পরনে সাদা পাঞ্জাবী। হাতে ধরা সিগারেট। চোখ রেখেছেন ক্যামেরায়। হুবহু যেন মাণিকবাবু! চুলের স্টাইলেও যেন একচুল হেরফের নেই। এক নজরে সত্যজিৎ-রূপী জিতু কমলকে (Jeetu Kamal) দেখে চেনা দায়। ‘অপরাজিত’ সিনেমার জন্যই জিতুর এমন লুক। যে কিনা বর্তমানে সাড়া ফেলে দিয়েছে ইন্ডাস্ট্রিতে। নেপথ্যে পরিচালক অনীক দত্ত (Anik Dutta)।
সত্যজিত রায়ের কালজয়ী ছবি ‘পথের পাঁচালী’ তৈরির নানান অজানা কাহিনি উঠে আসবে এই ছবিতে। বলাই বাহুল্য, সত্যজিতের ভূমিকায় দেখা যাবে অভিনেতা জিতু কমলকে এবং বিজয়া রায়ের ছায়ায় তৈরি বিমলার ভূমিকায় থাকবেন সায়নী ঘোষ। যদিও এই ছবিতে জিতু কামাল অভিনীত চরিত্রের নাম অপরাজিত রায়। সত্যজিতের তৈরি ‘অপু ট্রিলজি’-র দ্বিতীয় ছবি ‘অপরাজিত’-র সঙ্গে ফিরদৌসুল হাসান-এর প্রযোজনায় এই ছবির নাম সমনামী হলেও বিষয় যে সম্পূর্ণ আলাদা সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আর এই ছবিতে অপরাজিত জীবনের সেই ‘প্রথম ছবি’-র নাম হতে চলেছে ‘পথের পদাবলী’।
সাদা কালো ওই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই হু হু করে ভাইরাল হওয়া শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। প্রথম ঝলকেই মনে হতে বাধ্য এ যেন খোদ যুবক সত্যজিত। সেই অতিপরিচিত ব্যাকব্রাশ কায়দায় আঁচড়ানো চুল, ভাঙা লম্বাটে চোয়াল, চিন্তামিশ্রিত দৃষ্টির পাশাপাশি নজর এড়ায়নি থুতনির একপাশে উঁকি মারা আঁচিলও। বলাই বাহুল্য সিনেমাপ্রেমী মানুষ থেকে শুরু করে চুলচেরা বিশ্লেষণী সত্যজিৎ-ভক্তরা পর্যন্ত জিতুর এই লুক দেখে বেশ খুশি। অবাকও যে হয়েছেন তা বলাই বাহুল্য। এ প্রসঙ্গে স্বয়ং জিতু কামাল জানিয়েছেন কাছের বন্ধুকে নিজের এই ছবি প্রথম দেখাতে কিছুতেই সে বিশ্বাস করেননি ছবির মানুষটি আমি। তবে এই লুকের সমস্ত কৃতিত্ব পরিচালক অনীক দত্ত এবং মেক আপ আর্টিস্ট সোমনাথ কুণ্ডুকে দিয়েছেন জিতু। তবে পর্দায় এই চরিত্র ফুটিয়ে তোলার জন্য নিজেকে যে সম্পূর্ণ ঢেলে দিয়েছেন তিনি সেকথা স্বীকার করলেন জিতু নিজেও। নিয়মিত সত্যজিতের ইন্টারভিউ দেখছেন, তাঁর কথা বলার ধরন খেয়াল করছেন, পড়াশোনা করেছেন সত্যজিৎ সম্পর্কে। তা সত্বেও অভিনেতার কথায়, ‘আমি এখনও মাঝসমুদ্রে!’
সমালোচক থেকে আম-জনতা অনেকেই অবাক হয়ে গিয়েছেন ‘অপরাজিত’ ছবিতে জিতুর লুক দেখে। তাঁদের বক্তব্য, চেনাই যাচ্ছে না জিতুকে। লুকটি দেখেছেন সত্যজিৎ রায়ের পুত্র সন্দীপ রায়। TV9 বাংলাকে তিনি বলেছেন, “এমনতিতে তো ঠিকই আছে। গোটা বিষয়টাই অনীক খুব গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। ঠিকই আছে। ভালই লাগছে দেখতে।” জিতুর এই লুককে বাবা সত্যজিতের সঙ্গে কি মেলাতে পারছেন সন্দীপ? জিজ্ঞেস করায় সন্দীপ প্রথমে হেসে ওঠেন। তারপর বলেন, “সেটা তো আমাদের ক্ষেত্রে বলা খুবই মুশকিল। কিন্তু আমি বলব যথেষ্ট ভাল হয়েছে।”
সিনেমার ‘নায়কবদলের’ খবর দিন কয়েক আগেই প্রকাশ্যে এসেছে। আগে অবশ্য সেই চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল আবীর চট্টোপাধ্যায়ের (Abir Chatterjee)। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত বদলায়। ‘ব্যোমকেশ’ অভিনেতার ডেট পেতে সমস্যা হচ্ছিল। তবে ইন্ডাস্ট্রির অন্দরে অবশ্য কানাঘুষো অন্য কথাই শোনা গিয়েছে। শেষমেশ ছবিটা ছাড়তে বাধ্য হন আবীর। আর সেই মাণিকবাবুর জুতোতে পা গলানোর প্রস্তাব যায় টেলিপর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা জিতু কমলের কাছে। জিতুর জন্য যে এটা নিঃসন্দেহে বড় ব্রেক, তা বোধহয় আর আলাদা করে বলার প্রয়োজন পড়ে না।
গত মাসেই শুট শুরু হয়েছে। লোকেশন বীরভূম, বোলপুর। পরের ভাগে নন্দন, শিশির মঞ্চ থেকে শুরু করে শহরের বিভিন্ন অংশে শুট হবে। আসলে পুরো শহরটাকেই তো নিজের ফ্রেমে আলাদা মাত্রা দিয়েছিলেন মাণিকবাবু। অনীকের সুবাদে এবার সেই ফ্রেমও জীবন্ত হয়ে উঠবে আরও একবার। তবে সত্যজিৎ রায়ের ভূমিকায় জিতুকে বাজি রেখে যে অনীক ভুল করেননি, তেমনটা কিন্তু প্রথম ঝলকেই বলা যায়।