ওয়েব ডেস্ক: ওঁদের লকডাউন হয় না। বাড়ি অনুযায়ী নাম বদলায় তাঁদের। কখনও তিনি গোপালের মা, কখনও আনোয়ারার বোন, আবার কখনও বা ‘কাজল মাসি’। চারপাশে ছড়িয়ে থাকা এই সব মানুষের কান্নাভেজা গল্প নিয়েই প্রকাশ্যে এল ‘উইন্ডোজ’-এর ১২ মিনিটের লকডাউন শর্ট ‘কাজল মাসি’।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শোনা যাচ্ছে হাজার-হাজার পরিযায়ী শ্রমিকদের হাহাকার। মাইলের পর মাইল হেঁটে চলেছে ওরা। কোলের সন্তানকে কাঁধে চাপিয়ে, সদ্যোজাতকে তোয়ালে মুড়ে কেউ বা আবার বৃদ্ধ মা-বাবার অন্ধের যষ্ঠি হয়ে বাড়ির পথে এগোচ্ছে। ক্লান্তিতে শরীর অসাড় হলেও ওরা হেঁটেই চলেছে। মৃত্যুও কম ঘটেনি। এরকমই এক জ্বলন্ত সমস্যা নিয়ে নন্দিতা রায়ের ছবি ‘কাজল মাসি’। যে ছবি বলে হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিকদের মায়েদের মনের কথা।
মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন খেয়ালি দস্তিদার এবং ‘প্রজাপতি বিস্কুট’ খ্যাত আদিত্য সেনগুপ্ত। এই প্রথম মা খেয়ালি দস্তিদারের সঙ্গে স্ক্রিনস্পেস শেয়ার করলেন আদিত্য। প্রসঙ্গত, উইন্ডোজের হাত ধরেই অভিনয় জগতে পা রেখেছিলেন আদিত্য। এছাড়াও রয়েছেন গৌরী মুখোপাধ্যায় এবং দেবনাথ চট্টোপাধ্যায়।
কাজল মাসির ছেলে মুম্বইয়ে কাজ করেন। মা বারণ করেছিলেন অত দূরে কাজ করতে যেতে। কিন্তু মায়ানগরীর নেশার মোহ তিনি কাটাতে পারেননি। দেশ জুড়ে করোনা সঙ্কট যখন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে এমন সময়েই কাজলের মোবাইলের একটি ফোন আসে। ছেলের ফোন। নিমেষে কাজলের মুখের চেহারা যায় পাল্টে। ধারাভিতে থাকা কাজলমাসির সন্তানের কাছে পয়সা আজ বাড়ন্ত। জুটছে না খাবারও। ফোন কেটে যায়।
আরও পড়ুন: সহমর্মী! করোনা মোকাবিলায় পুলিস কর্মীদের বিশেষ ধরনের রিস্ট ব্যান্ড দিলেন অক্ষয়
দিশেহারা মা বুঝতে পারেন না কী করা উচিত তাঁর। নিঃশব্দেই চোখ দিয়ে গড়াতে থাকে জলের ধারা। ‘ছেলেটা আদৌ বাঁচবে তো?’ উত্তর জানা নেই। উৎকণ্ঠায় টিভির পর্দায় চোখ যেতেই মাথা ঝিমঝিম করতে থাকে তাঁর। বড় বড় করে ব্রেকিং যাচ্ছে, বান্দ্রা স্টেশনে পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জ। “কী হবে যদি পুলিশ ছেলেটাকে মারে, খাবার খায়নি না জানি কত দিন!” মায়ের গলা দিয়ে ভাত নামতে চায় না, গলার কাছে কষ্ট গিলতে গিলতে সে কাপড় কাচে, ‘ছোড়দা’র জন্য মাছ ভাজে, কফি করে দেয়।
শেষ পর্যন্ত কী হয়, তা বলে দিলে সাসপেন্স মাঠে মারা যাবে। তবে অসহায় কাজলের কান্নায় আপনিও যে নরম হবেন সে কথা হলফ করে বলা যায়। শেষে আবার শিবপ্রসাদের কণ্ঠে চমকও রয়েছে।
দেখুন…
পরিচালক নন্দিতা রায় তাঁর গল্পে ‘কাজল মাসি’কে প্রতীকী চরিত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন। খেয়ালির চরিত্রর মধ্য দিয়েই তুলে ধরেছেন সেসব মায়েদের কথা যাঁরা সন্তানের ভিন রাজ্য থেকে আসার অপেক্ষায় আকুল হয়ে অপেক্ষা করছেন। সামাজিক দূরত্ব মেনে এই ছবির শুটিং হয়েছে বাড়িতেই। প্রায় ১০ মিনিটের এই শর্টফিল্ম সম্পাদনা করেছেন মলয় লাহা। মিউজিকের দায়িত্বে প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: হেঁটে ক্লান্ত, ট্রলি ব্যাগের উপরেই ঘুম দুধের শিশুর, টানছেন পরিযায়ী মা!