তিনি বলিউডের ‘ট্র্যাজেডি কিং’। তবে পর্দায় ট্র্যাজেডির নায়ক দিলীপ কুমারের ব্যাক্তিগত জীবন ছিল বরাবরই রঙিন। হতে চেয়েছিলেন ব্যবসায়ী । কিন্তু ঘটনাচক্রে হয়ে গেলেন নায়ক। কেরিয়ারের মতো বর্ণময় ইন্ডাস্ট্রির ‘প্রথম খান’-এর ব্যক্তিগত জীবনও। ১৯৪৮ সালে মুক্তি পায় ‘শহিদ’। ছবিতে দিলীপকুমারের নায়িকা ছিলেন কামিনী কৌশল। এই ছবিতে অভিনয় করার সময়ে তাঁদের প্রেম ছিল ইন্ডাস্ট্রিতে বহুচর্চিত বিষয়।
দু’জনে বিয়ে করবেন বলেও ঠিক করেছিলেন। কিন্তু বাধা দিলেন কামিনীর দাদা। তিনি রাজি ছিলেন না এই সম্পর্কে। শোনা যায় তিনি দিলীপকুমারকে হুমকিও দিয়েছিলেন।এর পর তাঁদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। সে বছরই কামিনী বিয়ে করেন তাঁর প্রয়াত দিদির স্বামীকে। দুর্ঘটনায় নিহত দিদির দুই মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেন কামিনী।
এর পর দিলীপকুমার প্রেমে পড়েন মধুবালার। দীর্ঘ সাত বছর চলেছিল তাঁদের প্রেমপর্ব। এই সম্পর্ক ভেঙে যায় দুই তারকার ইগো সমস্যায়। একটি ছবির শুটিং লোকেশনে মধুবালাকে যেতে দিতে রাজি ছিলেন না তাঁর বাবা।পরিচালক-প্রযোজক অনুরোধ করেন দিলীপকুমারকে। তিনি যেন কথা বলেন মধুবালার বাবার সঙ্গে। দিলীপকুমারের অভিযোগ ছিল, মধুবালার বাবা তাঁকে অপমান করেছেন।
অন্য দিকে মধুবালার বক্তব্য ছিল, দিলীপকুমারের কাছে অপমানিত হয়েছেন তাঁর বাবা আতাউল্লাহ খান। তিনি তাঁর বাবার বিরুদ্ধাচারণ করতে পারেননি। মধুবালার কথায় আতাউল্লাহর কাছে ক্ষমা চাননি দিলীপকুমার। চাপানউতরের জেরে ভেঙে যায় দিলীপকুমার-মধুবালা প্রেম।১৯৬০ সালে মধুবালা বিয়ে করেন কিশোরকুমারকে। কিন্তু দিলীপকুমার বেশ কয়েক বছর কোনও সম্পর্ক থেকে দূরে ছিলেন। ১৯৬৬ সালে তিনি বিয়ে করেন সায়রা বানুকে। শোনা যায়, তাঁর বিয়ের খবরে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন অসুস্থ মধুবালা। তার তিন বছর পরে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে প্রয়াত হন তিনি।
সায়রা বানুকে বিয়ের সময় দিলীপকুমারের বয়স ছিল ৪৪ বছর। সায়রা বানু ছিলেন ঠিক অর্ধেক, মাত্র ২২ বছর। পরে সায়রা বানু একাধিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি ১২ বছর বয়স থেকেই দিলীপকুমারের অন্ধ ভক্ত ছিলেন।অথচ তাঁর স্বপ্নের নায়কই তাঁকে প্রথম দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন না। প্রথম আলাপে সায়রা বানুর রূপের প্রশংসা করেছিলেন দিলীপকুমার। কিন্তু ‘বাচ্চা মেয়ে’ বলে বজায় রাখতেন দূরত্ব।
আরও পড়ুন: করিনার হাত ধরেই প্রকাশ্যে সইফের ‘ভূত পুলিশ’ ছবির পোস্টার, জেনে নিন মুক্তির তারিখ
এ দিকে দিলীপকুমারের ছবির ভক্ত সায়রা বানু নিজেই এক দিন পা রাখলেন ইন্ডাস্ট্রিতে। শোনা যায়, সে সময় রাজেন্দ্র কুমারের সঙ্গে তাঁর মৃদু ভাল লাগার সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সায়রার মা, বিগত দিনের অভিনেত্রী নাসিম বানুর হস্তক্ষেপে বিবাহিত রাজেন্দ্রকুমারের কাছ থেকে সরে আসেন ‘জংলি’ ও ‘পড়োসন’-এর নায়িকা।এর পর নাসিম বানুই উদ্যোগী হন দিলীপকুমারের সঙ্গে মেয়ের বিয়ের।
১৯৬৬ সালের ১১ অক্টোবর সায়রার সঙ্গে বিয়ে করেন দিলীপ কুমার। তখন সায়রার বয়স ২২, দিলীপ কুমারের ৪৪। দিলীপ কুমার তাঁর বায়োগ্রাফিতে লিখেছিলেন, সায়রার গর্ভে এসেছিল সন্তান। তবে সন্তানধারনের পর সায়রা অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসক বাঁচাতে পারেনি দিলীপ-সায়রার সন্তানকে। ঠিক এই ঘটনার পরেই দিলীপ কুমার ১৯৮১ সালে ফের বিয়ে করেন। যা কিনা টিকে ছিল মাত্র দুবছর। প্রেমের টানে ফের সায়রার কাছেই ফিরে আসেন তিনি। বায়োগ্রাফিতে দিলীপ সাহাব জানিয়েছেন, দ্বিতীয় বিয়ের সিদ্ধান্ত আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল।
অন্যদিকে, দিলীপের সংসারে মন দিতেই নিজের কেরিয়ারকে ছেড়ে ছিলেন সায়রা। দিলীপ সাহাবকেই জীবনের মূলমন্ত্র করেছিলেন তিনি। হঠাৎ করে স্বামী ছেড়ে যাওয়ায় ভেঙেও পড়েছিলেন সায়রা। তবে দিলীপের প্রতি ভালবাসা একটুও কমেনি। বরং দিলীপ সাহাবের কথা উঠলেই সায়রা বলতেন দিলীপ কুমার আমার কাছে কোহিনুর। যার প্রেমে সারাজীবন আবদ্ধ থাকব!
বহুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন অভিনেতা দিলীপ কুমার। বার্ধক্যজনীত নানা সমস্যায় কাবু হয়েছিলেন তিনি। দিলীপ কুমারের সেবা নিজের হাতেই করতেন সায়রা। খেয়াল রাখতেন সব কিছুর। অনুরাগীদের কাছে নিয়মিত তুলে ধরতেন দিলীপ কুমারের শারীরিক অবস্থার কথা। সায়রার সেই কোহিনুর আজ আর নেই। যা পড়ে রইল, তা সায়রা ও দিলীপ কুমারের এক ম্যাজিকাল লাভ স্টোরি। যা কিনা অনুপ্রাণিত করবে ডেটিংয়ে যুগের ভালবাসাকে।
আরও পড়ুন: ‘ট্র্যাজেডি কিং’য়ের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ মোদী-মমতার, ‘যুগের অবসান’, বললেন শোকাহত অমিতাভ