাংলায়। এরপর ‘ধর্ষণ ও খুনের চেষ্টার’ অভিযোগে সাভার থানায় মামলা দায়ের করেন অভিনেত্রী। অভিযোগের ভিত্তিতে প্রধান অভিযুক্তসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
অভিযুক্ত নাসির উদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ীকে তাঁর উত্তরার বাড়ি থেকে আটক করা হয়েছে বলে জানান গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার হারুন-অর-রশীদ। বাকিদেরও একই স্থান থেকে আটক করা হয়। ওই ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে মাদক উদ্ধারও করা হয় বলে জানাচ্ছে পুলিশ। যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে সবাইকে ঢাকার মিন্টোরোডে গোয়েন্দা বিভাগের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
পুলিশের মুখপাত্র সোহেল রানা বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘সকালে পরীমণি তাঁর লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। তাঁর বয়ান রেকর্ড করা হয়। এরপর পুলিশের কয়েকটি দলে অভিযান চালায়। মামলায় পরীমণি ৬ জনের বিরুদ্ধে তাঁকে ধর্ষণ ও খুনের চেষ্টার অভিযোগ এনেছেন। এদের ২ জনের নাম এবং বাকি চারজনকে অজ্ঞাতনামা বলে উল্লেখ করা হয়েছে’।
আরও পড়ুন: সুশান্তর মৃত্যুদিনটি ‘ওয়ার্ল্ড অ্যান্টি নেপোটিজম ডে’ হিসেবে পালন অনুরাগীদের