‘এক থা রাজা, এক থি রানি। দোনো মর গ্যায়ে, খতম কহানি’…
কোনো সিনেমা কি কখনো কোনো ঘটনার পূর্বাভাস হতে পারে? কিংবা ভবিষ্যতবাণী? সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘দিল বেচারা’ সিনেমা দেখে একথা আপানার মনে হতে বাধ্য – একথা হলপ করে বলতে পারি। সিনেমার মুখ্য চরিত্র কথা বলছে মৃত্যু নিয়ে, কথা বলছে একজনের মৃত্যু পরবর্তী শুন্যতা নিয়ে। আর যখনই সেই কথা গুলো বলছে, আপনি চমকে উঠছেন? ঠিক বলিনি? মাত্র একমাস আগে আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন সুশান্ত সিং রাজপুত। আমরা অনুভব করেছি স্বজনহারার কষ্ট, যন্ত্রনা। প্রতি নিয়ত প্রশ্ন আছড়ে পড়ছে সোশ্যাল মিডিয়ার দেওয়ালে – কেন? কেন? কেন? যার উত্তর কোনোদিন জানা যাবে কিনা সন্দেহ।
জন গ্রিণের লেখা উপন্যাস ফল্ট ইন আওয়ার স্টারস অবলম্বনে তৈরি হয়েছে পরিচালক মুকেশ ছাবরার এই ছবি।যারা এই বই পড়েছেন এবং ইংরেজি সিনেমাটি দেখেছেন, তারা সকলেই প্লট জানেন। গল্পের মধ্যে আলাদা করে কোনো সারপ্রাইজ নেই। জামসেদপুরের সাদামাটা বাঙালি পরিবার। কেয়ারিং মা স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। আর আদুরে, মেয়েকে নিয়ে চিন্তাশীল বাবার ভূমিকায় শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। নায়িকা সঞ্জনা সঙ্ঘী ওরফে কিজি বাসু, থাইরয়েড ক্যানসারে আক্রান্ত। তাঁকে সর্বক্ষণ অক্সিজেন সিলিন্ডার বয়ে বেড়াতে হয়। কিজি ও তাঁর মা অভিনয়ে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় কিছুতেই যেন বুঝতে পারেন না জীবনকে নিয়ে কী ভাবে এগিয়ে যাবেন। আর সেখানেই সূর্যের রশ্মি হয়ে আলোকপাত ইম্যানুয়েল রাজকুমার জুনিয়র ওরফে ম্যানির।
আরও পড়ুন: #Candle4SSR: যেখানেই থাকো, হাসিখুশি থেকো, প্রদীপ জ্বালিয়ে সুশান্তের জন্য প্রার্থনা অঙ্কিতার
রেগি মিলারের জার্সিতে তাঁর স্বপ্নের রাজকুমারের সঙ্গে প্রথম দেখা হয় কিজি। বিরক্তিকর, গায়েপড়া টাইপ। কিন্তু কিজি পরে জানতে পারে বোন ক্যান্সারে আক্রান্ত ম্যানি। তারপর ভালোলাগা, বন্ধুত্ব এবং প্রেম। সবশেষে একজনের ছেড়ে চলে যাওয়া। সিনেমা জুড়ে বড় মনের এক মানুষকে দেখানো হয়েছে ছোট ছোট জিনিসে কী ভাবে বড় করে বাঁচা যায় তার পাঠ দিতে। ১ ঘণ্টা ৪১ মিনিট ৩০ সেকেন্ড এই ছবির জন্য বড্ড কমই মনে হয়। কিন্তু শেষে রয়েছে একটা শূন্যতা। একটা মন খারাপের সুর। যেন শেষ হয়ে যাচ্ছে… এমন একটা অনুভূতি। আর সত্যি হয়ও তাই।
আবেগ বাদ দিতে এই সিনেমা দেখতে গেলে বেশ কিছু ভুল নজরে পড়বেই আপনার। কিজির পরিবার বা তাঁর চিকিৎসককে দেখানো হয়েছে সিনেমায়, বেশ ভালো ভাবেই দেখাও হয়েছে, অথচ ম্যানির পরিবার গোটা সিনেমাতে অনুপস্থিত। ঠাকুমা, বাবা- মায়ের ঝলক ছাড়া কিছুই নেই। অথচ তাঁদের সঙ্গে ক্যানসার আক্রান্ত ম্যানির কেমন সম্পর্ক, তা জানতে ইচ্ছা করে। প্যারিস যাওয়ার পর কিজির মায়ের হঠাৎ বদলে যাওয়া চোখে লাগে। কিছু কিছু সময় স্পষ্ট বোঝা যায় যে পরের দৃশ্য কেটে দেওয়া হয়েছে। কিজি ও ম্যানির অনস্ক্রিন চুমু বা ঘনিষ্ট দৃশ্য বাদ পরে গিয়েছে যে কোনো কারণে। প্রেমের শহর প্যারিসে শুটিং হলেও প্রেমটাই যেন কম পরে গেল সেখানে।
তবে গল্পে খামতি থাকলেও নিজের শেষ সিনেমাতেও অভিনয় দক্ষতা প্রমান করে দিয়ে গেছেন সুশান্ত। মৃত্যুর ছায়ায় ঘিরে থাকা একপ্রান্ত চঞ্চল যুবক।যাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি বড় করে স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি।’ ‘ছিছোঁড়ে’র পর আবারও, এই সিনেমাতেও বেঁচে থাকাতে শেখাল সুশান্ত। শেখাল দুঃসময়েও কীভাবে ফিনিক্স পাখির মতো ডানা মেলে উড়ে যেতে হয়। এ কথা জোর গলায় বলা যায় এটা সুশান্তের সেরা পারফরম্যান্স নয়। তার জন্য দেখতে হবে, ধোনি, শোনচিড়িয়া, ছিচরে, ব্যোমকেশ বক্সী। তবে এই সিনেমা থাকবে মনের খুব কাছে, কারণ আর কোনো দিন পর্দায় দেখা যাবে না সুশান্তের নজরকাড়া হাসি, মন ভোলানো অভিনয়।
ভার্সেটাইল অভিনেতার সংজ্ঞা দিতে হলে এর পর থেকে বলিউডপ্রেমীরা অবশ্যই সুশান্ত সিং রাজপুতের নাম নেবে।শুধু একটাই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতে ইচ্ছে করে – কেন এত তাড়াতাড়ি চলে গেলে? তোমার তো আরও অনেক ছবি উপহার দেওয়ার ছিল সুশান্ত। WE MISS YOU SUSHANT…
আরও পড়ুন: ৯. ৯ রেটিং! দিল বেচারা মুক্তি পেতেই সুশান্ত প্রেমীরা ভরিয়ে দিল ভালোবাসায়