Site icon The News Nest

ফেলুদা ফিরতেই জমে গেল শীত! নস্টালজিয়া উস্কে বাজিমাত সৃজিতের

feluda

ঘন সবুজ বনের মধ্যে দিয়ে ফুল স্পিড ছুটে চলেছে একটি সবুজ আম্বাসেডর। সামনের সিটে বসে জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে এক যাত্রী ফেললেন সিগারেটের ছাই। বাকি দুই যাত্রী মগ্ন গোয়েন্দা গল্প নিয়ে। ছোটবেলায় ফেলুদা পড়ে যারা বড় হয়েছে, তাদের কাছে এই দৃশ্য নিতান্তই চেনা। বাঙালির প্রিয় ‘থ্রি মাস্কেটিয়ার্স’ ফেলুদা-তোপশে-জটায়ু। একটা সময় অবধারিতভাবে বড়দিনে ফেলুদার ছবি মুক্তি পেত। কালের নিয়মে ট্রাডিশনে ছেদ পড়ে। কিন্তু আড্ডাটাইমস আর সৃজিত মুখোপাধ্যায় (Srijit Mukherjee) এই হাত ধরে আবারও ফিরল ফেলুদা।

নিছক বেড়াতে গিয়ে রহস্যে জড়িয়ে পড়া ফেলুদার গল্পে খুব স্বাভাবিক ঘটনা। বহু গল্পেই এমনটা ঘটেছে, ‘ছিন্নমস্তার অভিশাপ’ও ব্যতিক্রম নয়। হাজারীবাগে মক্কেল সর্বেশ্বর সহায়ের ফাঁকা বাংলোয় ছুটি কাটাতে গিয়ে চৌধুরী পরিবারের সঙ্গে ফেলু, তোপসে, জটায়ুর আলাপ হয়। বাড়ির কর্তা মহেশ চৌধুরীর আমন্ত্রণে রাজরাপ্পায় তাদের সঙ্গে পিকনিক করতে গিয়ে ঘটে দুর্ঘটনা। তারপর এক অদ্ভুত রহস্য সমাধানে ফেলুদাকে জড়িয়ে পড়তে হয়। কথার খেলার মারপ্যাঁচে অভ্যস্ত মহেশবাবুর ডায়েরিতে পাওয়া যায় অজস্র হেঁয়ালি, যার অর্থ বোঝা খুব কম লোকের পক্ষেই সম্ভব। সেই হেঁয়ালির প্রতি ছত্রে লুকিয়ে থাকে রহস্য উন্মোচনের সূত্র।

সত্যজিৎ রায়ের লেখা ফেলুদা সিরিজ়ের গল্প ‘ছিন্নমস্তার অভিশাপ’ প্রায় সবারই পড়া। এরকম ক্ষেত্রে পর্দায় অজানা কিছু দেখার আশা যেহেতু থাকে না, তাই পরিচালকের উপস্থাপনাই একমাত্র চমকের সৃষ্টি করতে পারে। সেই কাজটা আরও কঠিন হয়ে পড়ে যখন রহস্যের জট খোলাই প্রধান ক্লাইম্যাক্স হয়ে দাঁড়ায়। সেই দায়িত্ব নিঃসন্দেহে সুষ্ঠুভাবে পালন করেছেন সৃজিত।

আর আছে সুলতান। সেই সুলতান নামক বাঘটিকে যেভাবে দেখানো হয়েছে, তাতে মূল কাহিনীর দৃশ্যগুলো প্রায় হুবহু পর্দায় দেখবেন দর্শক। তবে শুধুমাত্র সুলতান নয়, কলাকুশলীদের বাদ দিয়ে শুধু লোকেশন ও সেটের দিকে নজর দিলেও সহায়ের বাংলো থেকে শুরু করে মহেশ চৌধুরীর বাড়ি, কিংবা ভেড়া নদীর ধারে পিকনিক স্পট যেটা আদতে ডুয়ার্সে শুট করা, সবই যেন একেবারে বইয়ের পাতা থেকে উঠে এসেছে। বহুদিন পর জটায়ুর সবুজ অ্যাম্বাসাডর গাড়িও যেন চোখকে আরাম দেয়।

আরও পড়ুন: ‘মুচ্ছড়’ দেবের জন্মদিনে গোলন্দাজের সেটে হাজির রুক্মিনী, সারপ্রাইজ সেলিব্রেশনে অভিভূত বার্থডে বয়

এবার আসা যাক অভিনয়ে।টোটা রায়চৌধুরিকে (Tota Roychowdhury) ফেলুদা হিসেবে নির্বাচন করা নিয়ে অনেকেই চোখ রাঙিয়েছিলেন। কিন্তু, শত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে টোটা তাঁর অভিনয়ের মাধ্যমে মন জয় করে নিয়েছেন। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং সব্যসাচী চক্রবর্তীর যোগ্য উত্তরসুরি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন টোটা। সত্যিজিতের আঁকা ফেলুদা স্কেচগুলিকে জীবন্ত করে তুলেছেন টোটা।

অনির্বাণ চক্রবর্তী (Anirban Chakraborty) একেন বাবুর চরিত্রে অভিনয় করে এমনিতেই বিখ্যাত। জটায়ু হিসেবে সন্তোষ দত্তের সঙ্গে তাঁর মিল প্রশ্নাতীত। তিনি অসাধারণ অভিনেতা। এই সিরিজে তাঁর অভিনয় অতুলনীয়। অনেকের ভয় থাকে জটায়ু চরিত্রকে ভাঁড় পর্যায়ে যেন পর্যবসিত না করা হয়। সেই পরীক্ষায় লেটার পেয়েছেন অনির্বাণ। ওনার কথা বলা, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ – সবেতেই জটায়ু সুলভ ব্যাপারটা সাবলীলভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন অনির্বাণ। সেই তুলনায় তোপশের চরিত্রে কল্পন দত্ত সেরকমভাবে নিজেকে তুলে ধরতে পারেননি।

অন্যান্যদের মধ্যে মহেশ চৌধুরীর ভূমিকায় ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়, অখিলবাবুর চরিত্রে অরুণ গুহ ঠাকুরতা, কারান্ডিকারের চরিত্রে ঋষি কৌষিক, টেক্কার চরিত্রে অরিন্দম গাঙ্গুলি এবং তুরির চরিত্রে সমদর্শী দত্ত মুগ্ধ করেছেন।

অভিনয়ের পাশাপাশি সিরিজের আবহ সঙ্গীত মনে ধরে যায়। নিপুণ দক্ষতার সাথে প্রতিটি দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক। চিত্রনাট্যে মুন্সিয়ানার ছাপ বিগত সব ফেলুদার ছবিকে ছাপিয়ে যায়। মূলকাহিনী অবিকৃত রেখেই সৃজিত আরও রোমাঞ্চকরভাবে গল্প বলেছেন। সংলাপে ভরা দৃশ্যও একঘেয়ে লাগেনি।

ছিমছাম পরিচালনা, চিত্রগ্রহণের যুগলবন্দী,এবং  ভালো অভিনয় ফেলুদার অভিযান পুরোপুরি জমিয়ে দিয়েছে, একথা বলাই যায়।

আরও পড়ুন: গওহর- ইসমাইলের রাজকীয় রিসেপশন, দেখে নিন চোখধাঁধানো ছবি…

 

 

 

Exit mobile version