The News Nest: ‘Fare’ আর ‘Lovely’, এতদিন এই দুই শব্দের সহাবস্থান হলেও, এবার সেই রীতিতে ছেদ পড়েছে। কিন্তু তাতে করে মানসিকতার কিছু পরিবর্তন হবে কিনা জানা নেই। তবে হিন্দুস্তান ইউনি লিভারের র এই উদ্যোগে কিন্তু বেজায় খুশি বিপাশা বসু ও শাহরুখের ‘শ্যামলা’ কন্যা সুহানা খান।
ছোট থেকে মেয়েটা শুনত গায়ের রঙ ‘শ্যামলা’। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খানিক ছক ভেঙ্গে সেই মেয়েই পা বাড়াল গ্ল্যামার দুনিয়ায়। বলিউড তাঁকে আপন করেছে ঠিকই, তবে তাঁর নামের পাশে জুড়ে গেছে দুটি শন্দবন্ধ। ‘ডাস্কি বিউটি’। তিনি জানেন, অভিনয় ক্ষমতা, স্ক্রিন প্রেসেন্সের চেয়ে অনেক বেশি আলোচিত থেকেছে তাঁর গায়ের রঙ। বিপাশা তাঁর ইন্সটাগ্রাম পোস্টে শেয়ার করলেন, বিউটি কন্টেস্ট জেতার পর সমস্ত সংবাদমাধ্যম তাঁর গায়ে লাগিয়েছিল কলকাতা থেকে আসা ‘শ্যামলা মেয়ে’র তকমা।
লিখেছেন, “ছোট থেকেই শুনতে হত সোনির থেকে বনি কালো। ওর গায়ের রং-টা একটু চাপা না? এধরণের অজস্র কথা। যদিও আমার মা-ও শ্যামাঙ্গী, আর আমি খানিক মায়ের মতোই দেখতে, তবুও বহুবার আমার গায়ের রং আত্মীয়-স্বজনদের আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে! আমি যখন ষোড়শী, মডেলিং কেরিয়ার শুরু করলাম, দেখলাম সুপার মডেল প্রতিযোগিতা জেতার পর সব কাগজে হেডলাইন বেরিয়েছে- কলকাতার শ্যামবর্ণা তন্বী সুপার মডেল প্রতিযোগিতা জিতেছে। কেন বলুন তো ‘শ্যামবর্ণা’ শব্দটা ব্যবহার করা হবে?”
“এরপর যখন নিউ ইয়র্কে গেলাম পেশার সুবাদে। বুঝলাম আমার গায়ের রং-কে সেখানে গুরুত্ব দেওয়া হল। অনেকেরই নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছিলাম তখন। এরপর ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ শুরু করার পর দেখলাম, আমাকে সবাই পছন্দ করছে। এক নতুন ‘আমি’কে আবিষ্কার করলাম। কিন্তু ওই ‘Dusky Beauty’ কিংবা শ্যামবর্ণা সুন্দরীর তকমাটা আর ঘুচল না! বলা হল আমার গায়ের রঙের জন্যই নাকি আমার মধ্যে যৌন আবেদন রয়েছে। কিন্তু আমার মতে আমার ব্যক্তিত্বেই সেক্স এপিল রয়েছে”, বললেন বিপাশা।
আরও পড়ুন: অর্জুন কাপুরের জন্মদিনে মন ছুঁয়ে যাওয়া পোস্ট মালাইকা-সোনমের
পাশাপাশি তিনি এও বলেছেন যে কীভাবে গত ১৮ বছর ধরে তিনি কোটি কোটি টাকার ফর্সা হওয়ার প্রসাধনী পণ্যের বিজ্ঞানণের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। “একটা দেশের সিংহভাগ মানুষের গায়ের রংই যেখানে শ্যামলা, সেদেশে ফর্সা করানোর মিথ্যে স্বপ্ন কী করে যে বিক্রি করে জানি না! এসব বন্ধ হওয়া দরকার। তবে দেরিতে হলেও প্রশংসনীয় উদ্যোগ সংস্থার। অন্য কোম্পানিগুলিরও দেখে শেখা উচিত”, মন্তব্য এই বঙ্গ তনয়ার।
অন্যদিকে, বিপাশার সঙ্গে সহমত অভিনেত্রী তথা পরিচালিকা নন্দিতা দাসও (Nandita Das)। তিনি বললেন, “দেখি অনেক অভিনেত্রীরাই একেকটি ছবি করছে আর তাঁদের গায়ের রং পরিবর্তন হচ্ছে, আরও ফর্সা হচ্ছে! আর তুমি যদি কালো হও, তাহলে তোমাকে এগুলো শুনতে হয়। কেরিয়ারে গোড়ার দিকে আমার প্রত্যেকটা সাক্ষাৎকারে আমার গায়ের রং-টাই কেমন ইস্যু হয়ে উঠত। কাজ-পরিশ্রম সবকিছুর উর্দ্ধে গিয়ে। তবে ধন্যবাদ মা-বাবাকে, ওঁরা কখনও আমাকে এসব বুঝতে দেয়নি।”
একই ইস্যুতে মুখ খুলেছেন অভয় দেওলও (Abhay Deol)। বললেন, “সত্যিই কী সুন্দর একটা দিনের শুরুয়াৎ! এই জায়গায় পৌঁছতে আমাদের কৃষাঙ্গহত্যা দেখতে হল, তারপর ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার মুভমেন্টও করতে হল। বর্ণ নিয়ে আমাদের দেশের সংস্কৃতিতে পরিবর্তনের নয়া পদক্ষেপটা এই অগণিত দেশবাসীর সরব হওয়ার ফলেই হয়েছে।আরও বহুদূর যেতে হবে আমাদের। এ তো সবে শুরু। জনতার শক্তি! “
ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে এই খবর সম্পর্কে ফলোয়ারদের অবগত করান সুহানা খান। শাহরুখ খান ২০১৮ সালে এক সাক্ষাত্কারে সুহানাকে শ্যামলা বলে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে আমার মেয়ে শ্যামলা কিন্তু আমার চোখে ওই এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী কন্যা। আমাকে এই নিয়ে কেউ অন্যকিছু বললেও আমি মানব না’।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মীর হাতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার পর থেকে গোটা বিশ্বে বর্ণবিদ্বেষবিরোধী আন্দোলন জোরালো হয়েছে। আর সেই আন্দোলনের আঁচ থেকে রক্ষা পায়নি দেশ-বিদেশের ফেয়ারনেস ক্রিম প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি। ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি’-র নামের মধ্যেই বর্ণবিদ্বেষী মনোভাব খুঁজে পেয়েছিলেন নেটিজেনরা। সেই নিয়ে ব্যাপক শোরগোল শুরু হয় নেটদুনিয়ায়। মূলত তার জেরেই এই সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। সেলেবদের ফেয়ারনেস ক্রিমের বিজ্ঞাপনী প্রচারের মুখ হওয়ার জন্যও কম বিতর্ক হয়নি।
আরও পড়ুন: রিয়াকে চিনি না , অঙ্কিতার সঙ্গে বিয়ের ঠিক হয়েছিল, নীরবতা ভাঙলেন সুশান্তের বাবা